ঢাকা ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বারান্দায় দাঁড়িয়ে গুলিবিদ্ধ হন শহীদ সুমাইয়া

আল আমীন মাহমুদ অর্ণব
  • আপডেট সময় : ০৬:০৪:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
  • / ১১ জন পড়েছেন

“মা, আমিও একটু দেইখা আসি বাইরডা, সবাই তো দেখতাছে” এ কথা বলেই বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন মাত্র ২০ বছরের তরুণী মা সুমাইয়া আক্তার। পর মুহূর্তেই ছাদের ওপর ঘুরতে থাকা হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া একটি গুলি তার মাথায় বিদ্ধ হয়। লুটিয়ে পড়েন মেঝেতে। রক্তে ভেসে যায় ছয়তলার বারান্দা। ছুটে আসেন মা, ভাইয়েরা, প্রতিবেশীরা। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
সেদিন ছিল শনিবার ২০২৪ সালের ২০ জুলাই। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লা, দোয়েল চত্বর। বিকেলবেলায় চলছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে পুলিশের দফায় দফায় দমন অভিযান। হেলিকপ্টার থেকে গুলি, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেডে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। আর সেই নারকীয় তা-বের বলি হন সদ্য মা হওয়া এক তরুণী, সুমাইয়া আক্তার।
বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার কৃতী কন্যা ছিলেন সুমাইয়া। বাবা সেলিম মাতব্বর করোনাকালে মারা যাওয়ার পর মা আছমা বেগম পাঁচ সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন নারায়ণগঞ্জে, জীবিকার সন্ধানে। বড় দুই ছেলের একজন পোশাক কারখানায় ও অপরজন কার্টন ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। মেয়েরা পোশাক কারখানায় ঢুকেছে সময়ের প্রয়োজনে। সুমাইয়াও পোশাক কারখানায় চাকরি করতে করতে বিয়ে করেন কুমিল্লার জাহিদ হোসেনকে।
বিয়ের পরও স্বামীর সাথে সম্পর্ক ছিল টালমাটাল। গর্ভবতী হওয়ার পর জাহিদ যৌতুক হিসেবে দাবি করেন ২ লাখ টাকা। দিতে না পারায় আবার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন। এক পর্যায়ে সন্তান জন্মের সময় মায়ের কাছে চলে আসেন সুমাইয়া। মেয়ের নাম রাখেন “সুয়াইবা” নিজের নামের সাথে মিল রেখে। জন্ম হয় ১২ মে, ঢাকার মাতুয়াইল শিশু হাসপাতালে।
২০ জুলাই দুপুরের পর থেকেই উত্তপ্ত ছিল চিটাগাং রোড থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত পুরো এলাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ ও বিজিবি। আকাশে চক্কর দিতে থাকে র‌্যাবের হেলিকপ্টার। চারদিক কাঁপছিল টিয়ারশেলের শব্দে, গুলির ঝাঁঝে। আতঙ্কে ফ্ল্যাটবন্দী হয়ে পড়েন বাসিন্দারা।
আছমা বেগম তখন আছরের নামাজ পড়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাশে দাঁড়ালেন মেয়ে সুমাইয়াও “সবাই দেহে, আমিও দেহি একটু বাইরডা” এই বলে এগিয়ে যায়। এরপর মুহূর্তেই ঘটে যায় সেই অমোচনীয় দুর্ঘটনা।
উত্তর দিক থেকে আসা একটি গুলি এস এস পাইপ ভেদ করে সুমাইয়ার মাথায় ঢুকে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। চোখের পলকে নিথর দেহ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সুমাইয়া।
মা আছমা বেগম ছুটে গিয়ে মেয়েকে জাপটে ধরেন, “ও মা, কী হইলো তোর?” মাথা থেকে ঝরছিল রক্ত। চেপে ধরেন সেই স্থান। তবুও গড়িয়ে পড়ে রক্ত। চোখ-মুখ নীল হয়ে যায় সুমাইয়ার। তাও তাঁরা ভরসা হারাননি। পাশের ফ্ল্যাটের মানুষকে ডেকে, ছুটে গিয়ে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কেউ গাড়ি দিতে রাজি হচ্ছিল না, আন্দোলনের কারণে রাস্তা বন্ধ, সংঘর্ষ চলমান।
শেষ পর্যন্ত দুইটি অটোরিকশা মিলে নিয়ে যাওয়া হয় প্রো-অ্যাক্টিভ হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান- মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আগেই মারা গেছেন।
পরিবার মরদেহ গ্রামের বাড়ি মেহেন্দীগঞ্জে নিয়ে যেতে চাইলেও, রাস্তার অবস্থা এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে কোনো গাড়িই রাজি হয়নি। অবশেষে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় সেই রাতেই সুমাইয়ার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। একদিকে স্তব্ধ মায়ের কান্না, অন্যদিকে বারবার মায়ের মুখ খুঁজে বেড়ানো আড়াই মাসের ছোট্ট শিশুকন্যা।
আসমা বেগম বলেন, “আমার মেয়েটা একটা কথাও বলতে পারল না। শুধু একটু বললে-মা, আমার বাচ্চারে দেখো, এইটুকু বললেও শান্তি পাইতাম।”
তিনি আরও বলেন, “এখন আমার আড়াই মাসের নাতনিটা সারাদিন মায়ের গন্ধ খোঁজে। ঘুমানোর সময় দুধ খুঁজে বুকের কাছে ছটফট করে। আমি মেয়ে হইয়া আমার মাইয়্যারে বাঁচাইতে পারি নাই… আমার বুক ফাইট্যা যায়।”
এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিবেশীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেদিন হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়। বারান্দার গ্রিল ফুটো হয়ে যে গুলি সুমাইয়ার মাথায় বিদ্ধ হয়, সেটি উদ্ধার করা হয় ঘটনার পরপরই। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়নি, দায় স্বীকার করেনি কেউ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর নজির পৃথিবীতে বিরল। আর সেই সহিংস অভিযানের বলি হয়েছেন এক মা, যার ঘরে তখনো বাচ্চাটি ঘুমাচ্ছিল খাটে।
এ ঘটনায় নিহত সুমাইয়ার ভগিনীপতি মোঃ বিল্লাল গত ২২ আগস্ট সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের নামে ও অজ্ঞাত ২০০-৩০০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেই উত্তাল সময়ে, সুমাইয়া আক্তারের মৃত্যু যেন শুধুই একটি পরিবার নয়, একটি জাতির বিবেকের মৃত্যু। যে রাষ্ট্র তার মায়ের কোলে ঘুমন্ত সন্তানের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সে রাষ্ট্র কতটুকু মানবিক?
শহীদ সুমাইয়ার মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয় গণতন্ত্রহীনতা, বৈষম্য, ফ্যাসিবাদ কেবল রাজনৈতিক বিষয় নয়; এটি মায়ের কোলে ঘুমন্ত সন্তানেরও প্রশ্ন।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

বারান্দায় দাঁড়িয়ে গুলিবিদ্ধ হন শহীদ সুমাইয়া

আপডেট সময় : ০৬:০৪:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

“মা, আমিও একটু দেইখা আসি বাইরডা, সবাই তো দেখতাছে” এ কথা বলেই বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন মাত্র ২০ বছরের তরুণী মা সুমাইয়া আক্তার। পর মুহূর্তেই ছাদের ওপর ঘুরতে থাকা হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া একটি গুলি তার মাথায় বিদ্ধ হয়। লুটিয়ে পড়েন মেঝেতে। রক্তে ভেসে যায় ছয়তলার বারান্দা। ছুটে আসেন মা, ভাইয়েরা, প্রতিবেশীরা। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
সেদিন ছিল শনিবার ২০২৪ সালের ২০ জুলাই। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লা, দোয়েল চত্বর। বিকেলবেলায় চলছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে পুলিশের দফায় দফায় দমন অভিযান। হেলিকপ্টার থেকে গুলি, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেডে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। আর সেই নারকীয় তা-বের বলি হন সদ্য মা হওয়া এক তরুণী, সুমাইয়া আক্তার।
বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার কৃতী কন্যা ছিলেন সুমাইয়া। বাবা সেলিম মাতব্বর করোনাকালে মারা যাওয়ার পর মা আছমা বেগম পাঁচ সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন নারায়ণগঞ্জে, জীবিকার সন্ধানে। বড় দুই ছেলের একজন পোশাক কারখানায় ও অপরজন কার্টন ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। মেয়েরা পোশাক কারখানায় ঢুকেছে সময়ের প্রয়োজনে। সুমাইয়াও পোশাক কারখানায় চাকরি করতে করতে বিয়ে করেন কুমিল্লার জাহিদ হোসেনকে।
বিয়ের পরও স্বামীর সাথে সম্পর্ক ছিল টালমাটাল। গর্ভবতী হওয়ার পর জাহিদ যৌতুক হিসেবে দাবি করেন ২ লাখ টাকা। দিতে না পারায় আবার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন। এক পর্যায়ে সন্তান জন্মের সময় মায়ের কাছে চলে আসেন সুমাইয়া। মেয়ের নাম রাখেন “সুয়াইবা” নিজের নামের সাথে মিল রেখে। জন্ম হয় ১২ মে, ঢাকার মাতুয়াইল শিশু হাসপাতালে।
২০ জুলাই দুপুরের পর থেকেই উত্তপ্ত ছিল চিটাগাং রোড থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত পুরো এলাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ ও বিজিবি। আকাশে চক্কর দিতে থাকে র‌্যাবের হেলিকপ্টার। চারদিক কাঁপছিল টিয়ারশেলের শব্দে, গুলির ঝাঁঝে। আতঙ্কে ফ্ল্যাটবন্দী হয়ে পড়েন বাসিন্দারা।
আছমা বেগম তখন আছরের নামাজ পড়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাশে দাঁড়ালেন মেয়ে সুমাইয়াও “সবাই দেহে, আমিও দেহি একটু বাইরডা” এই বলে এগিয়ে যায়। এরপর মুহূর্তেই ঘটে যায় সেই অমোচনীয় দুর্ঘটনা।
উত্তর দিক থেকে আসা একটি গুলি এস এস পাইপ ভেদ করে সুমাইয়ার মাথায় ঢুকে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। চোখের পলকে নিথর দেহ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সুমাইয়া।
মা আছমা বেগম ছুটে গিয়ে মেয়েকে জাপটে ধরেন, “ও মা, কী হইলো তোর?” মাথা থেকে ঝরছিল রক্ত। চেপে ধরেন সেই স্থান। তবুও গড়িয়ে পড়ে রক্ত। চোখ-মুখ নীল হয়ে যায় সুমাইয়ার। তাও তাঁরা ভরসা হারাননি। পাশের ফ্ল্যাটের মানুষকে ডেকে, ছুটে গিয়ে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কেউ গাড়ি দিতে রাজি হচ্ছিল না, আন্দোলনের কারণে রাস্তা বন্ধ, সংঘর্ষ চলমান।
শেষ পর্যন্ত দুইটি অটোরিকশা মিলে নিয়ে যাওয়া হয় প্রো-অ্যাক্টিভ হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান- মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আগেই মারা গেছেন।
পরিবার মরদেহ গ্রামের বাড়ি মেহেন্দীগঞ্জে নিয়ে যেতে চাইলেও, রাস্তার অবস্থা এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে কোনো গাড়িই রাজি হয়নি। অবশেষে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় সেই রাতেই সুমাইয়ার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। একদিকে স্তব্ধ মায়ের কান্না, অন্যদিকে বারবার মায়ের মুখ খুঁজে বেড়ানো আড়াই মাসের ছোট্ট শিশুকন্যা।
আসমা বেগম বলেন, “আমার মেয়েটা একটা কথাও বলতে পারল না। শুধু একটু বললে-মা, আমার বাচ্চারে দেখো, এইটুকু বললেও শান্তি পাইতাম।”
তিনি আরও বলেন, “এখন আমার আড়াই মাসের নাতনিটা সারাদিন মায়ের গন্ধ খোঁজে। ঘুমানোর সময় দুধ খুঁজে বুকের কাছে ছটফট করে। আমি মেয়ে হইয়া আমার মাইয়্যারে বাঁচাইতে পারি নাই… আমার বুক ফাইট্যা যায়।”
এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিবেশীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেদিন হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়। বারান্দার গ্রিল ফুটো হয়ে যে গুলি সুমাইয়ার মাথায় বিদ্ধ হয়, সেটি উদ্ধার করা হয় ঘটনার পরপরই। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়নি, দায় স্বীকার করেনি কেউ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর নজির পৃথিবীতে বিরল। আর সেই সহিংস অভিযানের বলি হয়েছেন এক মা, যার ঘরে তখনো বাচ্চাটি ঘুমাচ্ছিল খাটে।
এ ঘটনায় নিহত সুমাইয়ার ভগিনীপতি মোঃ বিল্লাল গত ২২ আগস্ট সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের নামে ও অজ্ঞাত ২০০-৩০০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেই উত্তাল সময়ে, সুমাইয়া আক্তারের মৃত্যু যেন শুধুই একটি পরিবার নয়, একটি জাতির বিবেকের মৃত্যু। যে রাষ্ট্র তার মায়ের কোলে ঘুমন্ত সন্তানের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সে রাষ্ট্র কতটুকু মানবিক?
শহীদ সুমাইয়ার মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয় গণতন্ত্রহীনতা, বৈষম্য, ফ্যাসিবাদ কেবল রাজনৈতিক বিষয় নয়; এটি মায়ের কোলে ঘুমন্ত সন্তানেরও প্রশ্ন।