ঢাকা ০১:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তামাকের প্রভাবে দিনে ৩৫৬ জনের মৃত্যু

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৬:৩২:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৪০ জন পড়েছেন
দেশে গড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৩৫ মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ তামাক। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হয় ৩৫৬ জনের। প্রতি দিন এতো মানুষের মৃত্যু হলেও এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বরং ভীতি রয়েছে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারানোর।

বুধবার (২৭ আগস্ট) রাজধানী ধানমন্ডির ডাম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়।গণমাধ্যমের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ‘স্বাস্থ্য সেক্টর ও ঢাকা আহছানিয়া মিশন’। সভার আলোচ্য বিষয় ছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা’র এফসিটিসি’র বাস্তবায়ন ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস।

এতে সভাপতিত্ব করেন, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের সহ-সভাপতি ডা. মোহাম্মদ খলিলউল্লাহ ও মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার সাবেক ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক।

সভায় জানানো হয়, বিশ্বে প্রতিবছর তামাকের কারণে ৭০ লাখের বেশি মানুষ অকালে প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ১৬ লাখ মানুষ প্রাণ হারায় পরোক্ষ ধূমপানের কারণে। প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টি সাথেই তামাক জড়িত।মূল প্রবন্ধে ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত খসড়া সংশোধনী থেকে ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সেগুলো হলো— অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব ধরনের পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা। তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধে বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা। তামাক কম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশু-কিশোর ও তরুণদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। তামাকপণ্যের সব ধরনের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা হলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে।

সভায় বলা হয়,  মানুষ হত্যাকারী তামাক ব্যবসায়ীদের মতামত জনস্বাস্থ্য রক্ষাকারী নীতিতে কোন ভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয়। সর্বশেষ উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে তামাক কোম্পানীর  যে মতামত গ্রহণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। আন্তর্জাতিক আইনের (এফসিটিসি’র ৫.৩) সুষ্পস্ট লংঘন হয়েছে।

সভায় কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ বলেন, ‘আইন করে সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। ঘরে থেকে সন্তানদের শিক্ষা দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে আমরা ধূমপান মুক্ত একটা সমাজের কথা বলতে পারি। এ জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচনে প্রত্যোকটা রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনের ইশতেহারে এই বিষয়টি যুক্ত করতে হবে। এছাড়া তামাক চাষিদের আইনের চাপে না ফেলে ধান চাষের বিষয়ে উত্সাহিত করা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’

সভায় বলা হয়, বাংলাদেশে তামাক কম্পানির হস্তক্ষেপ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় তামাক কম্পানির সাথে কোনও ধরনের বৈঠক না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এতে আরো বলা হয়, দেশে তামাক তমাতে হলে প্রথমে চাহিদা কমাতে হবে। এরপর সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। যে দেশ চাহিদা ও যোগান নিয়ন্ত্রণের জন্য এফসিটিসিতে প্রস্তাবিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারে সে দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণের অগ্রগতি ততো ভালো।

মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন,  ঢাকা আহছানিয়া মিশনের নিবার্হী কমিটি’র সদস্য অধ্যাপক ডা. শহিদুল আলম, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এম এম বাদশাহ প্রমুখ।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

তামাকের প্রভাবে দিনে ৩৫৬ জনের মৃত্যু

আপডেট সময় : ০৬:৩২:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
দেশে গড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৩৫ মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ তামাক। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হয় ৩৫৬ জনের। প্রতি দিন এতো মানুষের মৃত্যু হলেও এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বরং ভীতি রয়েছে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারানোর।

বুধবার (২৭ আগস্ট) রাজধানী ধানমন্ডির ডাম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়।গণমাধ্যমের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ‘স্বাস্থ্য সেক্টর ও ঢাকা আহছানিয়া মিশন’। সভার আলোচ্য বিষয় ছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা’র এফসিটিসি’র বাস্তবায়ন ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস।

এতে সভাপতিত্ব করেন, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের সহ-সভাপতি ডা. মোহাম্মদ খলিলউল্লাহ ও মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার সাবেক ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক।

সভায় জানানো হয়, বিশ্বে প্রতিবছর তামাকের কারণে ৭০ লাখের বেশি মানুষ অকালে প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ১৬ লাখ মানুষ প্রাণ হারায় পরোক্ষ ধূমপানের কারণে। প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টি সাথেই তামাক জড়িত।মূল প্রবন্ধে ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত খসড়া সংশোধনী থেকে ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সেগুলো হলো— অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব ধরনের পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা। তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধে বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা। তামাক কম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশু-কিশোর ও তরুণদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। তামাকপণ্যের সব ধরনের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা হলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে।

সভায় বলা হয়,  মানুষ হত্যাকারী তামাক ব্যবসায়ীদের মতামত জনস্বাস্থ্য রক্ষাকারী নীতিতে কোন ভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয়। সর্বশেষ উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে তামাক কোম্পানীর  যে মতামত গ্রহণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। আন্তর্জাতিক আইনের (এফসিটিসি’র ৫.৩) সুষ্পস্ট লংঘন হয়েছে।

সভায় কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ বলেন, ‘আইন করে সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। ঘরে থেকে সন্তানদের শিক্ষা দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে আমরা ধূমপান মুক্ত একটা সমাজের কথা বলতে পারি। এ জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচনে প্রত্যোকটা রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনের ইশতেহারে এই বিষয়টি যুক্ত করতে হবে। এছাড়া তামাক চাষিদের আইনের চাপে না ফেলে ধান চাষের বিষয়ে উত্সাহিত করা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’

সভায় বলা হয়, বাংলাদেশে তামাক কম্পানির হস্তক্ষেপ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় তামাক কম্পানির সাথে কোনও ধরনের বৈঠক না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এতে আরো বলা হয়, দেশে তামাক তমাতে হলে প্রথমে চাহিদা কমাতে হবে। এরপর সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। যে দেশ চাহিদা ও যোগান নিয়ন্ত্রণের জন্য এফসিটিসিতে প্রস্তাবিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারে সে দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণের অগ্রগতি ততো ভালো।

মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন,  ঢাকা আহছানিয়া মিশনের নিবার্হী কমিটি’র সদস্য অধ্যাপক ডা. শহিদুল আলম, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এম এম বাদশাহ প্রমুখ।