ঢাকা ০৯:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তান-আফগানিস্তান উত্তেজনা কমাতে বড় উদ্যোগ নিল তুরস্ক

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৬:৪৮:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৬ জন পড়েছেন

পাকিস্তান ও তালেবান সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা কমাতে তুরস্কের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল আগামী সপ্তাহে ইসলামাবাদ সফরে আসছে। এই সফরের উদ্দেশ্য, শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ বের করা। শনিবার দ্য নিউজ এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ওমানের জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবর্ধনায় পাকিস্তানে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ড. ইরফান নেজিরওগলু দ্য নিউজ–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান। সংবর্ধনার আয়োজন করেন পাকিস্তানে ওমানের রাষ্ট্রদূত ফাহাদ সুলাইমান খালাফ আল-খারুসি।

এর আগে এই মাসের শুরুতে আজারবাইজানের বাকুতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেখাবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এই পরিকল্পিত সফরের কথা প্রকাশ করেছিলেন।

ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলো সম্প্রতি কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়, কারণ আফগান সরকার তাদের ভূখণ্ডে সক্রিয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনীহা প্রকাশ করে।

রাষ্ট্রদূত নেজিরওগলু, যিনি ইস্তাম্বুলে আফগানিস্তান ইস্যুতে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন, জানান যে পাকিস্তান সফরকারী প্রতিনিধিদলে তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরাও থাকবেন। তুরস্কের জ্বালানি মন্ত্রী আলপারসলান বায়রাকতারও এই দলের অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহে ইসলামাবাদ সফর করবেন।

তিনি বলেন, তুরস্ক চায় যেন আফগান মাটি ব্যবহার করে কেউ পাকিস্তানে সন্ত্রাস ও রক্তপাত ঘটাতে না পারে। ‌‘দুই দেশ যেন ভাইয়ের মতো বসবাস করতে পারে, তুরস্কের তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর,’ মন্তব্য করেন নেজিরওগলু।

ইসলামাবাদ–কাবুল উত্তেজনা

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয় যখন ১২ অক্টোবর তালেবান বাহিনী ও ভারতসমর্থিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), যা ফিতনা আল-খাওয়ারিজ নামেও পরিচিত, পাকিস্তানের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়।

পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী পাল্টা জবাবে আত্মরক্ষামূলক অভিযানে ২০০–র বেশি আফগান তালেবান ও সংশ্লিষ্ট জঙ্গিকে হত্যা করে।

আইএসপিআর জানায়, এই সংঘর্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৩ সদস্য শহীদ হন।

এ ছাড়া পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী আফগানিস্তানের কন্দহার প্রদেশ, রাজধানী কাবুল এবং উত্তর ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের সীমান্ত এলাকায় ‘নির্ভুল হামলা’ চালায় এবং বহু সন্ত্রাসী আস্তানা ধ্বংস করে।

দুই দেশ ১৯ অক্টোবর দোহায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় এবং পরবর্তীতে ইস্তানবুলে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পাকিস্তান আফগান ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত সীমান্ত–সন্ত্রাস ঠেকাতে একটি স্থায়ী প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে চায়।

কিন্তু কাবুলের অনমনীয় অবস্থানের কারণে ইস্তাম্বুল বৈঠকগুলো প্রত্যাশিত ফল দিতে ব্যর্থ হয়।

পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগানিস্তান সরকার বাস্তব সমস্যার সমাধানের বদলে আলোচনাকে পাকিস্তানকে দোষারোপের প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছে; অথচ ইসলামাবাদের মূল উদ্বেগ রয়ে গেছে আফগান ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসবাদ।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

পাকিস্তান-আফগানিস্তান উত্তেজনা কমাতে বড় উদ্যোগ নিল তুরস্ক

আপডেট সময় : ০৬:৪৮:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

পাকিস্তান ও তালেবান সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা কমাতে তুরস্কের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল আগামী সপ্তাহে ইসলামাবাদ সফরে আসছে। এই সফরের উদ্দেশ্য, শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ বের করা। শনিবার দ্য নিউজ এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ওমানের জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবর্ধনায় পাকিস্তানে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ড. ইরফান নেজিরওগলু দ্য নিউজ–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান। সংবর্ধনার আয়োজন করেন পাকিস্তানে ওমানের রাষ্ট্রদূত ফাহাদ সুলাইমান খালাফ আল-খারুসি।

এর আগে এই মাসের শুরুতে আজারবাইজানের বাকুতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেখাবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এই পরিকল্পিত সফরের কথা প্রকাশ করেছিলেন।

ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলো সম্প্রতি কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়, কারণ আফগান সরকার তাদের ভূখণ্ডে সক্রিয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনীহা প্রকাশ করে।

রাষ্ট্রদূত নেজিরওগলু, যিনি ইস্তাম্বুলে আফগানিস্তান ইস্যুতে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন, জানান যে পাকিস্তান সফরকারী প্রতিনিধিদলে তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরাও থাকবেন। তুরস্কের জ্বালানি মন্ত্রী আলপারসলান বায়রাকতারও এই দলের অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহে ইসলামাবাদ সফর করবেন।

তিনি বলেন, তুরস্ক চায় যেন আফগান মাটি ব্যবহার করে কেউ পাকিস্তানে সন্ত্রাস ও রক্তপাত ঘটাতে না পারে। ‌‘দুই দেশ যেন ভাইয়ের মতো বসবাস করতে পারে, তুরস্কের তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর,’ মন্তব্য করেন নেজিরওগলু।

ইসলামাবাদ–কাবুল উত্তেজনা

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয় যখন ১২ অক্টোবর তালেবান বাহিনী ও ভারতসমর্থিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), যা ফিতনা আল-খাওয়ারিজ নামেও পরিচিত, পাকিস্তানের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়।

পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী পাল্টা জবাবে আত্মরক্ষামূলক অভিযানে ২০০–র বেশি আফগান তালেবান ও সংশ্লিষ্ট জঙ্গিকে হত্যা করে।

আইএসপিআর জানায়, এই সংঘর্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৩ সদস্য শহীদ হন।

এ ছাড়া পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী আফগানিস্তানের কন্দহার প্রদেশ, রাজধানী কাবুল এবং উত্তর ও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের সীমান্ত এলাকায় ‘নির্ভুল হামলা’ চালায় এবং বহু সন্ত্রাসী আস্তানা ধ্বংস করে।

দুই দেশ ১৯ অক্টোবর দোহায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় এবং পরবর্তীতে ইস্তানবুলে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পাকিস্তান আফগান ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত সীমান্ত–সন্ত্রাস ঠেকাতে একটি স্থায়ী প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে চায়।

কিন্তু কাবুলের অনমনীয় অবস্থানের কারণে ইস্তাম্বুল বৈঠকগুলো প্রত্যাশিত ফল দিতে ব্যর্থ হয়।

পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগানিস্তান সরকার বাস্তব সমস্যার সমাধানের বদলে আলোচনাকে পাকিস্তানকে দোষারোপের প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছে; অথচ ইসলামাবাদের মূল উদ্বেগ রয়ে গেছে আফগান ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসবাদ।