ঢাকা ১০:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৩০০ কোটি টাকার কাজ ফেলে ঠিকাদার লাপাত্তা, জনদুর্ভোগ চরমে

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৭:০৬:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৫০ জন পড়েছেন

দেলদুয়ার-লাউহাটী-সাটুরিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার কাজ অসমাপ্ত রেখে পালিয়ে গেছেন ঠিকাদার। মাঝপথে নির্মাণ কাজ বন্ধ হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

জানা গেছে, সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) তত্ত্বাবধানে টাঙ্গাইলের ২৪.৬৫০ কিলোমিটার অংশে আঞ্চলিক মহাসড়কের মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণের আওতায় প্রেভমেন্ট ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ আইসিসিএল, র্যাব আরসি ও এনডিই নামের ৩টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজ পায়।

২০২৪ সালের ৩০ জুন ৫টি প্যাকেজের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই নির্মাণ কাজ স্থবির হয়ে পড়ে।

জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেলদুয়ার উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট বিভাগকে কাজ চলমান রাখার তাগিদ দিলে ধীরগতিতে নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তবে তা বেশিদিন গড়ায়নি।

চলতি বছরের জুন থেকেই ঠিকাদার ত্রয় লাপাত্তা। বর্তমানে নির্মাণ কাজের সব প্রক্রিয়া একেবারেই বন্ধ রয়েছে। ফলে অসমাপ্ত অংশজুড়েই খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলে খুব সমস্যা হচ্ছে। বড় বড় গর্ত কাদা-জল মাড়িয়ে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এ সড়কে যাত্রীবাহী বড় বাস আপাতত চলাচল না করলেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মালামাল বহনকারী ভারি যানবাহনের চলাচল রয়েছে।

টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলার বিশাল জনপদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়ক। নির্মাণ কাজ মাঝপথে বন্ধ হওয়ায় এ অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে যোগাযোগে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

মনির হোসেন নামে একজন ট্রাকচালক বলেন, মূল সড়কের পাথর উঠে গিয়ে এমন গর্তের সৃষ্টি হয়েছে যে গাড়ি চালানোই দায়। গর্তে পড়ে চাকা আটকে যাচ্ছেযন্ত্রাংশ বিকল হয়ে বহনকৃত মালামাল নিয়ে দিনের পর দিন রাস্তায় পড়ে থাকতে হচ্ছে। জানমালের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে আমরা এ রাস্তায় চলাচল করছি

রিকশাচালক বসির উদ্দিন বলেনসড়কের এমন অবস্থা হয়েছে যেঅল্প বৃষ্টি হলেই আর যাওয়ার উপায় নেই। প্রতিদিনই বিকল হওয়া যন্ত্রাংশ ঠিক করতে গ্যারেজে যেতে হচ্ছে। সারা দিনে যা আয় করছি তা গ্যারেজে মেরামত খরচেই চলে যাচ্ছে। পরিবার নিয়ে আমাদের মানবতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। উন্নয়নের নামে ভোগান্তির শুরু হয়েছে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আতিকুর রহমান আতকি বলেনফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ফ্যাসিস্ট দোসর ঠিকাদার নিযুক্ত হয়েছিল। শুধু এ অঞ্চলে নয়সারা দেশেই একই অবস্থা বিরাজমান ছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের মদতপুষ্ট ঠিকাদার কাজটি এমন অবস্থায় ফেলে রেখে গেছে যে, এ অঞ্চলের মানুষজন ও যানবাহন চলাচলে সীমাহীন ভোগান্তি হচ্ছে। শুধু এ অঞ্চলের জন্য নয়সারা দেশের মানুষই এ সড়কের উপকারভোগী হবেন। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে। যানবাহনের চাপ কমবে মহাসড়কের উপরও। বর্তমানে জনদুর্ভোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত ঠিকাদার নিযুক্ত করে অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে এ সড়ক চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল প্রজেক্ট ম্যানেজার আব্দুল মান্নান বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে কোনো বিল পাচ্ছি না। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে একাধিকবার দেন-দরবার করেও বিল ছাড় করানো সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় কাজের গতি সচল রাখা যায়নি। রাস্তার পাশের স্থাপনাগুলো সরিয়ে না দেওয়ায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়নি। নানা প্রতিকূলতায় বন্ধ হয়ে গেছে।

সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (সড়ক উপবিভাগ মির্জাপুর) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই কাজের গতি স্তিমিত হয়ে পরে। এখন কাজ একেবারেই বন্ধ রয়েছে। বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও ঠিকাদার কাজ চালু না করায় এবং তাদের ফোনে না পাওয়ায় আইসিসিএল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে পুনঃদরপত্র আহবানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত করে নির্মাণ কাজ চালু করা হয়েছে।

দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তফা আব্দুল্লাহ্ আল নূর বলেন, চলাচলে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সড়ক বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। যতটুকু জানতে পেরেছি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ ফেলে পালিয়েছেন। সড়ক বিভাগ নতুন করে দরপত্র আহবানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত করে কাজ চলমান রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

৩০০ কোটি টাকার কাজ ফেলে ঠিকাদার লাপাত্তা, জনদুর্ভোগ চরমে

আপডেট সময় : ০৭:০৬:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫

দেলদুয়ার-লাউহাটী-সাটুরিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার কাজ অসমাপ্ত রেখে পালিয়ে গেছেন ঠিকাদার। মাঝপথে নির্মাণ কাজ বন্ধ হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

জানা গেছে, সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) তত্ত্বাবধানে টাঙ্গাইলের ২৪.৬৫০ কিলোমিটার অংশে আঞ্চলিক মহাসড়কের মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণের আওতায় প্রেভমেন্ট ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ আইসিসিএল, র্যাব আরসি ও এনডিই নামের ৩টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজ পায়।

২০২৪ সালের ৩০ জুন ৫টি প্যাকেজের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই নির্মাণ কাজ স্থবির হয়ে পড়ে।

জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেলদুয়ার উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট বিভাগকে কাজ চলমান রাখার তাগিদ দিলে ধীরগতিতে নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তবে তা বেশিদিন গড়ায়নি।

চলতি বছরের জুন থেকেই ঠিকাদার ত্রয় লাপাত্তা। বর্তমানে নির্মাণ কাজের সব প্রক্রিয়া একেবারেই বন্ধ রয়েছে। ফলে অসমাপ্ত অংশজুড়েই খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলে খুব সমস্যা হচ্ছে। বড় বড় গর্ত কাদা-জল মাড়িয়ে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এ সড়কে যাত্রীবাহী বড় বাস আপাতত চলাচল না করলেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মালামাল বহনকারী ভারি যানবাহনের চলাচল রয়েছে।

টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলার বিশাল জনপদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়ক। নির্মাণ কাজ মাঝপথে বন্ধ হওয়ায় এ অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে যোগাযোগে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

মনির হোসেন নামে একজন ট্রাকচালক বলেন, মূল সড়কের পাথর উঠে গিয়ে এমন গর্তের সৃষ্টি হয়েছে যে গাড়ি চালানোই দায়। গর্তে পড়ে চাকা আটকে যাচ্ছেযন্ত্রাংশ বিকল হয়ে বহনকৃত মালামাল নিয়ে দিনের পর দিন রাস্তায় পড়ে থাকতে হচ্ছে। জানমালের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে আমরা এ রাস্তায় চলাচল করছি

রিকশাচালক বসির উদ্দিন বলেনসড়কের এমন অবস্থা হয়েছে যেঅল্প বৃষ্টি হলেই আর যাওয়ার উপায় নেই। প্রতিদিনই বিকল হওয়া যন্ত্রাংশ ঠিক করতে গ্যারেজে যেতে হচ্ছে। সারা দিনে যা আয় করছি তা গ্যারেজে মেরামত খরচেই চলে যাচ্ছে। পরিবার নিয়ে আমাদের মানবতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। উন্নয়নের নামে ভোগান্তির শুরু হয়েছে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আতিকুর রহমান আতকি বলেনফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ফ্যাসিস্ট দোসর ঠিকাদার নিযুক্ত হয়েছিল। শুধু এ অঞ্চলে নয়সারা দেশেই একই অবস্থা বিরাজমান ছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের মদতপুষ্ট ঠিকাদার কাজটি এমন অবস্থায় ফেলে রেখে গেছে যে, এ অঞ্চলের মানুষজন ও যানবাহন চলাচলে সীমাহীন ভোগান্তি হচ্ছে। শুধু এ অঞ্চলের জন্য নয়সারা দেশের মানুষই এ সড়কের উপকারভোগী হবেন। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে। যানবাহনের চাপ কমবে মহাসড়কের উপরও। বর্তমানে জনদুর্ভোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত ঠিকাদার নিযুক্ত করে অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে এ সড়ক চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল প্রজেক্ট ম্যানেজার আব্দুল মান্নান বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে কোনো বিল পাচ্ছি না। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে একাধিকবার দেন-দরবার করেও বিল ছাড় করানো সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় কাজের গতি সচল রাখা যায়নি। রাস্তার পাশের স্থাপনাগুলো সরিয়ে না দেওয়ায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়নি। নানা প্রতিকূলতায় বন্ধ হয়ে গেছে।

সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (সড়ক উপবিভাগ মির্জাপুর) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই কাজের গতি স্তিমিত হয়ে পরে। এখন কাজ একেবারেই বন্ধ রয়েছে। বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও ঠিকাদার কাজ চালু না করায় এবং তাদের ফোনে না পাওয়ায় আইসিসিএল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে পুনঃদরপত্র আহবানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত করে নির্মাণ কাজ চালু করা হয়েছে।

দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তফা আব্দুল্লাহ্ আল নূর বলেন, চলাচলে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সড়ক বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। যতটুকু জানতে পেরেছি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ ফেলে পালিয়েছেন। সড়ক বিভাগ নতুন করে দরপত্র আহবানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত করে কাজ চলমান রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।