বন্দর খেয়াঘাটে ‘টোল সিন্ডিকেট’

- আপডেট সময় : ০৫:২০:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
- / ১৯ জন পড়েছেন
নারায়ণগঞ্জ বন্দর খেয়াঘাটের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পর থেকেই আলোচনায় উঠে এসেছেন বিএনপি নেতা ও নাসিক ১৪নং ওয়ার্ডের সভাপতি দিদার খন্দকার। ঘাট ইজারা নেওয়ার পর তিনি হয়ে উঠেছেন আরও বেপরোয়া ও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। অভিযোগ রয়েছে, দিদার খন্দকারের নেতৃত্বে ঘাটে চলছে চাঁদাবাজি, সাধারণ মাঝি, মাল্লা এবং যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারসহ একাধিক অনিয়ম।
সূত্রমতে, বন্দর ঘাটটি ইজারা নেওয়ার পর থেকেই দিদার খন্দকার ঘাটের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নেন। নামমাত্র কয়েকজন কর্মীকে দিয়ে ঘাট পরিচালনার নামে তিনি গড়ে তুলেছেন একপ্রকার ‘টোল সিন্ডিকেট’। মাঝিদের অভিযোগ, আগে যেখানে তারা প্রতিদিন নির্ধারিত হারে ভাড়া দিয়ে পারাপার করতেন, এখন সেখানে ‘দিদারের লোকজন’ অতিরিক্ত অর্থ দাবি করছেন। কেউ প্রতিবাদ করলেই হুমকি, গালাগাল বা ঘাট থেকে বের করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
একাধিক মাঝি অভিযোগ করে বলেন,আমরা সারাদিন খাটাখাটনি করে যা আয় করি, তার বড় একটা অংশ চলে যায় দিদারের লোকদের পকেটে। কেউ কথা বললে, বলে উপরে জাকির ভাই আছেন, কিছুই করতে পারবি না।
এদিকে দিদার খন্দকারের এই দাপটের পেছনে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের ছায়া। দলীয় সূত্রে জানা যায়, জাকির খানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দিদার খন্দকার দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয়। বর্তমানে তিনি শুধু বিএনপির ১৪ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি নন, বরং ব্যবসায়ী, ঘাট ইজারাদার এবং রাজনীতিক সবমিলিয়ে একাধারে বহু ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন।
স্থানীয়রা জানান, ঘাটে শ্রমিকদের উপর জুলুম, বন্দোবস্ত থেকে শুরু করে দৈনিক আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব দেওয়া হয় না। দিদার খন্দকারের আশপাশে সবসময় কিছু চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও দাগি লোক ঘোরাফেরা করে। ফলে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, ইজারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরাও মুখ খোলার সাহস পান না।
বিশ্লেষকদের মতে, এভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে খেয়াঘাটের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে চাঁদাবাজি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার চলতে থাকলে তা শুধু পরিবহন খাতেই নয়, বরং পুরো বন্দর ঘাটের নিরাপত্তা ও সুশাসনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
ঘাট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিংবা নাসিকের কোনো কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে না চাইলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি আমরা জানি, কিন্তু দিদার খন্দকারের পেছনে যেহেতু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যাকিং রয়েছে, তাই সরাসরি পদক্ষেপ নিতে ভয় পাচ্ছি।
অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে বন্দর খেয়াঘাটে নজরদারি বাড়ানো এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দিদার খন্দকারের কর্মকা-ের বিচার করা।
অন্যদিকে রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছেন,রাজনীতি দিয়ে জনসেবা করার কথা থাকলেও দিদার খন্দকারের মতো নেতাদের কার্যকলাপ স্থানীয় রাজনীতিকে কলুষিত করছে। ঘাট ইজারার নামে চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তিনি শুধু মাঝি, মাল্লা নয়, পুরো বন্দরবাসীর ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠেছেন। প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই বলয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
দিদার খন্দরকার অতিরক্ত টোল আদায় ও যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার সম্পর্কে বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে সাবেক এমপি সেলিম ওসমান নাম মাত্র একটি ট্রেন্ডার কিনে ইজারা নিয়েছিলেন তখন তিনি পারাপার ফ্রি করে দিয়েছিলেন। আর এখন আমরা অনেক টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি তাই মাত্র ২ টাকা করে নিচ্ছি। আর জাকির খানের নাম ব্যবহার করে আমি কিছুই করছিনা। আমি বৈধভাবে ইজারা নিয়ে এইখানে ঘাট পরিচালনা করছি।