ঢাকা ০৫:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যেখানে সবচেয়ে ভালো দাম পাবে সেখান থেকেই তেল কিনবে ভারত’

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৫:০২:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৩৬ জন পড়েছেন
১৪০ কোটি মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য যেখানে সেরা চুক্তি পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই তেল কিনবে ভারত। এমন মন্তব্য করেছেন, রাশিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার। তার এই বক্তব্যটি এসেছে এমন সময়ে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য ২৫ শতাংশের শাস্তিমূলক শুল্ক।

রবিবার মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো রাশিয়ার ওপর আক্রমণাত্মক অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে তাকে ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে বাধ্য করা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত সস্তা রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানি বাড়িয়েছে।

রাশিয়া থেকে ২০২১ সালে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির মাত্র ছিল ৩ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ৩৫-৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে এবং একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনাও প্রভাবিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে, ভারতের রাশিয়ান তেল ক্রয় ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থ যোগাচ্ছে। তবে দিল্লি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রবিবার রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা টিএএসএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত কুমার বলেন, ‘ভারতের বাণিজ্য বাজারভিত্তিক এবং দেশের জনগণের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের অগ্রাধিকার।’ তিনি ট্রাম্পের আরোপিত দ্বিতীয় ধাপের শুল্ককে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অযথার্থ’ বলে মন্তব্য করেন।

কুমারের এই মন্তব্য আসার কয়েক ঘণ্টা আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানির পক্ষে জোরালো সাফাই দেন। তিনি বলেন, ‘এটা বেশ মজার যে, ব্যবসা বান্ধব মার্কিন প্রশাসনের লোকেরা অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবসা করার অভিযোগ তোলে।’

তিনি আরো উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর (যা রাশিয়ান তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক) বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর (যারা এখনো রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাপক বাণিজ্য করছে) একই ধরনের শুল্ক আরোপ করেনি। জয়শঙ্কর জোর দিয়ে বলেন, ভারত তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে নতি স্বীকার করে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমাবে না।

যদিও ভারত ইউক্রেনের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে, তবুও রাশিয়া ভারতের অন্যতম প্রধান মিত্র।

নয়াদিল্লি বারবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ‘আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান’ আহ্বান জানিয়েছে, তবে পশ্চিমাদের চাপ থাকা সত্ত্বেও রাশিয়াকে প্রকাশ্যে নিন্দা করা থেকে বিরত থেকেছে।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২৪ সালে ইউক্রেন সফর করেছিলেন এবং ভারত জানিয়েছে, ‘যতভাবে সম্ভব দ্রুত শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে প্রস্তুত।’  রবিবার ভারতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওলেক্সান্দ্র পোলিশচুক স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শিগগিরই ভারত সফর করতে পারেন, যদিও তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। এ বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ভারত সফর করতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

যেখানে সবচেয়ে ভালো দাম পাবে সেখান থেকেই তেল কিনবে ভারত’

আপডেট সময় : ০৫:০২:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫
১৪০ কোটি মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য যেখানে সেরা চুক্তি পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই তেল কিনবে ভারত। এমন মন্তব্য করেছেন, রাশিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার। তার এই বক্তব্যটি এসেছে এমন সময়ে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য ২৫ শতাংশের শাস্তিমূলক শুল্ক।

রবিবার মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো রাশিয়ার ওপর আক্রমণাত্মক অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে তাকে ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে বাধ্য করা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত সস্তা রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানি বাড়িয়েছে।

রাশিয়া থেকে ২০২১ সালে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির মাত্র ছিল ৩ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ৩৫-৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে এবং একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনাও প্রভাবিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে, ভারতের রাশিয়ান তেল ক্রয় ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থ যোগাচ্ছে। তবে দিল্লি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রবিবার রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা টিএএসএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত কুমার বলেন, ‘ভারতের বাণিজ্য বাজারভিত্তিক এবং দেশের জনগণের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের অগ্রাধিকার।’ তিনি ট্রাম্পের আরোপিত দ্বিতীয় ধাপের শুল্ককে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অযথার্থ’ বলে মন্তব্য করেন।

কুমারের এই মন্তব্য আসার কয়েক ঘণ্টা আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানির পক্ষে জোরালো সাফাই দেন। তিনি বলেন, ‘এটা বেশ মজার যে, ব্যবসা বান্ধব মার্কিন প্রশাসনের লোকেরা অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবসা করার অভিযোগ তোলে।’

তিনি আরো উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর (যা রাশিয়ান তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক) বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর (যারা এখনো রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাপক বাণিজ্য করছে) একই ধরনের শুল্ক আরোপ করেনি। জয়শঙ্কর জোর দিয়ে বলেন, ভারত তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে নতি স্বীকার করে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমাবে না।

যদিও ভারত ইউক্রেনের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে, তবুও রাশিয়া ভারতের অন্যতম প্রধান মিত্র।

নয়াদিল্লি বারবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ‘আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান’ আহ্বান জানিয়েছে, তবে পশ্চিমাদের চাপ থাকা সত্ত্বেও রাশিয়াকে প্রকাশ্যে নিন্দা করা থেকে বিরত থেকেছে।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২৪ সালে ইউক্রেন সফর করেছিলেন এবং ভারত জানিয়েছে, ‘যতভাবে সম্ভব দ্রুত শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে প্রস্তুত।’  রবিবার ভারতে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওলেক্সান্দ্র পোলিশচুক স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শিগগিরই ভারত সফর করতে পারেন, যদিও তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। এ বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ভারত সফর করতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে।