ডিবির সোর্স পরিচয়ে চলছে রূপকের রমরমা মসোহারা বাণিজ্য!

- আপডেট সময় : ০১:১০:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
- / ১৩০ জন পড়েছেন
নারায়ণগঞ্জ শহরে আবারও প্রশ্নের মুখে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও প্রভাব বিস্তারের ঘটনা। গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সোর্স পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে রমরমা মসোহারা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে রূপক নামের এক যুবক।
শহরের দেওভোগ, মাদসাইর, বাশমুলি, জিমখানা, চানমাড়ি, বাবুরাইলসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি এলাকায় রূপকের বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। তবে ভুক্তভোগীরা মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না, কারণ রূপক নিজেকে পরিচয় দেন নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের একজন ‘বিশেষ সোর্স’ হিসেবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রূপকের মূল কৌশল হলো নিজেকে ডিবি পুলিশের ‘ঘনিষ্ঠ’ ও ‘বিশ্বস্ত’ সোর্স হিসেবে পরিচয় দিয়ে এলাকায় ছোট বড় অপরাধে জড়িত বা সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করে তাদের কাছে যান। এরপর বলেন, তোমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট আছে, এখনই চাইলে তোলে নিতে পারি, তবে কিছু ব্যবস্থা করতে হবে।
এই ‘ব্যবস্থা’র অর্থই হলো—নিয়মিত মাসোহারা। সূত্র জানায়, দেওভোগ এলাকায় অন্তত ১২ জন ‘ছোট খাট’ অপরাধে জড়িত ব্যক্তি রূপককে মাসে ৫-১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন। একাধিক ইয়াবা কারবারি, জুয়াড়ি, ছিনতাইয়ে জড়িত ব্যক্তিদের কাছ থেকেও নিয়মিত মাসোহারা নেয় সে।
একাধিক ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রূপক এলাকায় এসে বলে আমি ডিবি থেকে এসেছি। তোমার নামে রিপোর্ট গেছে, আমি না থাকলে তোকে আজই ধরে নিয়ে যেত। আমি বলেছি তুমি ভালো হয়ে গেছো, কিন্তু ভাই কিছু তো খরচ লাগে। এরপর টাকা না দিলে ভয় দেখায় তোমার বাড়িতে অভিযান হবে, ব্যবসা বন্ধ করে দিব।
এক ভুক্তভোগী বলেন, আমি কিছুদিন আগে এক ঝুট গুদামে কাজ করতাম। হঠাৎ একদিন রূপক এসে বলে ডিবিতে রিপোর্ট আছে তোমার নামে। আমি ম্যানেজ করতেছি। তারপর সে আমার কাছে ৭ হাজার টাকা চায়। না দিলে নাকি ধরে নিয়ে যাবে।
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, রূপক নামে আমাদের কোনো সোর্স নেই। কেউ যদি এমন পরিচয়ে টাকা আদায় করে, তাহলে সেটা সম্পূর্ণ প্রতারণা। আমরা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এ ধরনের প্রতারকদের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে হবে এবং প্রমাণসহ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অফিসিয়ালি ডিবি পুলিশের সোর্স হিসেবে কাউকে নিযুক্ত করা হলেও তার কার্যক্রমের কিছু নিয়মনীতি থাকে এবং তা স্থানীয় অফিসারের অধীনেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু রূপক এই পরিচয়ের অপব্যবহার করে পুরো এলাকাজুড়ে একপ্রকার ‘সোর্স সিন্ডিকেট’ গড়ে তুলেছে।
দেওভোগ ও মাদসাইর এলাকার কয়েকজন তরুণ এখন নিজেরা সংগঠিত হচ্ছেন। তাদের ভাষায়, রূপক একাই কিছু না। আমরা যদি এক হই, যদি সোচ্চার হই, তাহলে তাকে থামানো সম্ভব। তার বিরুদ্ধে যারা ভয় পাচ্ছে, তারা যেন অন্তত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে। সাংবাদিক ও প্রশাসনের উচিত এখনই এই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
স্থানীয়দের মতে, রূপকের মতো ‘ছদ্মবেশী সোর্স’ শুধু একজন ব্যক্তির সমস্যা নয় এটি একটি গভীর সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। পুলিশ বাহিনীর নাম ব্যবহার করে কেউ যদি মাসোহারা বাণিজ্য করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নয়তো রূপকের মতো আরও অনেকেই সামনে এসে ডিবি নাম ভাঙিয়ে শহরকে পরিণত করবে ভয় আর জুলুমের নগরীতে।