ঢাকা ১২:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাষ্ট্র যাতে মেহেদীর কথা ভুলে না যায়, শহীদ মেহেদীর পিতা

রাষ্ট্র যাতে মেহেদীর কথা ভুলে না যায়, শহীদ মেহেদীর পিতা

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৪:২৯:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
  • / ১৭ জন পড়েছেন

সোজাসাপটা রিপোর্ট
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জুলাই গনঅভ্যুত্থানের ছাত্র আন্দোলনে সোনারগাঁয়ে শহীদ মেহেদীর আজ মৃত্যুবার্ষিকী। এ মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক প্রকাশ করেছেন রেনেসাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মেহেদীর বাবা-মার স্বপ্ন ছিল ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। সেই স্বপ্ন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর গুলিতে ধূলিসাৎ হয়ে গেল। আর তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এখন বাবা-মা দিশেহারা।
নিম্নবিত্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান ছিল মো. মেহেদী (২০)। বেঁচে থাকার জন্য শিক্ষাজীবন থেকেই জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন তিনি। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসেন মেহেদী। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পিচঢালা রাস্তায় রক্ত ছড়িয়ে চলে যান পরপারে। ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা মার মুখ উজ্জ্বল করতে না পারলেও গর্বিত করেছেন পরিবার আর এলাকাবাসীকে।
শহীদ মেহেদীর পিতা মো. সানাউল্লাহ জানান, এক পুত্র ও এক কন্যার মধ্যে মেহেদী ছিলেন ছোট। বড় বোন নির্জনাকে বিয়ে দিয়েছেন। নিজে বসুন্ধরা গ্রুপের পেপার মিলে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার রায়পাড়া গ্রামে। থাকেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ঝাউচর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে।
জন্মের পর থেকে মেহেদী নানির বাড়িতে বড় হন। স্থানীয় গজারিয়া প্রাইভেট ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সোনারগাঁও শিল্পনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি।
শোকে কাতর মেহেদীর মা শিল্পি বেগম বলেন, গতবছরের ২০ জুলাই দুপুরে মেহেদী খেতে আসবে বলে চলে যায়। সবার সঙ্গে আন্দোলন করতে গিয়ে আদরের একমাত্র ছেলে লাশ হয়ে এলো। পুলিশের গুলিতে আমার বাবার মাথার মগজ পর্যন্ত বের হয়ে গেছে। চুরমার হয়ে গেছে আমাদের স্বপ্ন। কী দোষ করেছিল মেহেদী? কেন ওকে গুলি করে মারলো? যারা আমার সন্তানকে মেরেছে তাদের বিচার করতে হবে। আমি তাদের বিচার চাই।
শহীদ মেহেদীর পিতা বলেন, গত বছর ২০ জুলাই বিকাল ৫টায় নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পেছনে হিরাঝিল আবাসিক এলাকায় রাস্তায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় মেহেদি। গুলিতে মাথার মগজ পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টায় মেহেদীর মোবাইল থেকে অপরিচিত একজন বলে আপনার সন্তান চিটাগাং রোডে গুলি খেয়েছে। আমি নারায়ণগঞ্জে চিটাগাং রোডে গিয়ে দেখি আমার একমাত্র সন্তান রাস্তার ওপর পড়ে আছে। মাথায় গুলি লাগায় মগজ পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন পলিথিন দিয়ে সন্তানকে ঢেকে রেখেছিল। পুলিশ শুধু গুলিই করেনি, মৃত সন্তানের শরীরেও লাথি মারে। ওই দিন রাতেই সন্তানের লাশ ঝাউচরে নিয়ে আসি এবং জানাজা শেষে স্থানীয় সামাজিক কবরস্থানে দাফন করি।
ঝাউচরে মেহেদীর ঘরে টেবিলের ওপর বইগুলো সুন্দর ভাবে সাজানো আছে। বইগুলো দেখে, আর মা চোখের পানি মোছে। মেহেদীর কথা বলতেই নানি চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
শহীদ মেহেদীর পিতা বলেন, ছেলেকে হারিয়েছি। আর কোনো দিন ফিরে পাবো না। রাষ্ট্র যাতে এদের ভুলে না যায়, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয় এ দাবি করি।
মেহেদীর পিতা জানান, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লাখ টাকা এবং মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে ১০ হাজার টাকা পেয়েছেন আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন তারা।
রেনেসাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন শহীদ মেহেদী, আবু সাঈদ, মুগ্ধ সহ হাজারো ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে এদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে।
আজ শহীদ মেহেদীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী দোয়া করি মহান আল্লাহ তায়ালা যেনো মেহেদীকে শহীদি মর্যাদা দান করেন এবং তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মাকাম দান করেন।
অন্তর্ভর্তীকালিন সরকারের উদ্দেশ্যে আতাউর রহমান বলেন জুলাই আগষ্টের গণ-অভ্যুত্থানে সকল অপরাধীদের বাংলাদেশের মাটিতে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

রাষ্ট্র যাতে মেহেদীর কথা ভুলে না যায়, শহীদ মেহেদীর পিতা

রাষ্ট্র যাতে মেহেদীর কথা ভুলে না যায়, শহীদ মেহেদীর পিতা

আপডেট সময় : ০৪:২৯:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

সোজাসাপটা রিপোর্ট
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জুলাই গনঅভ্যুত্থানের ছাত্র আন্দোলনে সোনারগাঁয়ে শহীদ মেহেদীর আজ মৃত্যুবার্ষিকী। এ মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক প্রকাশ করেছেন রেনেসাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মেহেদীর বাবা-মার স্বপ্ন ছিল ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। সেই স্বপ্ন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর গুলিতে ধূলিসাৎ হয়ে গেল। আর তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এখন বাবা-মা দিশেহারা।
নিম্নবিত্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান ছিল মো. মেহেদী (২০)। বেঁচে থাকার জন্য শিক্ষাজীবন থেকেই জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন তিনি। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসেন মেহেদী। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পিচঢালা রাস্তায় রক্ত ছড়িয়ে চলে যান পরপারে। ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা মার মুখ উজ্জ্বল করতে না পারলেও গর্বিত করেছেন পরিবার আর এলাকাবাসীকে।
শহীদ মেহেদীর পিতা মো. সানাউল্লাহ জানান, এক পুত্র ও এক কন্যার মধ্যে মেহেদী ছিলেন ছোট। বড় বোন নির্জনাকে বিয়ে দিয়েছেন। নিজে বসুন্ধরা গ্রুপের পেপার মিলে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার রায়পাড়া গ্রামে। থাকেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ঝাউচর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে।
জন্মের পর থেকে মেহেদী নানির বাড়িতে বড় হন। স্থানীয় গজারিয়া প্রাইভেট ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সোনারগাঁও শিল্পনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি।
শোকে কাতর মেহেদীর মা শিল্পি বেগম বলেন, গতবছরের ২০ জুলাই দুপুরে মেহেদী খেতে আসবে বলে চলে যায়। সবার সঙ্গে আন্দোলন করতে গিয়ে আদরের একমাত্র ছেলে লাশ হয়ে এলো। পুলিশের গুলিতে আমার বাবার মাথার মগজ পর্যন্ত বের হয়ে গেছে। চুরমার হয়ে গেছে আমাদের স্বপ্ন। কী দোষ করেছিল মেহেদী? কেন ওকে গুলি করে মারলো? যারা আমার সন্তানকে মেরেছে তাদের বিচার করতে হবে। আমি তাদের বিচার চাই।
শহীদ মেহেদীর পিতা বলেন, গত বছর ২০ জুলাই বিকাল ৫টায় নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পেছনে হিরাঝিল আবাসিক এলাকায় রাস্তায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় মেহেদি। গুলিতে মাথার মগজ পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টায় মেহেদীর মোবাইল থেকে অপরিচিত একজন বলে আপনার সন্তান চিটাগাং রোডে গুলি খেয়েছে। আমি নারায়ণগঞ্জে চিটাগাং রোডে গিয়ে দেখি আমার একমাত্র সন্তান রাস্তার ওপর পড়ে আছে। মাথায় গুলি লাগায় মগজ পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন পলিথিন দিয়ে সন্তানকে ঢেকে রেখেছিল। পুলিশ শুধু গুলিই করেনি, মৃত সন্তানের শরীরেও লাথি মারে। ওই দিন রাতেই সন্তানের লাশ ঝাউচরে নিয়ে আসি এবং জানাজা শেষে স্থানীয় সামাজিক কবরস্থানে দাফন করি।
ঝাউচরে মেহেদীর ঘরে টেবিলের ওপর বইগুলো সুন্দর ভাবে সাজানো আছে। বইগুলো দেখে, আর মা চোখের পানি মোছে। মেহেদীর কথা বলতেই নানি চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
শহীদ মেহেদীর পিতা বলেন, ছেলেকে হারিয়েছি। আর কোনো দিন ফিরে পাবো না। রাষ্ট্র যাতে এদের ভুলে না যায়, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয় এ দাবি করি।
মেহেদীর পিতা জানান, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লাখ টাকা এবং মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে ১০ হাজার টাকা পেয়েছেন আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন তারা।
রেনেসাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন শহীদ মেহেদী, আবু সাঈদ, মুগ্ধ সহ হাজারো ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে এদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে।
আজ শহীদ মেহেদীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী দোয়া করি মহান আল্লাহ তায়ালা যেনো মেহেদীকে শহীদি মর্যাদা দান করেন এবং তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মাকাম দান করেন।
অন্তর্ভর্তীকালিন সরকারের উদ্দেশ্যে আতাউর রহমান বলেন জুলাই আগষ্টের গণ-অভ্যুত্থানে সকল অপরাধীদের বাংলাদেশের মাটিতে বিচারের আওতায় আনতে হবে।