সংবাদ শিরোনাম :
শিক্ষার্থীদের ‘খয়রাতি নম্বর’ নয়, চাই মেধাভিত্তিক মূল্যায়ন: শিক্ষা উপদেষ্টা ড. রফিকুল আবরার

সোজাসাপটা রিপোর্ট
- আপডেট সময় : ০৭:০৮:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
- / ২৫ জন পড়েছেন
শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন এবং সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে ফলাফল নির্ধারণের ওপর জোর দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। তিনি বলেছেন, “আমরা এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যেখানে কোনো খয়রাতি নম্বর থাকবে না। শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা, পরিশ্রম ও অর্জনের ভিত্তিতেই ফলাফল পাবে।”
শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষাকে বানাতে হবে আনন্দময় অভিজ্ঞতা
অধ্যাপক আবরার আরও বলেন, “আমরা চাই এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা, যেখানে শিক্ষার্থীরা সকালে ঘুম থেকে উঠে আনন্দ নিয়ে বলে— কখন স্কুলে যাব? ছুটির দিনে তারা যেন আফসোস করে বলে— আজ তো স্কুল নেই! স্কুল যেন হয় এমন এক স্থান, যেখানে শুধু পাঠ্যবই নয়, থাকে বন্ধুত্ব, খেলাধুলা, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার বিস্তার।”
তিনি মনে করেন, যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় ও উদ্দীপনামূলক হয়, তাহলে তারাই একদিন দেশের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত হবে।
শিক্ষার মাধ্যমে বৈষম্য দূর সম্ভব
ড. আবরার বলেন, “আমরা সবাই চাই সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হোক, বৈষম্য দূর হোক। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হচ্ছে শিক্ষা ও শিক্ষক। কারণ একজন শিক্ষার্থী যখন ন্যায়-অন্যায়, দায়িত্ববোধ, মানবিকতা ও পরিশ্রমের মূল্য শিখে বড় হয়, তখন সে ভবিষ্যতে সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে।”
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের পক্ষে জোরালো মত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “অতীতে আমরা দেখেছি, রাজনৈতিক প্রভাবে স্কুল-কলেজ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা আর চলতে পারে না। শিক্ষা হতে হবে রাজনীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল। আগামী দিনে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তারা যেন শিক্ষাঙ্গনকে রক্ষা করেন— এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষাকে একটি রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে টেকসই নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে দলমত নির্বিশেষে সবাই একমত হবেন।”
সভায় উপস্থিত অন্যান্য অতিথিদের বক্তব্য
সভায় সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষার ফলাফলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। তাদেরকে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যারা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে।”
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, “বর্তমান যুগে দক্ষতা, প্রযুক্তি ও বাস্তবজ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শিক্ষা কাঠামোতে এসব বিষয় আরও জোরালোভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা, পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীরা। তারা সকলে একমত পোষণ করেন যে, একটি যুগোপযোগী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রগতিশীল শিক্ষাব্যবস্থা গড়তে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সহযোগিতা জরুরি।
এই মতবিনিময় সভা শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা তুলে ধরেছে। বক্তারা মনে করেন, এখনই সময় একটি সুসংগঠিত, মেধাভিত্তিক ও আনন্দময় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার, যা আগামী প্রজন্মকে শুধু সনদধারী নয়, বরং চিন্তাশীল, মানবিক ও দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে।
ট্যাগ :