ঢাকা ০১:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
‘আড়ালেই থাকতে চাই, ক্যামেরাম্যান খুঁজে বের করে’ অদ্ভূত কারণে উইম্বলডন স্থগিত রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে সুখবর পেলেন মান্ধানা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে শহীদদের ঋণ পরিশোধের এখনই সময়: তারেক রহমান পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত বুধবার: নৌ উপদেষ্টা চট্টগ্রামের সাবেক ডিআইজিসহ আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত আ.লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আমরা হতাশ: নুর মুজিববাদী সংবিধান ফেলে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে: আখতার হোসেন
রেল ও নৌপথ মিলিয়ে মোট মৃত্যু ৪২৭, আহত প্রায় ১২০০

ঈদযাত্রা নাকি মৃত্যুযাত্রা? ১৫ দিনে সড়কে ঝরল ৩৯০ প্রাণ

সোজাসাপটা রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৩:০০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
  • / ৪৯ জন পড়েছেন
ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা আবারও পরিণত হয়েছে শোকযাত্রায়। ঈদের আগে ও পরে ১৫ দিনে সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে ৪১৫টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪২৭ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ১৯৪ জন মানুষ।
এই তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির পক্ষ থেকে সোমবার (১৬ জুন) ঢাকায় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত সময়কালে দেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩৯০ জন, আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৮২ জন। এ ছাড়া রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১১টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১২ জন, নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৬ জন।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বৃষ্টি এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্রামহীনভাবে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে পড়ে যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। আবার ঈদের পরে বহু চালক কোনো বিরতি ছাড়াই একটানা গাড়ি চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে দুর্ঘটনায় পড়েছেন।
তিনি বলেন, সিংহভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে খাদে পড়ে যাওয়া বা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে ধাক্কা লাগার কারণে। এছাড়া যাত্রীদের ওপর অতিরিক্ত ভাড়া চাপিয়ে দেওয়া, গণপরিবহন সংকট ও যাত্রাপথে হয়রানি এবারের ঈদেও সীমাহীন ছিল। অনেক যাত্রীকে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, এমনকি পণ্যবাহী ট্রাকে করেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
ঈদযাত্রাকে স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ করতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। তাদের মতে, ঈদের আগে কমপক্ষে চার দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া, গণপরিবহনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষিত চালক নিশ্চিত করা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বাতিল এবং আইনের কার্যকর প্রয়োগ জরুরি।
প্রতিবছর ঈদের সময় দেশে এমন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। কিন্তু তাতেও সরকারের নীতিনির্ধারক বা পরিবহন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো টেকসই সমাধান দেখা যাচ্ছে না। বরং ঈদ এলেই বাড়তি ভাড়া, টিকিট সংকট, যানজট, বেহাল রাস্তা, অব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে সাধারণ মানুষের জন্য বাড়ি ফেরা হয়ে ওঠে এক দুঃস্বপ্নের নাম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে সড়ক ব্যবস্থাপনা ও পরিবহন খাতে জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে। দুর্ঘটনার পর তদন্ত হয়, প্রতিবেদন হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। ফলে সমস্যাগুলো থেকেই যাচ্ছে, বাড়ছে শুধু প্রাণহানির সংখ্যা।
ঈদ আনন্দের সময় যেন কারও জন্য শোকের দিনে পরিণত না হয়, সেই জন্য এখনই প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা। নইলে প্রতিবারের মতো ঈদযাত্রা মৃত্যু আর হতাশার বার্তাই বয়ে আনবে দেশের মানুষের জন্য।
ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

রেল ও নৌপথ মিলিয়ে মোট মৃত্যু ৪২৭, আহত প্রায় ১২০০

ঈদযাত্রা নাকি মৃত্যুযাত্রা? ১৫ দিনে সড়কে ঝরল ৩৯০ প্রাণ

আপডেট সময় : ০৩:০০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা আবারও পরিণত হয়েছে শোকযাত্রায়। ঈদের আগে ও পরে ১৫ দিনে সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে ৪১৫টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪২৭ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ১৯৪ জন মানুষ।
এই তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির পক্ষ থেকে সোমবার (১৬ জুন) ঢাকায় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত সময়কালে দেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩৯০ জন, আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৮২ জন। এ ছাড়া রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১১টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১২ জন, নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৬ জন।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বৃষ্টি এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্রামহীনভাবে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে পড়ে যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। আবার ঈদের পরে বহু চালক কোনো বিরতি ছাড়াই একটানা গাড়ি চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে দুর্ঘটনায় পড়েছেন।
তিনি বলেন, সিংহভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে খাদে পড়ে যাওয়া বা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে ধাক্কা লাগার কারণে। এছাড়া যাত্রীদের ওপর অতিরিক্ত ভাড়া চাপিয়ে দেওয়া, গণপরিবহন সংকট ও যাত্রাপথে হয়রানি এবারের ঈদেও সীমাহীন ছিল। অনেক যাত্রীকে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, এমনকি পণ্যবাহী ট্রাকে করেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
ঈদযাত্রাকে স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ করতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। তাদের মতে, ঈদের আগে কমপক্ষে চার দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া, গণপরিবহনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষিত চালক নিশ্চিত করা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বাতিল এবং আইনের কার্যকর প্রয়োগ জরুরি।
প্রতিবছর ঈদের সময় দেশে এমন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। কিন্তু তাতেও সরকারের নীতিনির্ধারক বা পরিবহন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো টেকসই সমাধান দেখা যাচ্ছে না। বরং ঈদ এলেই বাড়তি ভাড়া, টিকিট সংকট, যানজট, বেহাল রাস্তা, অব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে সাধারণ মানুষের জন্য বাড়ি ফেরা হয়ে ওঠে এক দুঃস্বপ্নের নাম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে সড়ক ব্যবস্থাপনা ও পরিবহন খাতে জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে। দুর্ঘটনার পর তদন্ত হয়, প্রতিবেদন হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। ফলে সমস্যাগুলো থেকেই যাচ্ছে, বাড়ছে শুধু প্রাণহানির সংখ্যা।
ঈদ আনন্দের সময় যেন কারও জন্য শোকের দিনে পরিণত না হয়, সেই জন্য এখনই প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা। নইলে প্রতিবারের মতো ঈদযাত্রা মৃত্যু আর হতাশার বার্তাই বয়ে আনবে দেশের মানুষের জন্য।