যাত্রীসহ বিমান ভেঙ্গে পড়লো আহমেদাবাদের আকাশে

- আপডেট সময় : ০৭:৪৪:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
- / ৮৯ জন পড়েছেন

This frame grab from a video by @ashlovetea on June 12, 2025 made available on the Eurovision Social Newswire (ESN) platform via AFPTV shows a plume of smoke rising after Air India flight 171 crashed near the airport in Ahmedabad. The London-bound passenger plane crashed on June 12 in India's western city of Ahmedabad with 242 on board, aviation officials said in what the airline called a "tragic accident". (Photo by @ashlovetea / various sources / AFP) / NO USE AFTER JUNE 24, 2025 17:00:00 GMT - -----EDITO
আহমেদাবাদে যখন এয়ার ইন্ডিয়ার একটি উড়োজাহাজের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গোটা ভারত শোকাহত, তখন শহরের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার স্মৃতি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ১৯৮৮ সালের ১৯ অক্টোবর দুর্ঘটনার শিকার হয় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ।
সেই দুর্ঘটনায় ১৩৫ আরোহীর মধ্যে ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যা ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচলের ইতিহাসে এক মর্মান্তিক অধ্যায় হিসেবে আজও স্মরণীয়।
ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-২০০ মডেলের উড়োজাহাজটি বোম্বে (বর্তমানে মুম্বাই) থেকে আহমেদাবাদ যাচ্ছিল। ভিটি-ইএএইচ নামে নিবন্ধিত ওই উড়োজাহাজ বোম্বে-সাহার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে সকাল ৬টা ৫ মিনিটে। উড্ডয়নের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় থেকে প্রায় ২০ মিনিট দেরি হয়েছিল। ফ্লাইটটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন ও এম দালায়া। ফার্স্ট অফিসার হিসেবে ছিলেন দীপক নাগপাল।
আহমেদাবাদে পৌঁছানোর সময় ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা নেমে আসে মাত্র ১ দশমিক ২ মাইলে। এমন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পাইলটরা রানওয়ে ২৩-এ লোকালাইজার-ডিএমই পদ্ধতিতে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। সকাল ৬টা ৪১ মিনিটে তারা আহমেদাবাদ ভিওআরের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় কন্ট্রোল টাওয়ারে অবস্থান জানান এবং আগেই পাওয়া অবতরণের নির্দেশনার কথা নিশ্চিত করেন। সেটিই ছিল ক্রুদের শেষ রেডিও বার্তা। এর পরেই নেমে আসে স্তব্ধতা।
সকাল ৬টা ৫৩ মিনিটে ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়ে উড়োজাহাজটি। ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ার মধ্যে আহমেদাবাদের চিলোদা কোটরপুর এলাকায় রানওয়ে থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার আগে গাছ ও একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খায়। সঙ্গে সঙ্গে সেটি একটি ধানক্ষেতে আছড়ে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। মুহূর্তেই বিমানটি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ঘটনায় উড়োজাহাজে থাকা ১৩৫ জনের মধ্যে ১৩৩ জনই প্রাণ হারান। মাত্র দুইজন বেঁচে যান। এর মধ্যে একজন ছিলেন পোশাক ব্যবসায়ী অশোক আগরওয়াল এবং গুজরাট বিদ্যাপীঠের উপাচার্য বিনোদ ত্রিপাঠী। তবে তারা দুজনই গুরুতর আহত হন।
পরে উদ্ধার হওয়া ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে জানা যায়, খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও পাইলটরা রানওয়ে চাক্ষুষভাবে শনাক্ত করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এতে তারা উড়োজাহাজের উচ্চতা ঠিকভাবে নজরে রাখতে ব্যর্থ হন। তারা অবতরণের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে অনুমতিও নেননি এবং উচ্চতা জানিয়ে যে ঘোষণাগুলো দেওয়া বাধ্যতামূলক, সেগুলোর কোনোটিই দেননি। এসব তথ্য স্পষ্ট করে দেয়, শেষ মুহূর্তে পাইলটরা দিক ও অবস্থান সম্পর্কে ধারণা হারিয়ে ফেলেছিলেন।
সরকারি তদন্তে এই দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় পাইলটদের ভুল সিদ্ধান্তকে, বিশেষ করে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে ভুল পন্থা অবলম্বনকে। ক্যাপ্টেন ও কো-পাইলট উভয়েই নির্ধারিত অবতরণপূর্ব প্রক্রিয়া (স্ট্যান্ডার্ড অ্যাপ্রোচ প্রসিডিউর) অনুসরণ না করে নিয়ম লঙ্ঘন করেছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল) থেকেও যথাযথ ও সময়মতো তথ্য সরবরাহ করা হয়নি। বিশেষ করে, দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি এবং রানওয়ের ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ (আরভিআর) সংক্রান্ত আপডেটও পাইলটদের জানানো হয়নি, যা দুর্ঘটনার সহায়ক কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
পরে জাস্টিস মাথুর কমিশনের তদন্তে আরও গভীর বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনার পেছনে শুধুমাত্র পাইলট নয়, বরং ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স এবং এয়ারপোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এএআই) যৌথ গাফিলতি ছিল। দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী ও নিহতদের পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হলে ২০০৩ সালে একটি দেওয়ানি আদালত সুদসমেত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায় দেন।
পরে গুজরাট হাইকোর্ট সেই রায়ে হস্তক্ষেপ করে সুদের হার বাড়িয়ে দেন এবং পুরো ক্ষতিপূরণের ৯০ শতাংশের জন্য ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সকে দায়ী করেন। বাকি ১০ শতাংশের দায়ভার পড়ে এয়ারপোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার ওপর।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া দুজনের একজন আশোক আগরওয়াল তার স্ত্রী ও নবজাতক কন্যা সন্তানকে হারান। বছরের পর বছর ট্রমা আর স্মৃতিবিভ্রমের সঙ্গে লড়াই করার পর তিনি একাকী জীবনযাপন করতেন। ২০২০ সালে আহমেদাবাদস্থ ফ্ল্যাটে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যান। পুলিশ তার মৃত্যুকে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বলে মনে করে।
১৯৮৮ সালের সেই দুর্ঘটনা ভারতের উড়োজাহাজ চলাচল ব্যবস্থার ওপর দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে যায়। সেই ঘটনার পর নিরাপত্তা বিধি মেনে চলা এবং প্রক্রাগত সংস্কারের দাবি আরও জোরালো হয়। ৩৭ বছর পর আজ (২০২৫ সালের ১২ জুন) আহমেদাবাদের কাছে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়লে আবারও সেই পুরনো ট্র্যাজেডির কথা সামনে আসে। এই দুর্ঘটনায় ২৪২ আরোহীর সবাই নিহত হন।