ঢাকা ১২:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রশাসন নির্বিকার

আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি সানরাইজের

সোজাসাপটা রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৩:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১৭১ জন পড়েছেন

ফতুল্লার জামতলায় মালিকানা জমি দখল, আদালতের স্থিতিবস্থা উপেক্ষা, এবং অনুমোদনবিহীন বহুতল ভবন নির্মাণ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। আদালতের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সানরাইজ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেড নির্মাণকাজ থামায়নি, বরং আগের তুলনায় আরও দ্রুতগতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের এই দুঃসাহসকে আরও উসকে দিচ্ছে।

জমির প্রকৃত মালিক আবু আকরাম কাওছার ফতুল্লা মডেল থানার ওসিসহ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোনো ফল পাননি। তিনি জানান, তার মালিকানাধীন মোট প্রায় ১.৫০ শতাংশ জমিতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে সানরাইজ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেডের মালিক আমান হুদা এবং সংশ্লিষ্ট মালিক আব্দুর রহমান, আঃ রহিম, ইউসুফ আমিন ও আনিসুর হাসান নির্মাণকাজ শুরু করেন। অনুরোধ করেও তারা দখলকৃত অংশ ফেরত দেয়নি।

পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় আবু আকরাম দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ৯২/২০২৫ দায়ের করেন। মামলার পর আদালত ১৬ অক্টোবর স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন এবং কোন ধরনের নির্মাণকাজ না করার নির্দেশ জারি করেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশ যুক্ত পক্ষদের হাতে পৌঁছানোর পরও বিবাদীরা নির্মাণকাজ বন্ধ না করে আরও উপরে তলার কাজ এগিয়ে নেয়। নিষেধাজ্ঞা জারির সময় ভবনটি ছিল ৮ম তলা পর্যন্ত; এখন ৯ম তলার কাজ শেষ করে ১০ তলার কাজও শুরু হয়ে গেছে।

স্থানীয়দের প্রশ্ন, একটি ডেভেলপার কোম্পানি কীভাবে আদালতের স্পষ্ট আদেশ অমান্য করে প্রকাশ্যে বহুতল ভবন নির্মাণ চালিয়ে যেতে পারে? আর প্রশাসন কেন এ বিষয়ে নীরব? এসব প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারছে না, তবে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এখানে আদালত বলে কিছু আছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও যদি কেউ ১০ তলা পর্যন্ত কাজ করতে পারে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?” আরেকজন বলেন, “প্রশাসনের নীরবতা না থাকলে এতদূর যেতে পারত না সানরাইজ।”

অভিযোগকারী আবু আকরাম কাওছারের মতে, আদালতের নির্দেশ অমান্য করা শুধু আইনের প্রতি অবজ্ঞাই নয়, বরং ক্ষমতা ও প্রভাবের অপব্যবহারেরও নগ্ন প্রদর্শন। তিনি বলেন, “আমি জেলা প্রশাসকের ল অফিসে গেছি, পুলিশ সুপারের অফিসে গেছি, থানায় গেছি, কিন্তু কেউই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে আসেনি। এটা প্রশাসনের জন্য লজ্জাজনক।”
স্থানীয়রা মনে করেন, ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের মালিকদের এলাকাজুড়ে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। তারা প্রশ্ন তুলছেন, ডেভেলপারদের আসল ক্ষমতার উৎস কোথায়? কেন অভিযোগ করেও সাধারণ মানুষ ন্যায্য প্রতিকার পাচ্ছে না?

অভিযোগে উল্লেখ করা তফসিল অনুযায়ী, চাষাড়া মৌজার সি এস, এস এ এবং আর এস খতিয়ানের দাগভুক্ত জমির ১.৫০ শতাংশ দখল হয়ে গেছে। আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে বহুতল নির্মাণ চলতে থাকায় ভবনটির নিরাপত্তা, স্থাপত্যগত ঝুঁকি এবং আশপাশের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। নির্মাণকাজের শব্দ, ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং শ্রমিকদের রাত-দিন কাজের কারণে এলাকাবাসীর স্বাভাবিক জীবনও ব্যাহত হচ্ছে।

অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কপি মেনে নেওয়ার পরও সানরাইজ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেডের কর্মীরা প্রকাশ্যেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কোন সংস্থা বাধা না দেওয়ায় তারা মনে করছে, আইনের ঊর্ধ্বে থেকেই এভাবে ভবন নির্মাণ করা সম্ভব। এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, সব কিছু জানার পরও প্রশাসন কেন নড়ছে না?

আবু আকরাম কাওছার বলেন, “আমার জমি দখল হওয়ার পাশাপাশি বিচার পাওয়ার অধিকারটাও লঙ্ঘিত হচ্ছে। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার প্রশ্ন, আইন আদালত সবই যদি উপেক্ষা করা হয়, তবে আমরা কোথায় যাবো?” তিনি অবিলম্বে নির্মাণকাজ বন্ধ করে আদালতের আদেশ কার্যকর করার দাবি জানান।

জামতলার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা মনে করছেন, দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। বিচারহীনতার পরিবেশ কেউই চায় না, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আদালতের নির্দেশ অকার্যকর হয়ে পড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

প্রশাসন নির্বিকার

আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি সানরাইজের

আপডেট সময় : ০৩:৫৩:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

ফতুল্লার জামতলায় মালিকানা জমি দখল, আদালতের স্থিতিবস্থা উপেক্ষা, এবং অনুমোদনবিহীন বহুতল ভবন নির্মাণ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। আদালতের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সানরাইজ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেড নির্মাণকাজ থামায়নি, বরং আগের তুলনায় আরও দ্রুতগতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের এই দুঃসাহসকে আরও উসকে দিচ্ছে।

জমির প্রকৃত মালিক আবু আকরাম কাওছার ফতুল্লা মডেল থানার ওসিসহ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোনো ফল পাননি। তিনি জানান, তার মালিকানাধীন মোট প্রায় ১.৫০ শতাংশ জমিতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে সানরাইজ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেডের মালিক আমান হুদা এবং সংশ্লিষ্ট মালিক আব্দুর রহমান, আঃ রহিম, ইউসুফ আমিন ও আনিসুর হাসান নির্মাণকাজ শুরু করেন। অনুরোধ করেও তারা দখলকৃত অংশ ফেরত দেয়নি।

পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় আবু আকরাম দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ৯২/২০২৫ দায়ের করেন। মামলার পর আদালত ১৬ অক্টোবর স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন এবং কোন ধরনের নির্মাণকাজ না করার নির্দেশ জারি করেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশ যুক্ত পক্ষদের হাতে পৌঁছানোর পরও বিবাদীরা নির্মাণকাজ বন্ধ না করে আরও উপরে তলার কাজ এগিয়ে নেয়। নিষেধাজ্ঞা জারির সময় ভবনটি ছিল ৮ম তলা পর্যন্ত; এখন ৯ম তলার কাজ শেষ করে ১০ তলার কাজও শুরু হয়ে গেছে।

স্থানীয়দের প্রশ্ন, একটি ডেভেলপার কোম্পানি কীভাবে আদালতের স্পষ্ট আদেশ অমান্য করে প্রকাশ্যে বহুতল ভবন নির্মাণ চালিয়ে যেতে পারে? আর প্রশাসন কেন এ বিষয়ে নীরব? এসব প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারছে না, তবে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এখানে আদালত বলে কিছু আছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও যদি কেউ ১০ তলা পর্যন্ত কাজ করতে পারে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?” আরেকজন বলেন, “প্রশাসনের নীরবতা না থাকলে এতদূর যেতে পারত না সানরাইজ।”

অভিযোগকারী আবু আকরাম কাওছারের মতে, আদালতের নির্দেশ অমান্য করা শুধু আইনের প্রতি অবজ্ঞাই নয়, বরং ক্ষমতা ও প্রভাবের অপব্যবহারেরও নগ্ন প্রদর্শন। তিনি বলেন, “আমি জেলা প্রশাসকের ল অফিসে গেছি, পুলিশ সুপারের অফিসে গেছি, থানায় গেছি, কিন্তু কেউই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে আসেনি। এটা প্রশাসনের জন্য লজ্জাজনক।”
স্থানীয়রা মনে করেন, ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের মালিকদের এলাকাজুড়ে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। তারা প্রশ্ন তুলছেন, ডেভেলপারদের আসল ক্ষমতার উৎস কোথায়? কেন অভিযোগ করেও সাধারণ মানুষ ন্যায্য প্রতিকার পাচ্ছে না?

অভিযোগে উল্লেখ করা তফসিল অনুযায়ী, চাষাড়া মৌজার সি এস, এস এ এবং আর এস খতিয়ানের দাগভুক্ত জমির ১.৫০ শতাংশ দখল হয়ে গেছে। আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে বহুতল নির্মাণ চলতে থাকায় ভবনটির নিরাপত্তা, স্থাপত্যগত ঝুঁকি এবং আশপাশের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। নির্মাণকাজের শব্দ, ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং শ্রমিকদের রাত-দিন কাজের কারণে এলাকাবাসীর স্বাভাবিক জীবনও ব্যাহত হচ্ছে।

অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কপি মেনে নেওয়ার পরও সানরাইজ ল্যান্ডমার্ক লিমিটেডের কর্মীরা প্রকাশ্যেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কোন সংস্থা বাধা না দেওয়ায় তারা মনে করছে, আইনের ঊর্ধ্বে থেকেই এভাবে ভবন নির্মাণ করা সম্ভব। এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, সব কিছু জানার পরও প্রশাসন কেন নড়ছে না?

আবু আকরাম কাওছার বলেন, “আমার জমি দখল হওয়ার পাশাপাশি বিচার পাওয়ার অধিকারটাও লঙ্ঘিত হচ্ছে। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার প্রশ্ন, আইন আদালত সবই যদি উপেক্ষা করা হয়, তবে আমরা কোথায় যাবো?” তিনি অবিলম্বে নির্মাণকাজ বন্ধ করে আদালতের আদেশ কার্যকর করার দাবি জানান।

জামতলার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা মনে করছেন, দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। বিচারহীনতার পরিবেশ কেউই চায় না, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আদালতের নির্দেশ অকার্যকর হয়ে পড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।