ঈদুল-আযহা ঘিরে নারায়ণগঞ্জে ছিনতাই ও মলম পার্টির দৌরাত্ম্য, জনমনে আতঙ্ক

- আপডেট সময় : ১১:৩৮:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
- / ১৯ জন পড়েছেন
আসন্ন ঈদুল-আযহাকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জ শহরসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে ছিনতাই ও মলম পার্টির উৎপাত। বিশেষ করে পশুর হাট, মার্কেট ও গণপরিবহনের আশপাশে এ চক্রগুলোর দৌরাত্ম্য বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের আগে গরু কেনাবেচা, জামাকাপড় কেনা ও নগদ অর্থ লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এই সময়টিকে ‘সিজন’ হিসেবে বিবেচনা করে ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। তারা বিশেষ কৌশলে মানুষকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে।
চলন্ত যানবাহনেই সর্বস্ব লুট:
সম্প্রতি শহরের চাষাড়া, বাবুরাইল, দেওভোগ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা, সাইনবোর্ড ও টানবাজার এলাকায় কয়েকটি ঘটনায় যাত্রীরা ছিনতাই ও মলম পার্টির কবলে পড়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বাস, রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশায় চলাচলের সময়। ছদ্মবেশে সাধারণ যাত্রী সেজে চক্রের সদস্যরা উঠছে বাহনে, তারপর সুযোগ বুঝে অজ্ঞান করছে বা নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে দিচ্ছে।
এক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জানান, “আমি পশুর হাটে যাচ্ছিলাম। বাসে উঠার কিছুক্ষণ পরই পাশের এক লোক কোমল পানীয় খেতে দেয়। এরপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালের বিছানায়, আর আমার সঙ্গে থাকা এক লাখ টাকা নেই।”
মার্কেটের ভিড়েও সক্রিয় চক্র:
শহরের বিভিন্ন মার্কেট, যেমন সমবায়, আলমাস পয়েন্ট, খাজা সুপার মার্কেট, মন্ডলপাড়া ও নিতাইগঞ্জ এলাকাগুলোতেও ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে। ভিড়ের মধ্যে হঠাৎই মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ কিংবা ব্যাগ কেটে জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নারী সদস্যদেরও ব্যবহার করছে চক্রগুলো।
এক স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “ক্রেতাদের ব্যাগে ব্লেড দিয়ে কেটে টাকা-পয়সা নেয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার অভাবে লোকজন আতঙ্কে পড়েছে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ:
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির হোসেন জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সাদা পোশাকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা নজরদারি এবং সন্দেহভাজনদের তল্লাশিও চলছে।
তিনি বলেন, “জনগণকে সচেতন হতে হবে। অচেনা কেউ খাওয়ার কিছু দিলে গ্রহণ করা যাবে না। পাশাপাশি ভিড়ের মধ্যে সতর্ক থাকতে হবে। সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই পুলিশকে জানান।”
বিশেষজ্ঞদের মত:
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী ও চোরাকারবারিরা নানা ধরনের কৌশলে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। এর মূল কারণ নগদ অর্থ বহন ও অতিরিক্ত কেনাকাটা। এ সমস্যা রোধে জনসচেতনতা এবং সক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
জনসচেতনতা জরুরি:
- অচেনা কারও কাছ থেকে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করবেন না।
- যেকোনো সন্দেহজনক ব্যক্তি বা ঘটনা পুলিশকে জানান।
- গরুর হাটে বা মার্কেটে বড় অঙ্কের নগদ অর্থ না নিয়ে বিকল্প পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করুন।
- মূল্যবান জিনিসপত্র নিজের দৃষ্টিসীমায় রাখুন।
- সন্ধ্যার পর একা চলাফেরা এড়িয়ে চলুন।