ঢাকা ১২:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পুরান চাইল ভাতে বাড়ে

পুরান চাইল ভাতে বাড়ে

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৪:০৪:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
  • / ৭ জন পড়েছেন

সোজাসাপটা রিপোর্ট
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘনঘটার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে কে হবেন বিএনপির প্রার্থী, তা নিয়ে এখন তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত রাজনৈতিক মহলে চলছে তীব্র আলোচনা। সরকারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম হটস্পট হিসেবে পরিচিত এই আসনে, বিএনপির জন্য উপযুক্ত ও কার্যকর প্রার্থী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একদিকে মাঠের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা এবং ভোটারদের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা এই তিনটি বিবেচনার সমন্বয়ে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় উঠে এসেছে তাঁরা হলেন মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম, ব্যবসায়ী নেতা ও শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ। তবে নির্বাচনের পূর্বে শক্তভাবে মাঠে নামলে আবুল কালামকেই দল বেছে নিতে পারে বলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধারণা। কালামের ত্যাগ ও ক্লিন ইমেজ অন্য সকলের চেয়ে তাকে এগিয়ে রেখেছে।
মাসুদুজ্জামান মাসুদ নারায়ণগঞ্জের সফল ব্যবসায়ী, মডেল গ্রুপের কর্ণধার এবং দীর্ঘদিনের বিএনপি অনুসারী। মাসুদের রাজনৈতিক চর্চা অতটা দৃশ্যমান না হলেও, তিনি বিভিন্ন সময় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পাশে থেকে দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। তবে ঈদুল আযহা উপলক্ষে ৫ আসনের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং, মোবাইল মেসেজে ঈদ শুভেচ্ছা পাঠানো এবং মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের ফলে তার নাম রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। তাঁর মানবিক কর্মকাণ্ড যেমন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, অসহায়দের সহায়তা, নারীদের জন্য প্রশিক্ষণমূলক উদ্যোগ ইত্যাদি বিষয় সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করেন, সাংগঠনিক রাজনীতির বাইরের হলেও তার জনপ্রিয়তা ও আর্থিক সক্ষমতা তাকে একটি সম্ভাব্য প্রার্থী করে তুলেছে।
নারায়ণগঞ্জের ৫ আসনের জন্য আগামী নির্বাচনে তাই মডেল মাসুদ একটি সম্ভাব্য নাম হয়ে উঠেছে। দলের সদর-বন্দর থেকে অনেক নেতা-কর্মীকে এখন মডেল মাসুদের সাথে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দেখা যায়। তারাও চান যেন মডেল মাসুদ আগামী দিনের সংসদ সদস্য হয়ে তাদের এলাকার দুঃখ-সুখের সাথী হয়ে উন্নয়নে অবদান রাখেন।
অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান একজন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। ছাত্রদল হয়ে যুবদল এবং পরে বিএনপির মহানগর কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেন। অভিযোগ আছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারত। এছাড়া সাত খুনের ঘটনার সময় শহরের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে তিনি রাজপথে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। তার স্পষ্টবাদিতা, সংগঠনের প্রতি আনুগত্য এবং তারুণ্যের সঙ্গে সংলাপের দক্ষতা তাকে তুলনামূলকভাবে তরুণ প্রজন্মের মাঝে জনপ্রিয় করেছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আগামীর সংসদ সদস্য হিসেবে পেতে দলের নেতা-কর্মীরা চালাচ্ছে নানামুখী প্রচার-পচারণা। ডিজিটাল পোস্টার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে চালাচ্ছে প্রচার। সাখাওয়াতও চালিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক সভা-সমাবেশ। নেতা-কর্মীদের সক্রিয় রাখতে করে যাচ্ছেন নানা রকম মিছিল-মিটিং আর নানা ধরনের বৈঠকও।
আবু আল ইউসুফ খান টিপু, যিনি বর্তমানে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্বৈরাচার সময়ের আন্দোলন, গ্রেফতার, মিছিল ও দলীয় সভা-সমাবেশে তার সরব উপস্থিতি তাকে ‘রাজপথের নেতা’ হিসেবে পরিচিত করেছে। বিএনপির দুঃসময়ে যখন অনেকে নিরাপদ অবস্থানে ছিলেন, টিপু তখনও রাজপথে ছিলেন, লাঠিচার্জ-গ্রেফতার মাথায় নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের অনেকে মনে করেন, এমন একজন কর্মঠ, নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে সামনের কাতারে না আনলে দলের ভবিষ্যৎ আন্দোলন আরও দুর্বল হবে। তার সাংগঠনিক সক্ষমতা, তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং সাহসী নেতৃত্ব অনেকের দৃষ্টিতে তাকে একটি শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবকে আগামীর নারায়ণগঞ্জের ৫ আসনে পেতে তাঁর কাছের নেতা-কর্মীরা তাই নানা রকম প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। অন্যদিকে টিপু মুখে না বললেও চালিয়ে যাচ্ছেন নানামুখী রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে সাফ জানিয়ে দেয়া এই নেতা সক্রিয় আছেন দলের সকল সভা-সমাবেশে। একের পর এক অনুষ্ঠানে মাতিয়ে রাখছেন দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। নির্বাচনের মাঠে তাঁর নাম বেশ জোড়ালো ভাবেই শোনা যায়।
তিনবারের সংসদ সদস্য আবুল কালাম পুত্র নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাউসার আশা আছেন দলের নানামুখী কর্মসূচীতে। নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রের নির্দেশিত সকল ধরনের নির্দেশনা। সদর-বন্দরের সকল নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে করে যাচ্ছেন সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং। বন্দরের অলিগলিতে আশা’র সাথে মিলেমিশে কাজ করার প্রত্যয় লক্ষ্য করা যায় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বাবার কাজকে সহজ করে তোলার কাজটা সহজেই করে যাচ্ছেন কালাম পুত্র আশা। সাম্প্রতিক নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে আশা’র নানান রকম রাজনৈতিক কর্মকান্ড বেশ আলোচনায় এনেছে আবুল কালামকে।
১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ এর সংসদ সদস্য এডভোকেট আবুল কালাম দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত এই প্রবীণ নেতা জাতীয় রাজনীতিতেও একসময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তার পিতা জালাল উদ্দিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সংসদ সদস্য ছিলেন। আবুল কালামের পিতা জালাল উদ্দিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে ছিলেন বেশ ঘনিষ্ট আর বিশ্বস্ত নেতা। দল যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনও আবুল কালাম সংসদে নারায়ণগঞ্জের হয়ে কথা বলেছেন। আর দুঃসময়ে দল যখন রাজপথে ছিল, তখনো সাংগঠনিক নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার রাজনৈতিক জীবন তুলনামূলকভাবে বিতর্কমুক্ত এবং বহু বছর ধরে নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা ধরে রেখেছেন। বয়স এবং সময়ের বাস্তবতায় হয়তো মাঠে ততটা সক্রিয় নন, কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতা এবং ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান অনেকের কাছেই এখনও প্রাসঙ্গিক।
আবুল কালাম অনেকের কাছে একজন পরীক্ষিত রাজনীতিক ব্যক্তি। যার বিরুদ্ধে কোন প্রকার চাঁদাবাজী বা ভিন্ন কোন অপকর্মের ইতিহাস পাওয়া দুষ্কর। নারায়ণগঞ্জের এই নেতা ক্লিন ইমেজের দরুন সবার থেকে বেশ এগিয়ে। ৫ আসন ঘুরে জানা যায়, আবুল কালাম যদি একবার ডাক দেয় তবে বিএনপি’র লাখো নেতা-কর্মী মাঠে চলে আসতে প্রস্তুত। তিনি মাঠে নিয়মিত হলে এখনও তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই বলেই জানান নেতা-কর্মীরা।
সদর-বন্দরের বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের মাঝে কালাম একটি আস্থার যায়গা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। তিন তিনবার ধানের শীষের ঝান্ডা তুলে সংসদে সফল এই নেতা তাই সবার থেকে একটু বেশিই এগিয়ে বলছেন তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাধারণ ভোটাররা এডভোকেট আবুল কালামকে ‘পুরান চাইল ভাতে বাড়ে’ প্রবাদের সাথে একীভূত করে দেখছেন।
কে হবেন আগামী দিনের ধানের শীষের ধারক তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বিএনপি’র তৃণমূল চায় একজন কলঙ্কমুক্ত নেতা। যাকে বিশ্বাস করলে বিশ্বাস রাখবেন আর দলের বদনাম ঘুচিয়ে দলের সাথে এলাকার প্রকৃত উন্নয়নে অবদান রাখবেন।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

পুরান চাইল ভাতে বাড়ে

পুরান চাইল ভাতে বাড়ে

আপডেট সময় : ০৪:০৪:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

সোজাসাপটা রিপোর্ট
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘনঘটার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে কে হবেন বিএনপির প্রার্থী, তা নিয়ে এখন তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত রাজনৈতিক মহলে চলছে তীব্র আলোচনা। সরকারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম হটস্পট হিসেবে পরিচিত এই আসনে, বিএনপির জন্য উপযুক্ত ও কার্যকর প্রার্থী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একদিকে মাঠের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা এবং ভোটারদের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা এই তিনটি বিবেচনার সমন্বয়ে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় উঠে এসেছে তাঁরা হলেন মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম, ব্যবসায়ী নেতা ও শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ। তবে নির্বাচনের পূর্বে শক্তভাবে মাঠে নামলে আবুল কালামকেই দল বেছে নিতে পারে বলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধারণা। কালামের ত্যাগ ও ক্লিন ইমেজ অন্য সকলের চেয়ে তাকে এগিয়ে রেখেছে।
মাসুদুজ্জামান মাসুদ নারায়ণগঞ্জের সফল ব্যবসায়ী, মডেল গ্রুপের কর্ণধার এবং দীর্ঘদিনের বিএনপি অনুসারী। মাসুদের রাজনৈতিক চর্চা অতটা দৃশ্যমান না হলেও, তিনি বিভিন্ন সময় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পাশে থেকে দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। তবে ঈদুল আযহা উপলক্ষে ৫ আসনের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং, মোবাইল মেসেজে ঈদ শুভেচ্ছা পাঠানো এবং মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের ফলে তার নাম রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। তাঁর মানবিক কর্মকাণ্ড যেমন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, অসহায়দের সহায়তা, নারীদের জন্য প্রশিক্ষণমূলক উদ্যোগ ইত্যাদি বিষয় সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করেন, সাংগঠনিক রাজনীতির বাইরের হলেও তার জনপ্রিয়তা ও আর্থিক সক্ষমতা তাকে একটি সম্ভাব্য প্রার্থী করে তুলেছে।
নারায়ণগঞ্জের ৫ আসনের জন্য আগামী নির্বাচনে তাই মডেল মাসুদ একটি সম্ভাব্য নাম হয়ে উঠেছে। দলের সদর-বন্দর থেকে অনেক নেতা-কর্মীকে এখন মডেল মাসুদের সাথে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দেখা যায়। তারাও চান যেন মডেল মাসুদ আগামী দিনের সংসদ সদস্য হয়ে তাদের এলাকার দুঃখ-সুখের সাথী হয়ে উন্নয়নে অবদান রাখেন।
অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান একজন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। ছাত্রদল হয়ে যুবদল এবং পরে বিএনপির মহানগর কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেন। অভিযোগ আছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারত। এছাড়া সাত খুনের ঘটনার সময় শহরের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে তিনি রাজপথে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। তার স্পষ্টবাদিতা, সংগঠনের প্রতি আনুগত্য এবং তারুণ্যের সঙ্গে সংলাপের দক্ষতা তাকে তুলনামূলকভাবে তরুণ প্রজন্মের মাঝে জনপ্রিয় করেছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আগামীর সংসদ সদস্য হিসেবে পেতে দলের নেতা-কর্মীরা চালাচ্ছে নানামুখী প্রচার-পচারণা। ডিজিটাল পোস্টার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে চালাচ্ছে প্রচার। সাখাওয়াতও চালিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক সভা-সমাবেশ। নেতা-কর্মীদের সক্রিয় রাখতে করে যাচ্ছেন নানা রকম মিছিল-মিটিং আর নানা ধরনের বৈঠকও।
আবু আল ইউসুফ খান টিপু, যিনি বর্তমানে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্বৈরাচার সময়ের আন্দোলন, গ্রেফতার, মিছিল ও দলীয় সভা-সমাবেশে তার সরব উপস্থিতি তাকে ‘রাজপথের নেতা’ হিসেবে পরিচিত করেছে। বিএনপির দুঃসময়ে যখন অনেকে নিরাপদ অবস্থানে ছিলেন, টিপু তখনও রাজপথে ছিলেন, লাঠিচার্জ-গ্রেফতার মাথায় নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের অনেকে মনে করেন, এমন একজন কর্মঠ, নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে সামনের কাতারে না আনলে দলের ভবিষ্যৎ আন্দোলন আরও দুর্বল হবে। তার সাংগঠনিক সক্ষমতা, তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং সাহসী নেতৃত্ব অনেকের দৃষ্টিতে তাকে একটি শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবকে আগামীর নারায়ণগঞ্জের ৫ আসনে পেতে তাঁর কাছের নেতা-কর্মীরা তাই নানা রকম প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। অন্যদিকে টিপু মুখে না বললেও চালিয়ে যাচ্ছেন নানামুখী রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে সাফ জানিয়ে দেয়া এই নেতা সক্রিয় আছেন দলের সকল সভা-সমাবেশে। একের পর এক অনুষ্ঠানে মাতিয়ে রাখছেন দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। নির্বাচনের মাঠে তাঁর নাম বেশ জোড়ালো ভাবেই শোনা যায়।
তিনবারের সংসদ সদস্য আবুল কালাম পুত্র নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাউসার আশা আছেন দলের নানামুখী কর্মসূচীতে। নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রের নির্দেশিত সকল ধরনের নির্দেশনা। সদর-বন্দরের সকল নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে করে যাচ্ছেন সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং। বন্দরের অলিগলিতে আশা’র সাথে মিলেমিশে কাজ করার প্রত্যয় লক্ষ্য করা যায় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বাবার কাজকে সহজ করে তোলার কাজটা সহজেই করে যাচ্ছেন কালাম পুত্র আশা। সাম্প্রতিক নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে আশা’র নানান রকম রাজনৈতিক কর্মকান্ড বেশ আলোচনায় এনেছে আবুল কালামকে।
১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ এর সংসদ সদস্য এডভোকেট আবুল কালাম দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত এই প্রবীণ নেতা জাতীয় রাজনীতিতেও একসময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তার পিতা জালাল উদ্দিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সংসদ সদস্য ছিলেন। আবুল কালামের পিতা জালাল উদ্দিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে ছিলেন বেশ ঘনিষ্ট আর বিশ্বস্ত নেতা। দল যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনও আবুল কালাম সংসদে নারায়ণগঞ্জের হয়ে কথা বলেছেন। আর দুঃসময়ে দল যখন রাজপথে ছিল, তখনো সাংগঠনিক নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার রাজনৈতিক জীবন তুলনামূলকভাবে বিতর্কমুক্ত এবং বহু বছর ধরে নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা ধরে রেখেছেন। বয়স এবং সময়ের বাস্তবতায় হয়তো মাঠে ততটা সক্রিয় নন, কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতা এবং ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান অনেকের কাছেই এখনও প্রাসঙ্গিক।
আবুল কালাম অনেকের কাছে একজন পরীক্ষিত রাজনীতিক ব্যক্তি। যার বিরুদ্ধে কোন প্রকার চাঁদাবাজী বা ভিন্ন কোন অপকর্মের ইতিহাস পাওয়া দুষ্কর। নারায়ণগঞ্জের এই নেতা ক্লিন ইমেজের দরুন সবার থেকে বেশ এগিয়ে। ৫ আসন ঘুরে জানা যায়, আবুল কালাম যদি একবার ডাক দেয় তবে বিএনপি’র লাখো নেতা-কর্মী মাঠে চলে আসতে প্রস্তুত। তিনি মাঠে নিয়মিত হলে এখনও তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই বলেই জানান নেতা-কর্মীরা।
সদর-বন্দরের বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের মাঝে কালাম একটি আস্থার যায়গা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। তিন তিনবার ধানের শীষের ঝান্ডা তুলে সংসদে সফল এই নেতা তাই সবার থেকে একটু বেশিই এগিয়ে বলছেন তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাধারণ ভোটাররা এডভোকেট আবুল কালামকে ‘পুরান চাইল ভাতে বাড়ে’ প্রবাদের সাথে একীভূত করে দেখছেন।
কে হবেন আগামী দিনের ধানের শীষের ধারক তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বিএনপি’র তৃণমূল চায় একজন কলঙ্কমুক্ত নেতা। যাকে বিশ্বাস করলে বিশ্বাস রাখবেন আর দলের বদনাম ঘুচিয়ে দলের সাথে এলাকার প্রকৃত উন্নয়নে অবদান রাখবেন।