না’গঞ্জে মাদক ব্যবসায়ীরা নিরাপদ!
মাসহারা বাণিজ্যে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এএসআই মামুন

- আপডেট সময় : ০৯:৩৫:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
- / ৩৬ জন পড়েছেন
নারায়ণগঞ্জ জেলায় মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের নিয়েই উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি নিয়মিত মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক ‘মাসহারা’ নিচ্ছেন এবং বিনিময়ে তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, শহরের চাষাঢ়া,চানমাড়ি,মাসদাইর,ইসদাইর,গাবতলি,জামতলা,লালপুর,তল্লা,খানপুর,দেওভোগ, বন্দর, ফতুল্লা ও শীতলক্ষ্যা নদীপাড়ের কিছু এলাকায় মাদক ব্যবসা এখন প্রকাশ্যেই চলছে। ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজাসহ নানা মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। অথচ এসব এলাকার ব্যবসায়ীদের কেউই তেমনভাবে ধরা পড়ছে না, বরং যারা নতুন বা “অননুমোদিত”, শুধু তাদেরই মাঝে মাঝে ধরা হয়—এভাবেই অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
একজন দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “মামুন স্যার এলাকায় আসলে ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই জানে কখন তল্লাশি হবে। যারা মাসে টাকা দেয়, তারা ধরা পড়ে না। মাঝে মাঝে শুধু শোডাউনের জন্য কিছু নতুন লোক ধরে নিয়ে যায়।”
অনুসন্ধান বলছে, এসআই মামুনের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। তিনি বিগত আওয়ামী শাসন আমলে স্থানীয় আওয়ামী নেতাদের মধ্যে যারা মাদক বাণিজ্য করতেন তাদের মূল শেল্টার দাতা হিসেবে মাসে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কাজ করতেন এই এসআই মামুন। এর আগেও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তাদের মামুনের বিষয়ে জানানো হলে তারা বিষয়টি আমলে নেই বরং এসআই মামুনকে বহাল রেখেছেন তার কার্যক্রমে।
নগরীর সচেতন মহল ও সমাজকর্মীরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, “যদি মাদক নিয়ন্ত্রণে থাকা কর্মকর্তারাই মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করেন, তাহলে এই শহর কখনোই মাদকমুক্ত হবে না।”
নারায়ণগঞ্জে মাদকের বিস্তার গত কয়েক বছরে ভয়াবহভাবে বেড়েছে। স্কুল-কলেজপড়ুয়া তরুণরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। পরিবারগুলো অসহায়, কিন্তু প্রশাসনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও ভয় পায়। কারণ অনেকেই মনে করে, অভিযোগ করেও ফল পাওয়া যাবে না—বরং হয়রানির শিকার হতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি তখনই কার্যকর হবে, যখন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার ভেতর থেকেই দৃষ্টান্তমূলক শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। অন্যথায়, এমন মাসহারা বাণিজ্য মাদক নির্মূলে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
এ বিষয়ে এএসআই মামুনকে মুঠোফোন করলে তিনি ফোনে এসকল বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি প্রতিবেদকে তার অফিসে গিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে বলেন পরে তিনি ফোনটি কেটে দেন। মামুনের পাশাপাশি জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি নজরে এসেছে এবং এ নিয়ে তদন্তের প্রস্তুতি চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।