ঢাকা ০১:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট সময় : ১০:০৯:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
  • / ৩০ জন পড়েছেন

গত বছর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে স্থগিত হয়েছে বন্দর উপজেলা ও তোলারাম কলেজ শাখা কমিটিও। দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন অপরাধমূলক ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ।

রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সদস্যসচিব হৃদয় ভূঁইয়া। তিনি বলেন, একমাত্র কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া দেশের সবগুলো ইউনিট স্থগিত করা হয়েছে।

“বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই প্ল্যাটফর্মটি নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে। কেবলমাত্র জেলা কমিটি থাকবে। যা সীমিত সদস্যদের নিয়ে পরবর্তীতে গঠিত হবে এবং তারা কেবল জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের নিয়ে কাজ করবে”- বলেন এ ছাত্র সংগঠক।

গত বছরের জুনে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার এ আন্দোলন দমনে কঠোর ভূমিকায় গেলে আন্দোলন তীব্রতর হয়। এ আন্দোলন পরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে তা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে সরকারের পতন হয়।

ওই বছরের ১৪ জুলাই নারায়ণগঞ্জে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে প্রথম আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে ৩ আগস্ট আন্দোলন চলাকালীন ৪৯ সদস্যের একটি সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মটির ঢাকার নেতারা ছাত্র সংগঠন আকারে সারাদেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে কমিটি ঘোষণা করা শুরু করেন।

পরে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি নিরব রায়হানকে আহ্বায়ক ও জাবেদ আলমকে সদস্য সচিব করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৯২ সদস্যবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় এ ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ছিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক।

পরে ২৫ ফেব্রুয়ারি মাহফুজ খানকে আহ্বায়ক ও হৃদয় ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করে ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটিও অনুমোদন দেওয়া হয়। জেলা ও মহানগরের বাইরে ১৮৪ সদস্যের বন্দর উপজেলা ও ৮০ সদস্যের সরকারি তোলারাম কলেজ শাখা কমিটিও অনুমোদন দেওয়া হয়।

কমিটি স্থগিতের আগেই বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছেড়ে বেরিয়ে যান। অনেকে তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল এনসিপিতে যোগ দেন। আবার কেউ কেউ গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নির্দলীয় প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এনসিপির ‘লেজুরবৃত্তির’ও অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন।

তবে, এ ছাত্র সংগঠনটির পদধারী একাধিক নেতা নারায়ণগঞ্জেও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। একজন নেতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।

গত ৯ মার্চ এ ছাত্র সংগঠটির নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সংগঠক জিদান হোসেন নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে যৌথ বাহিনীর এক অভিযানে গ্রেপ্তার হন। ওই সময় তার কাছ থেকে চারটি ইয়াবা ও একটি ছুরিও উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ।পরে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এই ঘটনার পর ১২ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি অভিযানে বাধা দিয়ে আটক হন তরিকুল ইসলাম পিয়াস নামে সংগঠনটির আরেক নেতা। পরে ফতুল্লা মডেল থানায় মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার এ যুগ্ম সদস্যসচিব।

কিছু নেতা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হলেও এ ছাত্র সংগঠনটি জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহত সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম করেছে। নাগরিক সমস্যা নিরসন ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন সংগঠনটির নেতারা।

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত

আপডেট সময় : ১০:০৯:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

গত বছর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে স্থগিত হয়েছে বন্দর উপজেলা ও তোলারাম কলেজ শাখা কমিটিও। দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন অপরাধমূলক ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ।

রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সদস্যসচিব হৃদয় ভূঁইয়া। তিনি বলেন, একমাত্র কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া দেশের সবগুলো ইউনিট স্থগিত করা হয়েছে।

“বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই প্ল্যাটফর্মটি নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে। কেবলমাত্র জেলা কমিটি থাকবে। যা সীমিত সদস্যদের নিয়ে পরবর্তীতে গঠিত হবে এবং তারা কেবল জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের নিয়ে কাজ করবে”- বলেন এ ছাত্র সংগঠক।

গত বছরের জুনে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার এ আন্দোলন দমনে কঠোর ভূমিকায় গেলে আন্দোলন তীব্রতর হয়। এ আন্দোলন পরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে তা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে সরকারের পতন হয়।

ওই বছরের ১৪ জুলাই নারায়ণগঞ্জে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে প্রথম আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে ৩ আগস্ট আন্দোলন চলাকালীন ৪৯ সদস্যের একটি সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মটির ঢাকার নেতারা ছাত্র সংগঠন আকারে সারাদেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে কমিটি ঘোষণা করা শুরু করেন।

পরে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি নিরব রায়হানকে আহ্বায়ক ও জাবেদ আলমকে সদস্য সচিব করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৯২ সদস্যবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় এ ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ছিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক।

পরে ২৫ ফেব্রুয়ারি মাহফুজ খানকে আহ্বায়ক ও হৃদয় ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করে ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটিও অনুমোদন দেওয়া হয়। জেলা ও মহানগরের বাইরে ১৮৪ সদস্যের বন্দর উপজেলা ও ৮০ সদস্যের সরকারি তোলারাম কলেজ শাখা কমিটিও অনুমোদন দেওয়া হয়।

কমিটি স্থগিতের আগেই বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছেড়ে বেরিয়ে যান। অনেকে তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল এনসিপিতে যোগ দেন। আবার কেউ কেউ গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নির্দলীয় প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এনসিপির ‘লেজুরবৃত্তির’ও অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন।

তবে, এ ছাত্র সংগঠনটির পদধারী একাধিক নেতা নারায়ণগঞ্জেও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। একজন নেতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।

গত ৯ মার্চ এ ছাত্র সংগঠটির নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সংগঠক জিদান হোসেন নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে যৌথ বাহিনীর এক অভিযানে গ্রেপ্তার হন। ওই সময় তার কাছ থেকে চারটি ইয়াবা ও একটি ছুরিও উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ।পরে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এই ঘটনার পর ১২ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি অভিযানে বাধা দিয়ে আটক হন তরিকুল ইসলাম পিয়াস নামে সংগঠনটির আরেক নেতা। পরে ফতুল্লা মডেল থানায় মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার এ যুগ্ম সদস্যসচিব।

কিছু নেতা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হলেও এ ছাত্র সংগঠনটি জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহত সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম করেছে। নাগরিক সমস্যা নিরসন ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন সংগঠনটির নেতারা।