ঢাকা ০২:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ: বাংলাদেশের রপ্তানিতে অশনি সংকেত!

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ: বাংলাদেশের রপ্তানিতে অশনি সংকেত!

সোজাসাপটা রিপোর্ট :
  • আপডেট সময় : ০৯:০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১৫৪ জন পড়েছেন

ক্তরাষ্ট্রের নতুন কর বাংলাদেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কেননা নতুন শুল্কের হার মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে এবং আমেরিকান ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে। ফলে বৈশ্বিক ক্রেতারা বাংলাদেশ রপ্তানির পরিমাণ কমিয়ে দেবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা।

আজ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং মার্কিন শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ডিরেক্টর খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি মারাত্মকভাবে আঘাত হানবে কারণ নতুন করের হার বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা সব আইটেমের জন্য ইমপ্লিকেবল হবে। নতুন করের হারে আমদানি পণ্যের দাম বাড়বে। ফলস্বরূপ, আমেরিকান ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং তারা ভোক্তাদের আইটেমগুলোর জন্য কম ব্যয় করবে। অন্যদিকে, নতুন শুল্কের হার মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। ফলে বৈশ্বিক ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি কমিয়ে দেবে।

তিনি জানান, তবে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা স্বস্তি রয়েছে, কারণ নতুন শুল্কের হার পাকিস্তান, ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া এবং আরও অনেক দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নীতি বিশ্লেষণ করতে হবে। আমাদের বিবেচনা করা উচিত যে এটি কতদিন টিকে থাকবে বা থাকবে কি না, কোনো বিনিময় আছে কি না, যা করের হার কমাতে সাহায্য করতে পারে।

একটি সুন্দর সকালে, আমরা জানতে পেরেছি যে মার্কিন সরকার বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ কর আরোপ করেছে। এটা আমাদের কাছে বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো। এমন মন্তব্য করেছেন বিকেএমইএ এর সভাপতি মোহাম্মাদ হাতেম।

 

তিনি বলেন, ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে এটা রপ্তানি খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে এবং সামগ্রিক রপ্তানি কমে যেতে পারে কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্যের সবচেয়ে একক বড় বাজার।

 

এখন তাৎক্ষণিক সমাধান হলো আমাদের সরকার ধীরে ধীরে তাদের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ডিউটি কমিয়ে দিতে পারে। এটা করলে আমাদের ক্ষতি নেই কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের আমদানির চেয়ে রপ্তানি অনেক বেশি। তাই যতটুকু আমদানি হচ্ছে সেখানে সরকার যদি ডিউটি কমিয়েও দেয় এর প্রভাব খুব একটা হবে না। এটা একটা সমাধান হতে পারে, বলে মনে করেন হাতেম।

 

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, যে ট্যারিফ বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয়েছে সেটা আমাদের ওপর হওয়ার কথা না। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানির এভারেজ ডিউটি ১৫.২ শতাংশ। আমেরিকাতে কিন্তু পণ্যের আইটেম অনুযায়ী ডিউটি কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফ্ল্যাট ১২.৫ শতাংশ।

 

আমেরিকায় পলেস্টারে একরকম, নিটে একরকম, উলে একরকম, ট্রাউজারে একরকম। একেকটায় একেক রকম ডিউটি। কিন্তু গড়ে সেখানে ১৫.২ শতাংশ।

তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, যন্ত্রপাতি এবং পোশাক শিল্পের জন্য যেসব পণ্য আমদানি করি তার অধিকাংশ শুল্কমুক্ত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১ শতাংশ। ডিউটি বাড়ানোর প্রভাব তো পড়বেই। হয়তো টোটাল টার্নওভার কমে যাবে যুক্তরাষ্ট্রে। ধরা

 

যাক, যুক্তরাষ্ট্র বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের তৈরি পোশাক আমদানি করে। সেখানে ১০ শতাংশ আমদানি হয়তো কমে যাবে। ফলে আমাদের ওপর এর প্রভাব অবশ্যই পড়বে কারণ আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার হলো আমেরিকা।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের তথ্য অনুসারে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে, বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৮০০ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫.৯৩ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৭.৩৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল, যা আগের বছরে ছিল ৭.২৮ বিলিয়ন ডলার।

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এড্রেস লিখুন :

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ: বাংলাদেশের রপ্তানিতে অশনি সংকেত!

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ: বাংলাদেশের রপ্তানিতে অশনি সংকেত!

আপডেট সময় : ০৯:০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০২৫

ক্তরাষ্ট্রের নতুন কর বাংলাদেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কেননা নতুন শুল্কের হার মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে এবং আমেরিকান ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে। ফলে বৈশ্বিক ক্রেতারা বাংলাদেশ রপ্তানির পরিমাণ কমিয়ে দেবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা।

আজ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং মার্কিন শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতদিন দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ডিরেক্টর খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি মারাত্মকভাবে আঘাত হানবে কারণ নতুন করের হার বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা সব আইটেমের জন্য ইমপ্লিকেবল হবে। নতুন করের হারে আমদানি পণ্যের দাম বাড়বে। ফলস্বরূপ, আমেরিকান ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং তারা ভোক্তাদের আইটেমগুলোর জন্য কম ব্যয় করবে। অন্যদিকে, নতুন শুল্কের হার মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। ফলে বৈশ্বিক ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি কমিয়ে দেবে।

তিনি জানান, তবে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা স্বস্তি রয়েছে, কারণ নতুন শুল্কের হার পাকিস্তান, ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া এবং আরও অনেক দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নীতি বিশ্লেষণ করতে হবে। আমাদের বিবেচনা করা উচিত যে এটি কতদিন টিকে থাকবে বা থাকবে কি না, কোনো বিনিময় আছে কি না, যা করের হার কমাতে সাহায্য করতে পারে।

একটি সুন্দর সকালে, আমরা জানতে পেরেছি যে মার্কিন সরকার বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ কর আরোপ করেছে। এটা আমাদের কাছে বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো। এমন মন্তব্য করেছেন বিকেএমইএ এর সভাপতি মোহাম্মাদ হাতেম।

 

তিনি বলেন, ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে এটা রপ্তানি খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে এবং সামগ্রিক রপ্তানি কমে যেতে পারে কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্যের সবচেয়ে একক বড় বাজার।

 

এখন তাৎক্ষণিক সমাধান হলো আমাদের সরকার ধীরে ধীরে তাদের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ডিউটি কমিয়ে দিতে পারে। এটা করলে আমাদের ক্ষতি নেই কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের আমদানির চেয়ে রপ্তানি অনেক বেশি। তাই যতটুকু আমদানি হচ্ছে সেখানে সরকার যদি ডিউটি কমিয়েও দেয় এর প্রভাব খুব একটা হবে না। এটা একটা সমাধান হতে পারে, বলে মনে করেন হাতেম।

 

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, যে ট্যারিফ বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয়েছে সেটা আমাদের ওপর হওয়ার কথা না। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানির এভারেজ ডিউটি ১৫.২ শতাংশ। আমেরিকাতে কিন্তু পণ্যের আইটেম অনুযায়ী ডিউটি কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফ্ল্যাট ১২.৫ শতাংশ।

 

আমেরিকায় পলেস্টারে একরকম, নিটে একরকম, উলে একরকম, ট্রাউজারে একরকম। একেকটায় একেক রকম ডিউটি। কিন্তু গড়ে সেখানে ১৫.২ শতাংশ।

তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, যন্ত্রপাতি এবং পোশাক শিল্পের জন্য যেসব পণ্য আমদানি করি তার অধিকাংশ শুল্কমুক্ত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১ শতাংশ। ডিউটি বাড়ানোর প্রভাব তো পড়বেই। হয়তো টোটাল টার্নওভার কমে যাবে যুক্তরাষ্ট্রে। ধরা

 

যাক, যুক্তরাষ্ট্র বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের তৈরি পোশাক আমদানি করে। সেখানে ১০ শতাংশ আমদানি হয়তো কমে যাবে। ফলে আমাদের ওপর এর প্রভাব অবশ্যই পড়বে কারণ আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার হলো আমেরিকা।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের তথ্য অনুসারে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে, বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৮০০ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫.৯৩ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৭.৩৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল, যা আগের বছরে ছিল ৭.২৮ বিলিয়ন ডলার।