ঢাকা ০৯:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

কম বয়সেও হতে পারে ব্রেইন স্ট্রোক, কোন লক্ষণে বুঝবেন

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৬:০৫:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১১ জন পড়েছেন
বর্তমান সময়ে কম বয়সে অনেককেই ব্রেইন স্ট্রোক করতে দেখা যায়। কয়েক বছর আগেও সাধারণত বয়স ৬০-এর কাছাকাছি না পৌঁছালে ব্রেইন স্ট্রোকের প্রকোপ খুব একটা দেখা যেত না। কিন্তু এখন কমবয়সীদের জন্যও প্রাণঘাতীও হয়ে উঠছে এই রোগ। কিভাবে এই রোগ থেকে দূরে থাকবেন, বিস্তারিত জানুন এই প্রতিবেদনে।

ব্রেইন স্ট্রোক কী

সাধারণত দুই ধরনের স্ট্রোক হতে পারে। মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে বা বন্ধ হয়ে গেলে ইস্কেমিক স্ট্রোক এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে হ্যামারেজ স্ট্রোক। যে ধরনের স্ট্রোকই হোক না কেন, মারণ রোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার অন্যতম দাওয়াই হলো সঠিক সময়ে লক্ষণ শনাক্ত করে চিকিৎসা করা।

কেন বাড়ছে এই স্ট্রোকের প্রকোপ 

এমনিতেই হাই প্রেশার প্রেশার, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল বেশি থাকলে কিংবা হার্টের সমস্যায় ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ইদানীং অল্প বয়সেই অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে এসব ক্রনিক রোগ বাড়ার প্রবণতা বাড়ছে। কমবয়সিদের অনিয়ন্ত্রিত ধূমপান, অ্যালকোহলপান, নানা রকম মাদকের নেশা ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।শরীরের ওজন বেশি থাকলে ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। স্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবর্তে বেশি ফাস্ট ফুড খাওয়াও ব্রেইন স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।

তরুণ-তরুণীদের শরীরে কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে তা অবহেলা করার প্রবণতা রয়েছে। নিজের প্রতি সচেতনতার অভাব স্ট্রোকের বিপদ ডেকে আনছে।শরীরে কোনো প্রদাহ বা ইনফেকশন থেকেও স্ট্রোক হতে পারে। ছোট বয়স থেকে দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ অল্প বয়সে স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া জিনগত কারণেও কমবয়সিদের মধ্যে ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে।

গর্ভনিরোধক কিংবা হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখার ওষুধ খেলে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা থাকে। কাজের চাপে হোক কিংবা অলসতায় কমবয়সিদের মধ্যে ‘বডি মুভমেন্ট’ কমে গেছে। যা অল্প বয়সে স্ট্রোক ডেকে আনছে।

যার প্রচণ্ড নাক ডাকেন অর্থাৎ যাদের অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ আপনিয়া রয়েছে তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়াও স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি কিংবা অপুষ্টির কারণেও স্ট্রোক হতে পারে।

যেসব লক্ষণে বুঝবেন

স্ট্রোকের লক্ষণ চেনা অত্যন্ত জরুরি। কারণ লক্ষণ দেখে যতক্ষণে চিকিৎসা শুরু করা হবে তার ওপরই নির্ভর করে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা। রোগী তো বটেই, সঙ্গে তার আশেপাশের মানুষদের স্ট্রোকের লক্ষণ বুঝতে হবে।

প্রথমেই যেসব লক্ষণ দেখে সাবধানতা নেওয়া প্রয়োজন তা বোঝার জন্য ৬টি ইংরেজি অক্ষরকে পাশাপাশি বসিয়ে শব্দবন্ধ তৈরি হয়েছে। যা হলো ‘বি’, ‘ই’, ‘এফ’, ‘এ’, ‘এস’ এবং ‘টি’। একসঙ্গে বললে হয় ‘বি ফাস্ট’। যার বাংলা মানে দাঁড়ায় ‘দ্রুত কর’। আর এই ছয়টি অক্ষরের অর্থ জানা জরুরি।

  • বি মানে ব্যালেন্স : হঠাৎ যদি কেউ শরীরের ভারমাস্য হারিয়ে ফেলেন, তাহলে স্ট্রোকের কথা মাথায় রাখতে হবে।
  • ই মানে আই (দৃষ্টিশক্তি) : স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে চোখে একসঙ্গে দুটো জিনিস দেখতে পান কিংবা চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়।
  • এফ মানে ফেস : যার স্ট্রোক হচ্ছে, তার মুখ বেঁকে যায়। মুখের একটি অংশ ঝুলে যেতে পারে,মুখের কোনো এক দিক স্থির থাকে।
  • এ মানে আর্ম : শরীরে একদিকের হাত অসাড় লাগা, হাতে জোর হারিয়ে যাওয়া, হাতের মতো পা নড়াচড়া করতে না পারা স্ট্রোকের সম্ভাব্য লক্ষণ।
  • এস মানে স্পিচ : স্ট্রোক হলে কথা জড়িয়ে যায়। সঠিক শব্দ বেছে কথা বলতে অসুবিধা হয়।
  • টি মানে টাইম : ওপরের যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সঠিক সময়ের মধ্যে স্ট্রোক চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যান্য উপসর্গ 

হঠাৎ তীব্র মাথা যন্ত্রণা, তবে সাধারণ যন্ত্রণা নয়, মনে হতে পারে যেন মাথা ছিঁড়ে বের হয়ে যাচ্ছে। ঘাড়ে যন্ত্রণা, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া প্রাথমিক স্তরের স্ট্রোকের এই লক্ষণগুলোও দেখা দিতে পারে।

স্ট্রোক মানেই মৃত্যু নয়

ব্রেইন স্ট্রোক মানে মৃত্যু, একেবারে ভ্রান্ত ধারণা। যার জন্য একেবারে গোড়ায় রোগ নির্ণয় করা জরুরি। স্ট্রোক হওয়ার প্রথম ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে সিটি স্ক্যান করে রক্ত শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। পরীক্ষায় যদি মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধা ধরা পড়ে তাহলে বর্তমান উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগীকে সুস্থ করে ফেলা সম্ভব।

বর্তমানে থ্রম্বোলাইসিস বা থ্রম্বেক্টমি করে যে রক্তনালী রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে তা খুলে দিলে স্নায়ুকোষে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক হয়। রক্ত তরল করার ওষুধ দিলেও রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করা যায়। ফলে রোগীর সুস্থতার সম্ভাবনা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেওয়া যায়। আগে সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত এই ‘গোল্ডেন আওয়ার’ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই সময় আরো বেড়ে গেছে। তবে রক্তক্ষরণ অত্যাধিক হলে অর্থাৎ ম্যাসিভ এটাক হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

আগেই সচেতন হোন 

  • নিয়মিত ব্লাড প্রেশার, সুগার, কোলেস্টেরল চেকআপ করান।
  • ধূমপান, অ্যালকোহলপান, মাদকাসক্ত হলে তা বর্জন করা উচিত।
  • মানসিক চাপ কমাতে হবে। যেকোনো প্রতিকূল অবস্থায় মনের জোর বজায় রাখুন।
  • ব্রেইন স্ট্রোকের বিপদ এড়াতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
  • স্ট্রোকের সঙ্গে অত্যাধিক মোবাইল ব্যবহারের প্রত্যক্ষভাবে সংযোগ না থাকলেও এটি মস্তিষ্কে ভুল সংকেত দেয়। ফলে মারণ রোগকে ঠেকাতে স্ক্রিনটাইম নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • সবুজ শাক-সবজি, ফলসহ সুষম খাবার খান। ডিপ ফ্রায়েড, ভাজাভাজি, মিষ্টি যতটা সম্ভব কম খান।
  • গর্ভাবস্থায় সন্তান প্রসবের আগে-পরে এবং সন্তান হওয়ার সময়ে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে স্ট্রোক হতে পারে। তাই গর্ভবতীর প্রেশার ঠিক রাখতে হবে।
  • স্ট্রোক এড়াতে নিয়মিত ঘাম ঝরিয়ে শরীরচর্চা করুন। ৩০ মিনিট হাঁটতে বা জগিং করতে পারেন।
  • পরিবারের কারো স্ট্রোকের ইতিহাস থাকলে ২৫ বছর বয়সের পর থেকে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করা দরকার।
  • মন ভালো রাখুন। অবসরে বই পড়া, গাছের পরিচর্যার মতো কাজ করলে মানসিক চাপ কমবে। গান, নাচ, ছবি আঁকা কিংবা কোনো খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন।
  • বেশ কয়েকটি শারীরিক সমস্যা যেমন রক্তাল্পতা, বাত, রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার সমস্যা থাকলে সতর্ক থাকুন।

স্ট্রোকের পর সচেতনতা

স্ট্রোকের পর সঠিক ফিজিওথেরাপি ও কাউন্সেলিং করলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। প্রেশার, সুগার থাকলে, মাংসপেশি শক্ত হয়ে গেলে সঠিক চিকিৎসা করতে হবে। এ ছাড়া মূত্রথলির কার্যকারিতা, রোগী ঠিকমতো খেতে পারছেন কি না, খেয়াল রাখা জরুরি। রোগীর মনের জোর বাড়াতে প্রিয়জনেদের সহযোগিতাও প্রয়োজন।

বুঝেশুনে জিমে শরীরচর্চা

জিমে ভারী ওজন নেওয়ার আগে বডি চেকআপ করিয়ে নিন। ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, রক্তের ঘনত্ব পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন। শরীরচর্চার সঙ্গে সঠিক খাওয়াদাওয়া করুন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নয়, সুনির্দিষ্ট সময়ে জিম করুন। জিমের পর খাওয়াদাওয়া, ধূমপান, মিষ্টি থেকে দূরে থাকবেন। সর্বোপরি কোনো বিশেষ শারীরিক সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের ও জিম ট্রেইনারের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করুন।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

কম বয়সেও হতে পারে ব্রেইন স্ট্রোক, কোন লক্ষণে বুঝবেন

আপডেট সময় : ০৬:০৫:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বর্তমান সময়ে কম বয়সে অনেককেই ব্রেইন স্ট্রোক করতে দেখা যায়। কয়েক বছর আগেও সাধারণত বয়স ৬০-এর কাছাকাছি না পৌঁছালে ব্রেইন স্ট্রোকের প্রকোপ খুব একটা দেখা যেত না। কিন্তু এখন কমবয়সীদের জন্যও প্রাণঘাতীও হয়ে উঠছে এই রোগ। কিভাবে এই রোগ থেকে দূরে থাকবেন, বিস্তারিত জানুন এই প্রতিবেদনে।

ব্রেইন স্ট্রোক কী

সাধারণত দুই ধরনের স্ট্রোক হতে পারে। মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে বা বন্ধ হয়ে গেলে ইস্কেমিক স্ট্রোক এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে হ্যামারেজ স্ট্রোক। যে ধরনের স্ট্রোকই হোক না কেন, মারণ রোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার অন্যতম দাওয়াই হলো সঠিক সময়ে লক্ষণ শনাক্ত করে চিকিৎসা করা।

কেন বাড়ছে এই স্ট্রোকের প্রকোপ 

এমনিতেই হাই প্রেশার প্রেশার, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল বেশি থাকলে কিংবা হার্টের সমস্যায় ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ইদানীং অল্প বয়সেই অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে এসব ক্রনিক রোগ বাড়ার প্রবণতা বাড়ছে। কমবয়সিদের অনিয়ন্ত্রিত ধূমপান, অ্যালকোহলপান, নানা রকম মাদকের নেশা ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।শরীরের ওজন বেশি থাকলে ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। স্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবর্তে বেশি ফাস্ট ফুড খাওয়াও ব্রেইন স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।

তরুণ-তরুণীদের শরীরে কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে তা অবহেলা করার প্রবণতা রয়েছে। নিজের প্রতি সচেতনতার অভাব স্ট্রোকের বিপদ ডেকে আনছে।শরীরে কোনো প্রদাহ বা ইনফেকশন থেকেও স্ট্রোক হতে পারে। ছোট বয়স থেকে দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ অল্প বয়সে স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া জিনগত কারণেও কমবয়সিদের মধ্যে ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে।

গর্ভনিরোধক কিংবা হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখার ওষুধ খেলে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা থাকে। কাজের চাপে হোক কিংবা অলসতায় কমবয়সিদের মধ্যে ‘বডি মুভমেন্ট’ কমে গেছে। যা অল্প বয়সে স্ট্রোক ডেকে আনছে।

যার প্রচণ্ড নাক ডাকেন অর্থাৎ যাদের অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ আপনিয়া রয়েছে তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়াও স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি কিংবা অপুষ্টির কারণেও স্ট্রোক হতে পারে।

যেসব লক্ষণে বুঝবেন

স্ট্রোকের লক্ষণ চেনা অত্যন্ত জরুরি। কারণ লক্ষণ দেখে যতক্ষণে চিকিৎসা শুরু করা হবে তার ওপরই নির্ভর করে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা। রোগী তো বটেই, সঙ্গে তার আশেপাশের মানুষদের স্ট্রোকের লক্ষণ বুঝতে হবে।

প্রথমেই যেসব লক্ষণ দেখে সাবধানতা নেওয়া প্রয়োজন তা বোঝার জন্য ৬টি ইংরেজি অক্ষরকে পাশাপাশি বসিয়ে শব্দবন্ধ তৈরি হয়েছে। যা হলো ‘বি’, ‘ই’, ‘এফ’, ‘এ’, ‘এস’ এবং ‘টি’। একসঙ্গে বললে হয় ‘বি ফাস্ট’। যার বাংলা মানে দাঁড়ায় ‘দ্রুত কর’। আর এই ছয়টি অক্ষরের অর্থ জানা জরুরি।

  • বি মানে ব্যালেন্স : হঠাৎ যদি কেউ শরীরের ভারমাস্য হারিয়ে ফেলেন, তাহলে স্ট্রোকের কথা মাথায় রাখতে হবে।
  • ই মানে আই (দৃষ্টিশক্তি) : স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে চোখে একসঙ্গে দুটো জিনিস দেখতে পান কিংবা চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়।
  • এফ মানে ফেস : যার স্ট্রোক হচ্ছে, তার মুখ বেঁকে যায়। মুখের একটি অংশ ঝুলে যেতে পারে,মুখের কোনো এক দিক স্থির থাকে।
  • এ মানে আর্ম : শরীরে একদিকের হাত অসাড় লাগা, হাতে জোর হারিয়ে যাওয়া, হাতের মতো পা নড়াচড়া করতে না পারা স্ট্রোকের সম্ভাব্য লক্ষণ।
  • এস মানে স্পিচ : স্ট্রোক হলে কথা জড়িয়ে যায়। সঠিক শব্দ বেছে কথা বলতে অসুবিধা হয়।
  • টি মানে টাইম : ওপরের যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সঠিক সময়ের মধ্যে স্ট্রোক চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যান্য উপসর্গ 

হঠাৎ তীব্র মাথা যন্ত্রণা, তবে সাধারণ যন্ত্রণা নয়, মনে হতে পারে যেন মাথা ছিঁড়ে বের হয়ে যাচ্ছে। ঘাড়ে যন্ত্রণা, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া প্রাথমিক স্তরের স্ট্রোকের এই লক্ষণগুলোও দেখা দিতে পারে।

স্ট্রোক মানেই মৃত্যু নয়

ব্রেইন স্ট্রোক মানে মৃত্যু, একেবারে ভ্রান্ত ধারণা। যার জন্য একেবারে গোড়ায় রোগ নির্ণয় করা জরুরি। স্ট্রোক হওয়ার প্রথম ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে সিটি স্ক্যান করে রক্ত শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। পরীক্ষায় যদি মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধা ধরা পড়ে তাহলে বর্তমান উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগীকে সুস্থ করে ফেলা সম্ভব।

বর্তমানে থ্রম্বোলাইসিস বা থ্রম্বেক্টমি করে যে রক্তনালী রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে তা খুলে দিলে স্নায়ুকোষে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক হয়। রক্ত তরল করার ওষুধ দিলেও রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করা যায়। ফলে রোগীর সুস্থতার সম্ভাবনা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেওয়া যায়। আগে সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত এই ‘গোল্ডেন আওয়ার’ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই সময় আরো বেড়ে গেছে। তবে রক্তক্ষরণ অত্যাধিক হলে অর্থাৎ ম্যাসিভ এটাক হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

আগেই সচেতন হোন 

  • নিয়মিত ব্লাড প্রেশার, সুগার, কোলেস্টেরল চেকআপ করান।
  • ধূমপান, অ্যালকোহলপান, মাদকাসক্ত হলে তা বর্জন করা উচিত।
  • মানসিক চাপ কমাতে হবে। যেকোনো প্রতিকূল অবস্থায় মনের জোর বজায় রাখুন।
  • ব্রেইন স্ট্রোকের বিপদ এড়াতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
  • স্ট্রোকের সঙ্গে অত্যাধিক মোবাইল ব্যবহারের প্রত্যক্ষভাবে সংযোগ না থাকলেও এটি মস্তিষ্কে ভুল সংকেত দেয়। ফলে মারণ রোগকে ঠেকাতে স্ক্রিনটাইম নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • সবুজ শাক-সবজি, ফলসহ সুষম খাবার খান। ডিপ ফ্রায়েড, ভাজাভাজি, মিষ্টি যতটা সম্ভব কম খান।
  • গর্ভাবস্থায় সন্তান প্রসবের আগে-পরে এবং সন্তান হওয়ার সময়ে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে স্ট্রোক হতে পারে। তাই গর্ভবতীর প্রেশার ঠিক রাখতে হবে।
  • স্ট্রোক এড়াতে নিয়মিত ঘাম ঝরিয়ে শরীরচর্চা করুন। ৩০ মিনিট হাঁটতে বা জগিং করতে পারেন।
  • পরিবারের কারো স্ট্রোকের ইতিহাস থাকলে ২৫ বছর বয়সের পর থেকে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করা দরকার।
  • মন ভালো রাখুন। অবসরে বই পড়া, গাছের পরিচর্যার মতো কাজ করলে মানসিক চাপ কমবে। গান, নাচ, ছবি আঁকা কিংবা কোনো খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন।
  • বেশ কয়েকটি শারীরিক সমস্যা যেমন রক্তাল্পতা, বাত, রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার সমস্যা থাকলে সতর্ক থাকুন।

স্ট্রোকের পর সচেতনতা

স্ট্রোকের পর সঠিক ফিজিওথেরাপি ও কাউন্সেলিং করলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। প্রেশার, সুগার থাকলে, মাংসপেশি শক্ত হয়ে গেলে সঠিক চিকিৎসা করতে হবে। এ ছাড়া মূত্রথলির কার্যকারিতা, রোগী ঠিকমতো খেতে পারছেন কি না, খেয়াল রাখা জরুরি। রোগীর মনের জোর বাড়াতে প্রিয়জনেদের সহযোগিতাও প্রয়োজন।

বুঝেশুনে জিমে শরীরচর্চা

জিমে ভারী ওজন নেওয়ার আগে বডি চেকআপ করিয়ে নিন। ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, রক্তের ঘনত্ব পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন। শরীরচর্চার সঙ্গে সঠিক খাওয়াদাওয়া করুন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নয়, সুনির্দিষ্ট সময়ে জিম করুন। জিমের পর খাওয়াদাওয়া, ধূমপান, মিষ্টি থেকে দূরে থাকবেন। সর্বোপরি কোনো বিশেষ শারীরিক সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের ও জিম ট্রেইনারের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করুন।