ঢাকা ০৫:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র ফিরবে না: ব্যারিস্টার আনিসুল

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র ফিরবে না: ব্যারিস্টার আনিসুল

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৬:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
  • / ১ জন পড়েছেন

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টি অবশ্যই নির্বাচন চায়, কিন্তু কোনো যেনতেন নির্বাচন চায় না। নির্বাচনের আগে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে দেশের যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, তাতে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আর নির্বাচন স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য না হলে কোনোভাবেই গণতন্ত্র ফিরে আসবে না।’

শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে রাজধানীর গুলশানে জাতীয় পার্টি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ব্যারিস্টার আনিসুল আরও বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেমন রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি, তেমনি জরুরি দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি দরকার। এখনো দেশে মব সন্ত্রাস চলছে, প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। সাংবাদিকরাও হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এই অবস্থায় দেশে কোনভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘গেল বছরের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর দেশের রাজনীতিতেও পরিবর্তন এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা জাতীয় পার্টিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছি। ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে প্রায় দেড় হাজার মানুষ জীবন দিয়েছে। তাদের জীবন বৃথা যেতে দেব না। আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। দেশের সকল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব, প্রতিষ্ঠিত করব গণতন্ত্র। তবে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার আগে নিজের দলেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’

জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন থেকে জাতীয় পার্টি গণতান্ত্রিক উপায়ে যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হবে। আমরা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে বিতর্কিত ধারা বাদ দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের কমিটির পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কাছে সেই গঠনতন্ত্র জমা দিয়েছি।’

সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরাও সংস্কারের পক্ষে। কারণ পল্লীবন্ধু এরশাদই এদেশের শ্রেষ্ঠ সংস্কারক। কিন্তু সংস্কার করতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা দরকার। তাছাড়া নির্বাচিত পার্লামেন্ট ছাড়া সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন অসম্ভব।’

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমরাও বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার চাই। কারণ তিনি ওপেন কোর্টে দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে নিজেই সেই রায় পরিবর্তন করেছেন। এজন্য অবশ্যই তার বিচার হওয়া উচিত। তবে তার মানে এই নয় যে তার নামে হত্যা মামলা দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে অবশ্যই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনোভাবেই যেন একপেশে বিচার না হয়। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষ যাতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেই ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, নির্বাহী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং দলের শীর্ষ নেতারা।

মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার এ সময় বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কালো মেঘ সৃষ্টি হয়েছে। সকল দলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে এই কালো মেঘ কেটে যেতে পারে। যখনই ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখনই দেশে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হলে নির্বাচনের বিকল্প নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আমাদের সম্মেলনে এসেছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং দেশ গড়ার পেছনে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি সম্মেলনে এসে মতামত পেশ করেছেন। সেটি কারো ভালো লাগতে পারে, কারো খারাপও লাগতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার বাসায় দুদিন আগে বোমা হামলা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

হাওলাদার বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সবসময় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা একসময় আমাদের স্বৈরাচার বলতো। কিন্তু তারা কখনোই প্রমাণ করতে পারেনি যে আমরা স্বৈরাচার।’

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র ফিরবে না: ব্যারিস্টার আনিসুল

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র ফিরবে না: ব্যারিস্টার আনিসুল

আপডেট সময় : ০৩:৫৬:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টি অবশ্যই নির্বাচন চায়, কিন্তু কোনো যেনতেন নির্বাচন চায় না। নির্বাচনের আগে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে দেশের যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, তাতে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আর নির্বাচন স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য না হলে কোনোভাবেই গণতন্ত্র ফিরে আসবে না।’

শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে রাজধানীর গুলশানে জাতীয় পার্টি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ব্যারিস্টার আনিসুল আরও বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেমন রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি, তেমনি জরুরি দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি দরকার। এখনো দেশে মব সন্ত্রাস চলছে, প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। সাংবাদিকরাও হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এই অবস্থায় দেশে কোনভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘গেল বছরের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর দেশের রাজনীতিতেও পরিবর্তন এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা জাতীয় পার্টিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছি। ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে প্রায় দেড় হাজার মানুষ জীবন দিয়েছে। তাদের জীবন বৃথা যেতে দেব না। আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। দেশের সকল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব, প্রতিষ্ঠিত করব গণতন্ত্র। তবে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার আগে নিজের দলেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’

জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন থেকে জাতীয় পার্টি গণতান্ত্রিক উপায়ে যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হবে। আমরা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে বিতর্কিত ধারা বাদ দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের কমিটির পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কাছে সেই গঠনতন্ত্র জমা দিয়েছি।’

সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরাও সংস্কারের পক্ষে। কারণ পল্লীবন্ধু এরশাদই এদেশের শ্রেষ্ঠ সংস্কারক। কিন্তু সংস্কার করতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা দরকার। তাছাড়া নির্বাচিত পার্লামেন্ট ছাড়া সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন অসম্ভব।’

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমরাও বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার চাই। কারণ তিনি ওপেন কোর্টে দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে নিজেই সেই রায় পরিবর্তন করেছেন। এজন্য অবশ্যই তার বিচার হওয়া উচিত। তবে তার মানে এই নয় যে তার নামে হত্যা মামলা দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে অবশ্যই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনোভাবেই যেন একপেশে বিচার না হয়। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষ যাতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেই ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, নির্বাহী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং দলের শীর্ষ নেতারা।

মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার এ সময় বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কালো মেঘ সৃষ্টি হয়েছে। সকল দলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে এই কালো মেঘ কেটে যেতে পারে। যখনই ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখনই দেশে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হলে নির্বাচনের বিকল্প নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আমাদের সম্মেলনে এসেছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং দেশ গড়ার পেছনে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি সম্মেলনে এসে মতামত পেশ করেছেন। সেটি কারো ভালো লাগতে পারে, কারো খারাপও লাগতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার বাসায় দুদিন আগে বোমা হামলা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

হাওলাদার বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সবসময় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা একসময় আমাদের স্বৈরাচার বলতো। কিন্তু তারা কখনোই প্রমাণ করতে পারেনি যে আমরা স্বৈরাচার।’