মাসুদুজ্জামানকে বির্তকিত করতে মিডিয়া ট্রায়াল শুরু
মাকসুদ-আশা’র নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার পরিকল্পনা!
- আপডেট সময় : ০৯:১২:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
- / ৮৯০ জন পড়েছেন
নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার যড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে পড়েছে। মনোনয়ন বঞ্চিত আবুল কালামে ছেলে আশা ও ওসমান পরিবারের অন্যতম দোসর মাকসুদ চেয়ারম্যান নাশকতার পরিকল্পনা করেছেন বলে গোয়েন্দা সুত্র টের পেয়ে গেছে। ফলে সর্তকাবস্থায় গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। সাদা পোষাকে নেমে পড়েছেন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির অভ্যন্তরে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনকে কেন্দ্র করে। দলের কেন্দ্রীয় ঘোষণায় শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাম ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভ ও ষড়যন্ত্রের গোপন আগুন জ্বলে উঠেছে পরাজিত মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির মনোনয়ন না পাওয়া আবুল কালামের ছেলে সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা গোপনে হাত মিলিয়েছেন পতিত স্বৈরাচারী দল আওয়ামী লীগের দোসর খ্যাত বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির জেলা সহ-সভাপতি ও বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের সঙ্গে। দুজনের মধ্যে একাধিক গোপন বৈঠক হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে একটি নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা সংস্থা।
দলীয় সূত্র জানায়, কেন্দ্র থেকে কঠোর নির্দেশ থাকায় আশার পক্ষের কেউ প্রকাশ্যে মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সাহস পাচ্ছে না। কিন্তু অন্তরালে তারা ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। গত কয়েক দিনে তাঁদের ঘনিষ্ঠ কর্মীরা মদনপুর, চিটাগাং রোড, বন্দর ও সদর এলাকায় গোপনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বুধবার (৫ নভেম্বর) দিনের বেলায় বন্দর এলাকার এক কাঠের স’মিল থেকে বেশ কিছু গাছের গুড়ি ও দাহ্য পদার্থ সংগ্রহ করেছে মাকসুদ-আশা গ্রুপের অনুসারীরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মধ্য রাতে তাঁরা মুখে মাস্ক ও হেলমেট পরে হঠাৎ সড়কে নেমে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাবে। এতে তাঁরা মাসুদুজ্জামানের বিরুদ্ধে “মনোনয়ন বাতিল করো”, “বিক্রি করা প্রার্থী চাই না” এমন উস্কানিমূলক স্লোগান দিতে পারে বলে গোয়েন্দারা ধারণা করছে।
সূত্রটি আরও জানায়, শুধু বিক্ষোভ নয়, তাঁরা রাতে চলাচল করা গাড়িতে আগুন ধরানো বা নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলারও প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে এলাকায় নাশকতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ ইউনিট ইতোমধ্যেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে এবং রাতে অতিরিক্ত টহল বাড়ানো হচ্ছে।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “মাসুদুজ্জামানের মনোনয়ন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে তাঁকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। নাশকতার কোনো ইঙ্গিত পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী জানান, যদি সত্যি হয় বিষয়টি বিএনপির জন্য হবে চরম আত্মঘাতী। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। এমন কোন কিছু হওয়ার সুযোগ যেন না পায় সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বন্দর এলাকায় মাকসুদ হোসেনের সঙ্গে কিছু বিএনপি নেতার অদ্ভুত সম্পর্ক টিকে আছে। এখন সেটি আবার সক্রিয় হচ্ছে নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে। আশা ও মাকসুদ উভয়েই রাজনীতিতে প্রভাব হারিয়ে প্রান্তিক অবস্থানে চলে গেছেন। তাঁদের এই আতঙ্কই হয়তো মাসুদুজ্জামান মাসুদের উত্থান ঠেকাতে মরিয়া করে তুলেছে।
এদিকে বিএনপির জেলা নেতারা বলছেন, দলের ভেতরে বিভাজন সৃষ্টি করে আন্দোলন ও নির্বাচনের গতি ভিন্ন খাতে নিতে দেওয়া হবে না। তাঁরা জানিয়েছেন, মাসুদুজ্জামান মাসুদ দলের প্রতীক ‘ধানের শীষ’-এর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন এবং যেকোনো ষড়যন্ত্রের জবাব গণঅংশগ্রহণের মাধ্যমেই দেবেন।
এটি কেবল একটি আসনের বিরোধ নয়, বরং ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় হারতে না চাওয়া গোষ্ঠীগুলোর সংঘাত। মাসুদুজ্জামানের জনপ্রিয়তা ও অর্থনৈতিক শক্তি এখন তাঁকে এই আসনের বিএনপির মূলধারায় সবচেয়ে প্রভাবশালী অবস্থানে নিয়ে গেছে, যা পুরনো রাজনীতিকদের আতঙ্কে ফেলেছে।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি নির্বাচনীভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহর ও বন্দরের ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় যেকোনো সহিংসতা বা নাশকতা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “যে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে মাসুদুজ্জামান মাসুদ নিজে বলেন, “আমি দলের প্রতীক ‘ধানের শীষ’-এর প্রার্থী হিসেবে জনগণের কাছে যাচ্ছি। বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। ষড়যন্ত্রের ভয় আমি করি না। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানে কারা আন্দোলনের মাঠে ছিল আর কারা শুধু ক্ষমতার লোভে ষড়যন্ত্র করে।”
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।















