ঢাকা ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
রাসেল গার্মেন্টসে অসন্তোষ, নেপথ্যে মাসুম বিল্লাহ শাজাহানপুরে ট্রাকের নিচে ঢুকে মোটরসাইকেল আরোহী কলেজছাত্র নিহত, আহত ২ নারায়ণগঞ্জ ক্লাব পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে ফের এম সোলায়মানের নিরংকুশ বিজয় সীমান্তে অনুপ্রবেশের অভিযোগে বিএসএফ সদস্য আটক নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ইসির উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ফতুল্লায় ফেরি থেকে ট্রাকসহ পাঁচ যান ধলেশ্বরী নদীতে, নিহত ৩ শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ১৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা নারায়ণগঞ্জ ক্লাব নির্বাচন: বিপুল ভোটে জয়ের পথে এম. সোলায়মান জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ হলেন নাবিলা দুই বছর পর ওমরাহ করতে গিয়ে ছেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ ওমর সানীর
পলাতক শ্রমিকলীগ নেতা কাওসারের ক্যাডার এখন চরমোনাই অনুসারী

রাসেল গার্মেন্টসে অসন্তোষ, নেপথ্যে মাসুম বিল্লাহ

সোজাসাপটা রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ১২:৩৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১৪০ জন পড়েছেন

নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর শান্ত শিল্পাঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলার অন্যতম বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান রাসেল গার্মেন্টসকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষ সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ বলে মনে করছেন গার্মেন্টস মালিকপক্ষ, শিল্প সংশ্লিষ্ট মহল ও প্রশাসনের একাধিক সূত্র। তাদের দাবি, দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি গার্মেন্টস শিল্পকে টার্গেট করে পরিকল্পিতভাবে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা চলছে, যার নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শক্তির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশে বিভিন্ন শিল্পকারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলেও নারায়ণগঞ্জ ছিল তুলনামূলকভাবে শান্ত। শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত এই জেলায় বড় ধরনের শ্রমিক আন্দোলন বা সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। অথচ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর হঠাৎ করেই রাসেল গার্মেন্টসসহ কয়েকটি কারখানাকে ঘিরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি কোনো স্বতঃস্ফূর্ত শ্রমিক আন্দোলন নয়, বরং বাইরে থেকে উসকানি দিয়ে তৈরি করা সংকট।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কাউসার আহমেদ পলাশের ঘনিষ্ঠ ক্যাডার শ্রমিক নেতা হিসেবে পরিচিত রাসেল, রাজনৈতিক খোলস পাল্টে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ব্যানারে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি নিজেকে শ্রমিক নেতা হিসেবে উপস্থাপন করে শ্রমিকদের উসকানি দিচ্ছেন এবং গার্মেন্টস শিল্পকে অচল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রগুলোর মতে, এই কর্মকাণ্ডে তাকে আশ্রয় ও পরোক্ষ সমর্থন দিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী ও সংগঠনের মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ।
শ্রমিক ও কারখানা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, রাসেল নিয়মিতভাবে শ্রমিকদের অনুপস্থিত থেকেও কীভাবে মাসিক বেতন নেওয়া যায়, সে বিষয়ে প্ররোচনা দিতেন। রাসেল গার্মেন্টসে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে একশোর মতো শ্রমিক কাজে অনুপস্থিত থাকেন। অনেক শ্রমিক টানা কয়েকদিন কাজে না এসে হঠাৎ হাজির হন, কোনো ধরনের ছুটি আবেদন বা পূর্বানুমতি ছাড়াই। কারখানার নিয়মনীতি মানার বিষয়ে শ্রমিকদের মধ্যে একধরনের অবজ্ঞা তৈরি হয়।
গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব অনিয়মের বিষয়ে জেনারেল ম্যানেজার শ্রমিকদের কাছে ব্যাখ্যা চাইলে উল্টো তাকে হুমকি ও চাপের মুখে পড়তে হয়। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ ডিসেম্বর একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে ওঠে। ওইদিন এক শ্রমিক তার প্রোডাকশন ম্যানেজারকে ফোন করে জানায়, তার চাচা মারা গেছেন এবং সে গ্রামে যাবে। প্রোডাকশন ম্যানেজার তাকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে যাওয়ার পথে কারখানায় এসে কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে যেতে বলেন। বিষয়টি নিয়ে ওই শ্রমিক সহকর্মীদের কাছে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করলে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক লীগ নেতা রাসেলের নেতৃত্বে জেনারেল ম্যানেজারের অপসারণের দাবিতে হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। শনিবার থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত কারখানার কার্যক্রম বন্ধ থাকে। শ্রমিকরা মালিক পক্ষের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ জানায়, অসুস্থতার কারণে ব্যবস্থাপনা পরিচালক তখন সাক্ষাৎ দিতে পারবেন না। পরিস্থিতি সামাল দিতে আপাতত জেনারেল ম্যানেজারকে কারখানায় না আসার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
প্রাথমিকভাবে শ্রমিকরা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও পরদিন সোমবার পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। অভিযোগ রয়েছে, সব শ্রমিক একত্রিত হয়ে কারখানায় ঢুকে নিরাপত্তাকর্মীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাবি নিয়ে স্টাফদের বের করে দেন এবং গেট বন্ধ করে দেন। এরপর পুরো কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার মহান বিজয় দিবসের দিন কেউ কাজে যোগ দেননি। বুধবার ও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বারবার কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও শ্রমিকরা তা উপেক্ষা করেন।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার মালিক পক্ষ বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেন। মালিক পক্ষের কর্মকর্তারা জানান, শ্রম আইন অনুযায়ী মালিকের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ১৩ এর এক ধারায় কারখানা বন্ধ রাখার বিধান রয়েছে। সেই আইনি ক্ষমতাবলে রাসেল গার্মেন্টস সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পরে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের থানায় নিয়ে যায়। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে শ্রমিকদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। তবে শ্রমিকরা কোনো লিখিত অভিযোগ দিতে পারেননি বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়।
এই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলে ব্যাপক আলোচনা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক গার্মেন্টস মালিক অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে পুরো জেলার শিল্প পরিবেশকে নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা এখন ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ে, হাতপাখার প্রতীকের আড়ালে সক্রিয় হয়ে নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে।
এ বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের উপমহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র ঘোষ বলেন, শ্রমিকরা ১৭ থেকে ১৮টি দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন। এসব দাবির প্রায় সবকটিই আইনি ভিত্তিহীন। প্রাথমিকভাবে এগুলো শ্রম আইন পরিপন্থী বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। অসন্তোষ সৃষ্টির অভিযোগে ৪২ জন শ্রমিককে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে শ্রম আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা কাজে ফিরতে চান, তাদের কাজে যোগ দিতে কোনো বাধা নেই।
অভিযোগের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা মূলত একটি ট্র্যাপে পড়ে গেছি। শ্রমিক নেতা নামে পরিচিত রাসেল সম্পর্কে আমি আগে কিছুই জানতাম না। আমাদের শ্রমিক সংগঠনের কয়েকজন নেতার কথায় আমি সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি শুধু বলেছি, সবাইকে আইন অনুযায়ী চলতে হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, রাসেল আমাদের লোক নয়।
এই ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে পরিকল্পিতভাবে শ্রমিক অসন্তোষ উসকে দিয়ে শিল্পাঞ্চলকে অচল করার অপচেষ্টা রুখতে এখনই কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

পলাতক শ্রমিকলীগ নেতা কাওসারের ক্যাডার এখন চরমোনাই অনুসারী

রাসেল গার্মেন্টসে অসন্তোষ, নেপথ্যে মাসুম বিল্লাহ

আপডেট সময় : ১২:৩৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর শান্ত শিল্পাঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলার অন্যতম বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান রাসেল গার্মেন্টসকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষ সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ বলে মনে করছেন গার্মেন্টস মালিকপক্ষ, শিল্প সংশ্লিষ্ট মহল ও প্রশাসনের একাধিক সূত্র। তাদের দাবি, দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি গার্মেন্টস শিল্পকে টার্গেট করে পরিকল্পিতভাবে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা চলছে, যার নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শক্তির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশে বিভিন্ন শিল্পকারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলেও নারায়ণগঞ্জ ছিল তুলনামূলকভাবে শান্ত। শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত এই জেলায় বড় ধরনের শ্রমিক আন্দোলন বা সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। অথচ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর হঠাৎ করেই রাসেল গার্মেন্টসসহ কয়েকটি কারখানাকে ঘিরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি কোনো স্বতঃস্ফূর্ত শ্রমিক আন্দোলন নয়, বরং বাইরে থেকে উসকানি দিয়ে তৈরি করা সংকট।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কাউসার আহমেদ পলাশের ঘনিষ্ঠ ক্যাডার শ্রমিক নেতা হিসেবে পরিচিত রাসেল, রাজনৈতিক খোলস পাল্টে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ব্যানারে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি নিজেকে শ্রমিক নেতা হিসেবে উপস্থাপন করে শ্রমিকদের উসকানি দিচ্ছেন এবং গার্মেন্টস শিল্পকে অচল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রগুলোর মতে, এই কর্মকাণ্ডে তাকে আশ্রয় ও পরোক্ষ সমর্থন দিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী ও সংগঠনের মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ।
শ্রমিক ও কারখানা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, রাসেল নিয়মিতভাবে শ্রমিকদের অনুপস্থিত থেকেও কীভাবে মাসিক বেতন নেওয়া যায়, সে বিষয়ে প্ররোচনা দিতেন। রাসেল গার্মেন্টসে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে একশোর মতো শ্রমিক কাজে অনুপস্থিত থাকেন। অনেক শ্রমিক টানা কয়েকদিন কাজে না এসে হঠাৎ হাজির হন, কোনো ধরনের ছুটি আবেদন বা পূর্বানুমতি ছাড়াই। কারখানার নিয়মনীতি মানার বিষয়ে শ্রমিকদের মধ্যে একধরনের অবজ্ঞা তৈরি হয়।
গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব অনিয়মের বিষয়ে জেনারেল ম্যানেজার শ্রমিকদের কাছে ব্যাখ্যা চাইলে উল্টো তাকে হুমকি ও চাপের মুখে পড়তে হয়। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ ডিসেম্বর একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে ওঠে। ওইদিন এক শ্রমিক তার প্রোডাকশন ম্যানেজারকে ফোন করে জানায়, তার চাচা মারা গেছেন এবং সে গ্রামে যাবে। প্রোডাকশন ম্যানেজার তাকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে যাওয়ার পথে কারখানায় এসে কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে যেতে বলেন। বিষয়টি নিয়ে ওই শ্রমিক সহকর্মীদের কাছে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করলে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক লীগ নেতা রাসেলের নেতৃত্বে জেনারেল ম্যানেজারের অপসারণের দাবিতে হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। শনিবার থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত কারখানার কার্যক্রম বন্ধ থাকে। শ্রমিকরা মালিক পক্ষের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ জানায়, অসুস্থতার কারণে ব্যবস্থাপনা পরিচালক তখন সাক্ষাৎ দিতে পারবেন না। পরিস্থিতি সামাল দিতে আপাতত জেনারেল ম্যানেজারকে কারখানায় না আসার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
প্রাথমিকভাবে শ্রমিকরা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও পরদিন সোমবার পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। অভিযোগ রয়েছে, সব শ্রমিক একত্রিত হয়ে কারখানায় ঢুকে নিরাপত্তাকর্মীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাবি নিয়ে স্টাফদের বের করে দেন এবং গেট বন্ধ করে দেন। এরপর পুরো কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার মহান বিজয় দিবসের দিন কেউ কাজে যোগ দেননি। বুধবার ও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বারবার কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও শ্রমিকরা তা উপেক্ষা করেন।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার মালিক পক্ষ বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেন। মালিক পক্ষের কর্মকর্তারা জানান, শ্রম আইন অনুযায়ী মালিকের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ১৩ এর এক ধারায় কারখানা বন্ধ রাখার বিধান রয়েছে। সেই আইনি ক্ষমতাবলে রাসেল গার্মেন্টস সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পরে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের থানায় নিয়ে যায়। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে শ্রমিকদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। তবে শ্রমিকরা কোনো লিখিত অভিযোগ দিতে পারেননি বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়।
এই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলে ব্যাপক আলোচনা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক গার্মেন্টস মালিক অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে পুরো জেলার শিল্প পরিবেশকে নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা এখন ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ে, হাতপাখার প্রতীকের আড়ালে সক্রিয় হয়ে নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে।
এ বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের উপমহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র ঘোষ বলেন, শ্রমিকরা ১৭ থেকে ১৮টি দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন। এসব দাবির প্রায় সবকটিই আইনি ভিত্তিহীন। প্রাথমিকভাবে এগুলো শ্রম আইন পরিপন্থী বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। অসন্তোষ সৃষ্টির অভিযোগে ৪২ জন শ্রমিককে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে শ্রম আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা কাজে ফিরতে চান, তাদের কাজে যোগ দিতে কোনো বাধা নেই।
অভিযোগের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা মূলত একটি ট্র্যাপে পড়ে গেছি। শ্রমিক নেতা নামে পরিচিত রাসেল সম্পর্কে আমি আগে কিছুই জানতাম না। আমাদের শ্রমিক সংগঠনের কয়েকজন নেতার কথায় আমি সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি শুধু বলেছি, সবাইকে আইন অনুযায়ী চলতে হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, রাসেল আমাদের লোক নয়।
এই ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে পরিকল্পিতভাবে শ্রমিক অসন্তোষ উসকে দিয়ে শিল্পাঞ্চলকে অচল করার অপচেষ্টা রুখতে এখনই কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।