চাষাঢ়ায় শোরুমে হামলা-ভাংচুর
টিপুর প্রভাবে বেপরোয়া হকাররা!

- আপডেট সময় : ০১:২৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
- / ৮ জন পড়েছেন
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া বঙ্গবন্ধু সড়ক যেন পরিণত হয়েছে বিএনপি নেতা এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর হকার বাহিনীর ত্রাসের রাজ্যে। সোমবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর ওই সড়কের বেস্ট বাই শোরুমে টিপুর প্রভাবে বেপরোয়া হকারদের সশস্ত্র তাণ্ডবে ভাঙচুর, হামলার ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শোরুমের সামনে হকারদের অবৈধ দোকান সরানোর কথা জানাতে গেলে টিপুর ভাই বিল্লালের হকারদের নামে লালিত কিশোরগ্যাং সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। মুহূর্তেই তারা সঙ্গবদ্ধ হয়ে একযোগে শোরুমে হামলা চালায়। শোরুমের তাক ভেঙে ফেলা হয়, দোকানের মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শোরুমের লোগো সম্বলিত টি-শার্ট পরা কর্মচারীদের উপর হামলা করে তাদের টি-শার্ট টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে টিপুর ছত্রচ্ছায়ায় কিছু হকার শহরের মূল সড়কগুলো দখল করে রেখেছে। তাঁদের নামে নিয়মিত চাঁদা আদায় হয়, আর টিপুর ভাই বিল্লাল নিজেকে ‘হকার সমিতির সভাপতি’ পরিচয়ে এলাকার ফুটপাতের জায়গা ভাগ-বাটোয়ারা করে দেন। ব্যবসায়ীরা জানান, এই প্রভাবশালী মহলটির সঙ্গে একাধিক কিশোরগ্যাং সরাসরি যুক্ত এবং তাদের ব্যবহার করা হয় ভয়ভীতি প্রদর্শন, হামলা, ও দখলযুদ্ধের কাজে।
বেস্ট বাই শোরুমের ম্যানেজার শাকিল বলেন, আজ সন্ধ্যার পর আমাদের শোরুমের সামনে হকাররা দোকান বসাতে থাকে। এতে ক্রেতাদের যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। আমি বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তারা দল বেঁধে এসে আমার উপর হামলা করে। আমার আঙুল কেটে যায়। আমাদের তিনজন কর্মচারীর টি-শার্ট ছিঁড়ে ফেলে। আমরা প্রাণে বাঁচতে ভিতরে আশ্রয় নিই।
তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা প্রকাশ্যে বলে, ‘আমরা এখানে বসতে না পারলে তোরাও ব্যবসা করতে পারবি না।’ এটা স্পষ্ট সন্ত্রাসী আচরণ। এরা বিএনপির নেতাদের আশ্রিত হকার বাহিনী বলেই সবাই জানে।
এক আহত কর্মচারী জানান, আমি মোবাইলে ভিডিও করছিলাম। তারা সেটা দেখে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমাকে মারধর করে, টি-শার্ট ছিঁড়ে ফেলে, আর হুমকি দেয় ভিডিও ডিলিট না করলে আমার অবস্থা খারাপ করে দিবে।
পরে টিপুর পিএস মাসুদ এসে শোরুমের ম্যানেজারকে হুমকি দিয়ে বলে, বেশি লাফাইও না। পোলাপান লাগাইয়া দিলে এখানে দুই মিনিট থাকতে পারবা না।
চোখের সামনে সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করা স্থানীয় দোকানিরা বলেন, এরা টিপু ও বিল্লালের লোক। আগে থেকেই এলাকায় দোকান বসানো, চাঁদা আদায়, আর দখল নিয়ে নানা গণ্ডগোল করে আসছে। পুলিশের সামনেই টিপুর প্রভাবে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। যারা এ ধরনের কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে স্থানীয়দের মতে, এই বক্তব্য কেবল দায়সারা। তারা দাবি করেন, টিপুর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ ছাড়া চাষাঢ়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কে প্রকাশ্য দিবালোকে এমন দুঃসাহসিক হামলা সম্ভব নয়।
চাষাঢ়ার বিভিন্ন দোকান মালিক ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন, বারবার হামলা ও ভয়ভীতির কারণে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। এক দোকানি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ পাশে থেকেও নীরব। টিপুর নাম শুনলেই অনেকে চুপ মেরে যায়। আজ যদি এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না হয়, কাল আর কেউ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবে না।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর একটাই প্রশ্ন চোখের সামনে এভাবে ভাঙচুর, হামলা, আর রাস্তাজুড়ে হকার দৌরাত্ম্য চললেও প্রশাসন নীরব কেন? ব্যবসায়ী সমাজের দাবি, ‘বঙ্গবন্ধুর নামে সড়ক, অথচ তাতে চলছে সন্ত্রাসের রাজত্ব’ এ লজ্জা নারায়ণগঞ্জের সকল নাগরিকের।
শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষড়ায় ঘটে যাওয়া এই তাণ্ডব শুধু একটি শোরুম নয়, গোটা বাণিজ্যিক পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা এখন প্রশ্ন তুলছেন, টিপুর প্রভাবে কি আইনও ফুটপাতে বসেছে?