আ.লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ হন স্বজন
একমাত্র উপার্জনক্ষমকে হারিয়ে অন্ধকারে পরিবার

- আপডেট সময় : ১০:০৩:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫
- / ২৮ জন পড়েছেন
গণআন্দোলনের ডাকে জীবন উৎসর্গকারী শহীদ মোঃ আবুল হাসান স্বজন আজ নারায়ণগঞ্জবাসীর গর্ব ও শোকের নাম। শ্রমজীবী এই তরুণ জীবনের সব কষ্ট সয়ে নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন সমাজের পরিবর্তনের আন্দোলনে। শহীদের মৃত্যু যেন আঘাত হেনেছিল হাজারো হতদরিদ্র পরিবারের আশা-ভরসার বুকে।
জীবনের শুরুর গল্পই ছিল সংগ্রামের: নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা গ্রামে ১৯৯৯ সালের ১ মে জন্মগ্রহণ করেন মোঃ আবুল হাসান স্বজন। তাঁর পিতা মোঃ জাকির হোসেন একজন বৃদ্ধ ও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। কৃষি জমি না থাকায় পরিবারটি সবসময় অর্থকষ্টে ছিল। মা আফিয়া বেগম একজন গৃহিণী, ছোট ভাই আবুল বাশার বেকার। ফলে শৈশব পেরিয়েই সংসারের হাল ধরতে হয় স্বজনকে। পড়াশোনার বয়সে নেমে পড়েন দিনমজুরের কাজে। পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়েছিলেন এই যুবক।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছিল বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার ইতিহাসে আরেকটি রক্তাক্ত দিন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে “মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। সরকার আন্দোলন ঠেকাতে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে কারফিউ জারি করে। তবুও গণ-আন্দোলনের অংশ হিসেবে হাজারো তরুণের সঙ্গে রাস্তায় নামেন স্বজনও। সকাল ১০টায় চাষাড়ায় সমবেত হন ছাত্র-জনতা। সকাল ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হঠাৎ করে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে। ল্যাবএইড হাসপাতাল সংলগ্ন গলিতে অবস্থানরত স্বজন একটি গুলিতে বাম বুকে বিদ্ধ হন। সঙ্গে থাকা আন্দোলনকারীরা তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলি অপসারণ করা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। একদিন পর, ৬ আগস্ট বিকেল ৫টায় আইসিইউতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মোঃ স্বজন।
মোঃ স্বজন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার। ছোট ভাই বেকার, পিতা অসুস্থ। একটি পরিবারের জীবন যেন হঠাৎ করেই থেমে গেছে। তার মৃত্যু শুধু একটি প্রাণের পতন নয়; এটি হলো একটি পরিবারের অর্থনৈতিক-সামাজিক পতনের আর্তনাদ।
নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কুশিয়ারা এলাকায় স্থানীয় সামাজিক কবরস্থানে স্বজনকে সমাহিত করা হয়। জানাজায় অংশ নেয় শত শত গ্রামবাসী, প্রতিবেশী ও আন্দোলনকর্মী।
যে তরুণ জীবনের চরম বাস্তবতার মধ্যেও অধিকার ও ন্যায়ের লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন, তিনি এখন ইতিহাসের পাতায়। তার মৃত্যু প্রশ্ন তোলে রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার বৈষম্য, নিপীড়ন ও অবিচারের বিরুদ্ধে। শহীদ স্বজন কোনো রাজনৈতিক নেতার সন্তান ছিলেন না, কোনো সুবিধাভোগীও ছিলেন না- ছিলেন হাজারো মেহনতি তরুণের প্রতিনিধি। আজ তাঁর রক্ত আমাদের মনে করিয়ে দেয়- নির্বাক থাকা মানেই অন্যায়ের পাশে দাঁড়ানো।