বাবার কোলে নিথর রিয়া, সেই মর্মান্তিক মৃত্যুর ১১ মাস পর শুরু বিচার পাওয়ার লড়াই

- আপডেট সময় : ১০:৩০:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
- / ২৯ জন পড়েছেন
মেয়েকে ছাদ থেকে নিরাপদে নামিয়ে আনতে গিয়েছিলেন বাবা, কিন্তু কোলে তুলে নিতেই ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিল সব। বাবার কোলেই লুটিয়ে পড়া ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপের সেই মর্মান্তিক মৃত্যুর ১১ মাস পর অবশেষে শুরু হলো বিচার পাওয়ার এক অনিশ্চিত লড়াই। যে বাবাকে মেয়ের হাসিমাখা মুখ দেখে দিন শুরু করতে হতো, তাকেই মেয়ের রক্তাক্ত নিথর দেহ কাঁধে বয়ে নিতে হয়েছিল। সেই দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়ানো পরিবারটির নীরব আর্তি আর দেশবাসীর ক্ষোভের পর পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়ের করা এই মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে। দীর্ঘ ১১ মাস ধরে পরিবারটি যখন প্রভাবশালী মহলের ভয়ে বা বিচারহীনতার আশঙ্কায় নীরব ছিল, তখন রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা থেকে এই পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ।
গত বছরের ১৯ জুলাইয়ের সেই অভিশপ্ত বিকেলটির কথা ভোলেনি নারায়ণগঞ্জবাসী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল সময়ে শহরের রাজপথে যখন চলছিল সহিংসতা আর গোলাগুলি, তখন নয়ামাটি এলাকার নিজের বাড়ির ছাদে খেলছিল ছোট্ট রিয়া। গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত বাবা দীপক কুমার গোপ মেয়েকে বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন ছাদে। কিন্তু তার আগেই ঘটে যায় নৃশংসতম ঘটনাটি। বাবার চোখের সামনেই একটি গুলি এসে রিয়ার মাথায় লাগে। মেয়ের উষ্ণ রক্তে ভিজে যায় বাবার কোল।
এরপর পাঁচ দিন হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ২৪ জুলাই চিরতরে থেমে যায় রিয়ার জীবনের স্পন্দন। দীপক গোপ ও বিউটি ঘোষ দম্পতির একমাত্র প্রদীপ নিভে যায় চিরদিনের জন্য।
এই হত্যাকা-ের পর প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠলেও ভয়ে বা হতাশায় মামলা করার সাহস পায়নি পরিবারটি। রিয়ার মা বিউটি ঘোষের কণ্ঠে ঝরে পড়েছিল অসহায়ত্ব, “মামলা করে কী হবে? কাদের নামে করব? আমরা বিচার সৃষ্টিকর্তার ওপর ছেড়ে দিয়েছি।”
একটি বাবার কাঁধে মেয়ের লাশের ভারের চেয়ে ভারী কিছু নেই। সেই ভার বয়ে বেড়ানো দীপক গোপের জন্য এই মামলাটি কি সামান্যতম সান্ত¡না হবে, নাকি বিচারহীনতার দীর্ঘ এক যাত্রার শুরু—সেই উত্তর দেবে সময়। তবে এই মামলার মধ্য দিয়ে রিয়ার নিথর হয়ে যাওয়ার সেই মর্মান্তিক দৃশ্যের বিচার পাওয়ার এক ক্ষীণ আশা তৈরি হলো।