ঢাকা ০৬:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ফের লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার, বিপাকে ভোক্তারা

ফের লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার, বিপাকে ভোক্তারা

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৪:৩২:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / ১ জন পড়েছেন

মাছ-মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের প্রধান ভরসার জায়গা ছিল সবজি। ফের বেড়েই চলেছে সবজির দাম। বাসাবাড়িতে নিয়মিত খাওয়া হয় এমন অধিকাংশ সবজির দাম এখন ৮০ টাকার ওপরে। সবজির দাম চড়া থাকায় অস্বস্তি বেড়েছে ক্রেতাদের; বিশেষ করে নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষেরা বেশি সংকটে পড়েছেন।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর খিলক্ষেত, নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে আরও অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। শাক-সবজি, মাছ-মাংস, ডিমসহ বেড়ে গেছে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে অধিকাংশ সবজির দাম ৮০ টাকার ওপরে। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বেগুনের দাম। বাজারে ১০০ টাকার নিচে কোনো বেগুন নেই, সর্বোচ্চ দাম ২০০ টাকা। তিন সপ্তাহ আগেও ৬০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে এক কেজি বেগুন কেনা যেত। অন্যান্য সবজির মধ্যে প্রতি কেজি করলা, বরবটি, কাঁকরোলের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা; আমদানি করা টমেটোর কেজি ১৬০-১৮০ টাকা; আর পটোল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙার কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দামে কেনা যায় চিচিঙা, ধুন্দুল, কচুমুখি প্রভৃতি সবজি। আর ৫০ টাকার নিচে রয়েছে শুধু মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে, কাঁচকলাসহ হাতে গোনা কয়েকটি সবজির দাম। এ ছাড়া প্রতিপিস লাউ ৭০-৮০ টাকা ও চালকুমড়া ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিকেজি কাঁচা মরিচের দাম এখন ২০০-২৪০ টাকা।

এদিকে বাজারে ইলিশের দাম কিছুটা কমলেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য মাছ। বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৬০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৮০০ টাকা ও দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩২০০ টাকায়।

এছাড়া প্রতিকেজি বোয়াল ৭৫০-৯০০ টাকা, কোরাল ৮৫০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকা, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০ টাকায়, কাতল ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, পাঙাশ ১৮০-২৩০, কৈ ২০০-২২০ এবং পাবদা ও শিং বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়।

আর চাষের ট্যাংরা প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা ও মলা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দাম বেড়েছে মুরগিরও। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়; আর প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৪০ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি দেশি মুরগি ৬০০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ৩১০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়।

বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডিমও। বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪৫-১৫০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। এছাড়া প্রতি ডজন হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে হঠাৎ করে বেড়েছে ডিমের চাহিদা। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়েনি সরবরাহ; যা বাড়িয়ে দিচ্ছে ডিমের দাম।

তবে গরু ও খাসির মাংসের দামে তেমন পরিবর্তন নেই। প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়, খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায়।

এদিকে, পাইকারিতে দাম কমলেও এর প্রভাব এখনো পড়েনি পেঁয়াজের খুচরা বাজারে। ফলে ভোক্তাদের বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে পেঁয়াজ। সীমান্ত নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রতিকেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। যা এক ধরনের জুলুম। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আমদানির পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে তদারকি বাড়াতে হবে।

আরেক বিক্রেতা ফিরোজ বলেন, এবার দেশের অনেক এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার জানান, বর্তমানে লিন সিজন বা কম উৎপাদনের মৌসুম চলছে। এ সময় আবহাওয়ার কারণে জমিতে সবজি চাষ কম হয়, ফলে সরবরাহও কমে যায়। এ কারণে বর্তমানে বাজারে সবজির দাম বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ সবজি রবি বা শীত মৌসুমে (অক্টোবর থেকে মার্চ মাস) উৎপাদন হয়। কারণ, এ সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকে। এখন যেহেতু বৃষ্টিপাতের মৌসুম; ফলে সারা দেশেই মাঠে সবজি চাষ কমে যায়। আগামী অক্টোবর থেকে নতুন সবজি উৎপাদন শুরু হলে আবার সরবরাহ বাড়বে। তখন দাম কমে আসবে।’

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ফের লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার, বিপাকে ভোক্তারা

ফের লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার, বিপাকে ভোক্তারা

আপডেট সময় : ০৪:৩২:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

মাছ-মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের প্রধান ভরসার জায়গা ছিল সবজি। ফের বেড়েই চলেছে সবজির দাম। বাসাবাড়িতে নিয়মিত খাওয়া হয় এমন অধিকাংশ সবজির দাম এখন ৮০ টাকার ওপরে। সবজির দাম চড়া থাকায় অস্বস্তি বেড়েছে ক্রেতাদের; বিশেষ করে নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষেরা বেশি সংকটে পড়েছেন।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর খিলক্ষেত, নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে আরও অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। শাক-সবজি, মাছ-মাংস, ডিমসহ বেড়ে গেছে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে অধিকাংশ সবজির দাম ৮০ টাকার ওপরে। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বেগুনের দাম। বাজারে ১০০ টাকার নিচে কোনো বেগুন নেই, সর্বোচ্চ দাম ২০০ টাকা। তিন সপ্তাহ আগেও ৬০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে এক কেজি বেগুন কেনা যেত। অন্যান্য সবজির মধ্যে প্রতি কেজি করলা, বরবটি, কাঁকরোলের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা; আমদানি করা টমেটোর কেজি ১৬০-১৮০ টাকা; আর পটোল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙার কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দামে কেনা যায় চিচিঙা, ধুন্দুল, কচুমুখি প্রভৃতি সবজি। আর ৫০ টাকার নিচে রয়েছে শুধু মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে, কাঁচকলাসহ হাতে গোনা কয়েকটি সবজির দাম। এ ছাড়া প্রতিপিস লাউ ৭০-৮০ টাকা ও চালকুমড়া ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিকেজি কাঁচা মরিচের দাম এখন ২০০-২৪০ টাকা।

এদিকে বাজারে ইলিশের দাম কিছুটা কমলেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য মাছ। বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৬০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৮০০ টাকা ও দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩২০০ টাকায়।

এছাড়া প্রতিকেজি বোয়াল ৭৫০-৯০০ টাকা, কোরাল ৮৫০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকা, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০ টাকায়, কাতল ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০-২২০, পাঙাশ ১৮০-২৩০, কৈ ২০০-২২০ এবং পাবদা ও শিং বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়।

আর চাষের ট্যাংরা প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা ও মলা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দাম বেড়েছে মুরগিরও। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়; আর প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৪০ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি দেশি মুরগি ৬০০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ৩১০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়।

বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডিমও। বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪৫-১৫০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। এছাড়া প্রতি ডজন হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে হঠাৎ করে বেড়েছে ডিমের চাহিদা। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়েনি সরবরাহ; যা বাড়িয়ে দিচ্ছে ডিমের দাম।

তবে গরু ও খাসির মাংসের দামে তেমন পরিবর্তন নেই। প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়, খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায়।

এদিকে, পাইকারিতে দাম কমলেও এর প্রভাব এখনো পড়েনি পেঁয়াজের খুচরা বাজারে। ফলে ভোক্তাদের বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে পেঁয়াজ। সীমান্ত নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রতিকেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। যা এক ধরনের জুলুম। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আমদানির পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে তদারকি বাড়াতে হবে।

আরেক বিক্রেতা ফিরোজ বলেন, এবার দেশের অনেক এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার জানান, বর্তমানে লিন সিজন বা কম উৎপাদনের মৌসুম চলছে। এ সময় আবহাওয়ার কারণে জমিতে সবজি চাষ কম হয়, ফলে সরবরাহও কমে যায়। এ কারণে বর্তমানে বাজারে সবজির দাম বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ সবজি রবি বা শীত মৌসুমে (অক্টোবর থেকে মার্চ মাস) উৎপাদন হয়। কারণ, এ সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকে। এখন যেহেতু বৃষ্টিপাতের মৌসুম; ফলে সারা দেশেই মাঠে সবজি চাষ কমে যায়। আগামী অক্টোবর থেকে নতুন সবজি উৎপাদন শুরু হলে আবার সরবরাহ বাড়বে। তখন দাম কমে আসবে।’