ভারতের চন্দ্রযান-৩ মিশন ‘সাজানো নাটক’
ভারতের চন্দ্রযান-৩ মিশন ‘সাজানো নাটক’

- আপডেট সময় : ১০:৫৭:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
- / ৩ জন পড়েছেন
ভারতের বহুল প্রচারিত চন্দ্রযান-৩ চন্দ্রাভিযান নিয়ে বিস্ফোরক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘ফেক নিউজ ওয়াচডগ’। সম্প্রতি প্রকাশিত ৬৫ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্রে দাবি করা হয়েছে, এই মিশনটি মূলত একটি মিডিয়া শো ছিল—বৈজ্ঞানিক অর্জন নয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, চাঁদে অবতরণের সময় সরাসরি সম্প্রচারিত দৃশ্যগুলো ছিল কম্পিউটার-নির্মিত গ্রাফিক্সের সাহায্যে তৈরি। চন্দ্রযান-৩’র অবতরণ ও নামার দৃশ্য একটি সাজানো পরিবেশে চিত্রায়িত ও উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
জাতীয় টেলিভিশনে দেখানো কন্ট্রোল সেন্টারের দৃশ্যকেও ‘পরিকল্পিত ও অভিনয়নির্ভর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। মূলত দর্শকদের একটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ মহাকাশ অভিযানের ধারণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি এটি।
প্রতিবেদনটি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো’র স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় এবং চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের দাবিকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়। ওয়াচডগ সংস্থার দাবি, চন্দ্রযান-৩’র প্রকৃত অবতরণ স্থান ঘোষিত স্থান থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দূরে ছিল।
চন্দ্রযান-৩ অভিযানে কোনো বৈজ্ঞানিক উপাত্ত বা রোভার-চালনার ভিডিও উপস্থাপন করা হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। ল্যান্ডারের নেভিগেশন সিস্টেমের ত্রুটি ও যান্ত্রিক সীমাবদ্ধতার কারণে রোভার তার কার্যকারিতা অনুযায়ী কাজ করতে পারেনি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশেষ করে চীনের কিছু আন্তর্জাতিক মহাকাশ বিশেষজ্ঞ ইসরো’র বৈজ্ঞানিক দাবিগুলো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সরকারি ও সরকারঘেঁষা মিডিয়া এই মিশনকে জাতীয় গর্বের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরলেও যাচাইযোগ্য তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
চন্দ্রযান-৩ মিশনকে ভারতের বৃহত্তর সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা হিসেবে দাবি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ। শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)’র বিরুদ্ধে ইসরো’র অগ্রগতিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার এবং পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সামরিকভাবে কাজে লাগানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে।
২০১৯ সালের ‘মিশন শক্তি’ উপগ্রহ ধ্বংসকারী পরীক্ষার উল্লেখসহ প্রতিরক্ষা মহাকাশ সংস্থার মতো সামরিক প্রতিষ্ঠান গঠনের উদাহরণ দিয়ে ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচিকে সামরিকীকরণের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ভারতের উপগ্রহ কর্মসূচি নিয়েও আলোকপাত করে বলা হয়েছে, ভারতের ৫৬টি উপগ্রহের মধ্যে ১০টি উপগ্রহ সামরিক পর্যবেক্ষণ, নেভিগেশন এবং ‘অপারেশন সিন্দুর’র মতো অভিযানে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সরকারের ‘স্পেস ভিশন ২০৪৭’ এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পকে জনস্বার্থের চেয়ে ‘প্রচারমূলক জাতীয়তাবাদ’-এর হাতিয়ার বলে অভিহিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট ৮৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে—যা পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় ৯ গুণ বেশি। তবুও দেশটিতে এখনো ৩০ কোটিরও বেশি ভারতীয় নাগরিক নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশনের মতো মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত, প্রতিবেদনে এই অসামঞ্জস্যের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনের শেষভাগে ভারতের গণমাধ্যমকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে জাতীয় বয়ান নিয়ন্ত্রণ ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ করা হয়েছে—যা আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে উল্টো প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে।
ফেক নিউজ ওয়াচডগের দাবি, ভারতের মহাকাশ মিশনগুলো—বিশেষ করে চন্দ্রযান-৩ প্রধানত রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার, যা দেশটির মহাকাশ কর্মসূচির নৈতিকতা, স্বচ্ছতা ও প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।
প্রতিবেদনটির সারমর্ম হলো—এই মিশনটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের চেয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে, যা আঞ্চলিক শক্তি প্রদর্শন এবং জাতীয় ভাবমূর্তি গঠনের কৌশলমাত্র।