নারায়ণগঞ্জে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে এনসিপি

- আপডেট সময় : ০৩:১৮:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
- / ২৬ জন পড়েছেন
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন প্রধান দুই জোটের হিসাব-নিকাশ ও মনোনয়ন যুদ্ধ তুঙ্গে, তখন তৃণমূল পর্যায়ে এক ভিন্নমাত্রার সংগঠনী উদ্যোগে নজর কাড়ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে দলটির বিস্তার ও সক্রিয়তা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
ব্যান্ড-পার্টি কিংবা ব্যানার-ফেস্টুন নির্ভরতা নয়— এনসিপি এখন মাঠে নামছে ধারাবাহিক সভা, জনসংলাপ এবং সদস্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে। জেলা সদরসহ বন্দর, ফতুল্লা, সোনারগাঁ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও রূপগঞ্জ উপজেলায় ইতোমধ্যে তারা শক্ত সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা পর্যায়ে মতবিনিময় সভা ও গণসংলাপের মাধ্যমে ভোটের রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে শুরু করেছে।
দলের জেলা কমিটির নেতারা বলছেন, দল গড়ার মূল ভিত্তি হচ্ছে কর্মী ও জনসম্পৃক্ততা। কোনো পরিচিত মুখ বা বাইরের আরোপিত নেতৃত্ব নয়— এনসিপি চায় স্থানীয় সমস্যার সঙ্গে যুক্ত, জনমানুষের কাছের মানুষদের নিয়েই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে। জেলা সমন্বয়ক ও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাঁর নাম উঠে আসছে, সেই অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমিন মূলত দীর্ঘদিন ধরে নাগরিক অধিকার এবং ছাত্র রাজনীতির সাথেও যুক্ত ছিলেন।
দলটির কার্যক্রমে যুক্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সদস্যসচিব মোঃ জাবেদ আলম বলেন, “আমরা শ্লোগান নয়, কাঠামোগত রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। রাজপথের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। এখন প্রয়োজন সংগঠনের ভিত শক্ত করে নির্ভরযোগ্য বিকল্প হয়ে ওঠা।”
এনসিপি’র সদস্য পদ পাওয়ার জন্য রয়েছে একধরনের আদর্শিক যাচাই-বাছাই। দলের নেতারা জানিয়েছেন, যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, যারা কোনো সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা তাদের সহযোগী সংগঠনের অংশ ছিলেন না, তারাই সদস্য হওয়ার যোগ্য। এর মাধ্যমে দলটি আদর্শভিত্তিক কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে চায়।
তরুণদের প্রতি এনসিপির বিশেষ মনোযোগ। “ভোট নয়, বিশ্বাস চাই” — এই স্লোগানকে সামনে রেখে তারা এমন এক প্রজন্মকে টার্গেট করছে যারা রাজনীতিতে নতুন ধারা খুঁজছে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সরাসরি ক্যাম্পেইনেও তরুণদের যুক্ত করার চেষ্টা চলছে।
জনগণের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের সময় যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে তা হলো — স্থানীয় দুর্নীতি, শহরের অসহনীয় যানজট, জলাবদ্ধতা, জনপ্রতিনিধিদের অকার্যকর ভূমিকা, শিক্ষা ও চিকিৎসায় বৈষম্য, এবং মাদক-সন্ত্রাসের প্রভাব। এনসিপি এসব সমস্যার ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনী রূপরেখা তৈরি করছে। দলটির নেতারা বলছেন, “আমরা প্রতিশ্রুতি নয়, সমাধানমুখী পরিকল্পনা দিতে চাই।”
জেলার পাঁচটি উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি উপজেলাগুলোতেও দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে এনসিপি এখন কার্যকর সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আন্দোলন ও পেশাগত জীবনে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি সম্পন্ন ব্যক্তিরা।
প্রার্থী তালিকা এখনো চূড়ান্ত না হলেও প্রত্যেক আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমিনকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জানান, এনসিপি একটি গণমানুষের দল। এই দলের জন্মই মূলত দেশের গণমানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। তাই আমরা আশা করতে পারি সাধারণ জনগন আমাদের ডাকে সাড়া দিবে এবং আগামী নির্বাচনে আমাদের ভোটে জয়ী করতে সচেষ্ট থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটি ‘তৃতীয় শক্তি’ বা বিকল্প ধারার রাজনীতির প্রয়োজন দীর্ঘদিনের। এনসিপি যদি তাদের ঘোষিত আদর্শ ও কার্যক্রমে দৃঢ় থাকে, তবে তারা আগামী নির্বাচনেই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে দেশের রাজনৈতিক পরিম-লে একটি নতুন জায়গা করে নিতে পারে।
তবে বাস্তবতা হলো, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনী কাঠামোয় বিকল্প শক্তি কতটা টিকে থাকতে পারবে— সেটাই এখন মূল প্রশ্ন। এনসিপি’র তৃণমূল ভিত্তিক প্রস্তুতি অনেককে আশাবাদী করলেও, তাদের স্থায়িত্ব ও রাজনৈতিক ধৈর্য পরীক্ষা হবে আগামী দিনে।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এনসিপি এখন কেবল একটি নতুন নাম নয়— এটি বিকল্প নেতৃত্বের এক প্রত্যয়ী ঘোষণা। মসৃণ পথ নয়, বরং কঠিন রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্য দিয়েই এই দলটিকে প্রমাণ করতে হবে তাদের গ্রহণযোগ্যতা, সংগঠনের দৃঢ়তা এবং নেতৃত্বের স্বচ্ছতা।
এখন দেখার বিষয়, এই তৃণমূল রাজনীতির নবজাগরণ কতদূর এগোতে পারে এবং সত্যিই কি এনসিপি হয়ে উঠতে পারবে নতুন প্রজন্মের ‘ভোটের চেয়ে বিশ্বাসযোগ্য’ রাজনৈতিক ঠিকানা।