ঢাকা ০৩:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জামায়াতের মবের শিকার সাবেক ওসি মঞ্জুর

সোজাসাপটা রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০১:১৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১৬৫ জন পড়েছেন

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জামায়াতে ইসলাম সমর্থিত আইনজীবী ও সাবেক ইসলামী ছাত্রশিবির নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন জেলা পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদের। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

ঘটনার শিকার সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদের নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লা ও সোনারগাঁ থানায় বিভিন্ন সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে তাকে দেখে কয়েকজন জামায়াতপন্থী আইনজীবী ও ব্যক্তি ঘিরে ধরেন এবং অতীতের কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে তাকে আটকের চেষ্টা করেন। এ সময় পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং মব জাস্টিসের আশঙ্কা তৈরি হয়।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জে কর্মরত থাকার সময় মঞ্জুর কাদের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। শামীম ওসমানের মালিকানাধীন শীতল ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের সঙ্গেও তার ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এসব বিষয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) তারেক আল মেহেদী বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনার বিষয়ে পুলিশ অবগত নয় এবং এ নিয়ে কোনো পক্ষই পুলিশকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

এ ঘটনায় জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিল নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সহকারী সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সময় তাকে ও তাঁর মামাতো ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। নগরীর বেপারীপাড়া এলাকার বাসার সামনে থেকে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

সাইফুল ইসলামের দাবি, তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক মঞ্জুর কাদেরের নেতৃত্বে থানায় তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তিনি বলেন, তাকে ও তার মামাতো ভাইকে ওসি মঞ্জুর কাদের নিজের কক্ষে নিয়ে এক ঘণ্টা টানা মারধর করেন। এরপর তিন দিন গুম করে রাখা হয় এবং পরিবারের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে হঠাৎ মঞ্জুর কাদেরকে দেখতে পান তারা। তখন তাকে আটক করে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে মঞ্জুর কাদের দৌড়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জেএম শাখায় গিয়ে আত্মগোপন করেন। সেখানে গিয়েও তাকে পাওয়া গেলেও বিএনপিপন্থী কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী তাকে ছাড়িয়ে নেন এবং পরে নিরাপদে চলে যেতে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ করেন সাইফুল ইসলাম।

মঞ্জুর কাদেরের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলে জামায়াতপন্থী আরেক আইনজীবী ও সাবেক শিবির নেতা অ্যাডভোকেট তাওফিকুল ইসলাম বলেন, তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও মঞ্জুর কাদের একজন নিষ্ঠুর কর্মকর্তা ছিলেন। তার ভাষায়, তিনি একজন ঠান্ডা মাথার খুনি এবং তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।

সাইফুল ইসলাম জানান, গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পরপরই মঞ্জুর কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা থাকলেও তিনি বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করায় তখন মামলা করা হয়নি। তবে সোমবার তিনি এ বিষয়ে মামলা করবেন বলেও জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আটকে মব জাস্টিসের পর্যায়ে নিতে চেয়েছিলেন। আদালত প্রাঙ্গণ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যেন কোনো আইন বহির্ভূত ঘটনা না ঘটে, সে জন্য তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। তার দাবি, পরে ওই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা নিরাপদে সেখান থেকে চলে যান।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও আদালত প্রাঙ্গণের সামনে এ ধরনের ঘটনা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কেউ যেন নিজের হাতে আইন তুলে নিতে না পারে, সে বিষয়েই তারা সতর্ক ভূমিকা পালন করেছেন।

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

জামায়াতের মবের শিকার সাবেক ওসি মঞ্জুর

আপডেট সময় : ০১:১৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জামায়াতে ইসলাম সমর্থিত আইনজীবী ও সাবেক ইসলামী ছাত্রশিবির নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন জেলা পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদের। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

ঘটনার শিকার সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদের নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লা ও সোনারগাঁ থানায় বিভিন্ন সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে তাকে দেখে কয়েকজন জামায়াতপন্থী আইনজীবী ও ব্যক্তি ঘিরে ধরেন এবং অতীতের কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে তাকে আটকের চেষ্টা করেন। এ সময় পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং মব জাস্টিসের আশঙ্কা তৈরি হয়।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জে কর্মরত থাকার সময় মঞ্জুর কাদের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। শামীম ওসমানের মালিকানাধীন শীতল ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের সঙ্গেও তার ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এসব বিষয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) তারেক আল মেহেদী বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনার বিষয়ে পুলিশ অবগত নয় এবং এ নিয়ে কোনো পক্ষই পুলিশকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

এ ঘটনায় জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিল নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সহকারী সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সময় তাকে ও তাঁর মামাতো ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। নগরীর বেপারীপাড়া এলাকার বাসার সামনে থেকে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

সাইফুল ইসলামের দাবি, তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক মঞ্জুর কাদেরের নেতৃত্বে থানায় তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তিনি বলেন, তাকে ও তার মামাতো ভাইকে ওসি মঞ্জুর কাদের নিজের কক্ষে নিয়ে এক ঘণ্টা টানা মারধর করেন। এরপর তিন দিন গুম করে রাখা হয় এবং পরিবারের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে হঠাৎ মঞ্জুর কাদেরকে দেখতে পান তারা। তখন তাকে আটক করে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে মঞ্জুর কাদের দৌড়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জেএম শাখায় গিয়ে আত্মগোপন করেন। সেখানে গিয়েও তাকে পাওয়া গেলেও বিএনপিপন্থী কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী তাকে ছাড়িয়ে নেন এবং পরে নিরাপদে চলে যেতে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ করেন সাইফুল ইসলাম।

মঞ্জুর কাদেরের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলে জামায়াতপন্থী আরেক আইনজীবী ও সাবেক শিবির নেতা অ্যাডভোকেট তাওফিকুল ইসলাম বলেন, তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও মঞ্জুর কাদের একজন নিষ্ঠুর কর্মকর্তা ছিলেন। তার ভাষায়, তিনি একজন ঠান্ডা মাথার খুনি এবং তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।

সাইফুল ইসলাম জানান, গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পরপরই মঞ্জুর কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা থাকলেও তিনি বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করায় তখন মামলা করা হয়নি। তবে সোমবার তিনি এ বিষয়ে মামলা করবেন বলেও জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আটকে মব জাস্টিসের পর্যায়ে নিতে চেয়েছিলেন। আদালত প্রাঙ্গণ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যেন কোনো আইন বহির্ভূত ঘটনা না ঘটে, সে জন্য তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। তার দাবি, পরে ওই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা নিরাপদে সেখান থেকে চলে যান।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও আদালত প্রাঙ্গণের সামনে এ ধরনের ঘটনা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কেউ যেন নিজের হাতে আইন তুলে নিতে না পারে, সে বিষয়েই তারা সতর্ক ভূমিকা পালন করেছেন।