পাঁচ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কেমন ছিল পুতিনের বৈঠকগুলো
পাঁচ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কেমন ছিল পুতিনের বৈঠকগুলো

- আপডেট সময় : ০৪:৪৫:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
- / ১ জন পড়েছেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আজ শুক্রবার (১৫ আগস্ট) আলাস্কায় বৈঠক করবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত সাত বছরের মধ্যে এটি হবে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। যদিও এ পর্যন্ত পূর্ববর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে ৪৮ বার বৈঠকে মিলিত হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
রাশিয়ার নেতা হিসেবে দীর্ঘ ২৫ বছরেরও বেশি সময়ে পুতিন পাঁচজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তারা হলেন—বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা, ট্রাম্প ও জো বাইডেন।
এখানে অতীতের সেই বৈঠকগুলোর সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরা হলো—
জুন ২০০০ : পুতিন-ক্লিনটন
আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে পুতিন মস্কোতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে আতিথ্য দিয়েছিলেন। তখন রুশ নেতা ক্লিনটনকে ক্রেমলিন সফরে নিয়ে যান এবং সেখানে একটি রুশ জ্যাজ দল তাদের জন্য পরিবেশনা করেন
দুটি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি অনুমোদনে রাশিয়ার সিদ্ধান্তের জন্য ক্লিনটন পুতিনকে অভিনন্দন জানান। পুতিনের পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের কথা উল্লেখ করে ক্লিনটন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়েলৎসিন রাশিয়াকে স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করেছিলেন। প্রসিডেন্ট পুতিনের অধীনে রাশিয়াকে সমৃদ্ধশালী ও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে স্বাধীনতা ও আইনের শাসন রক্ষারও সুযোগ রয়েছে।’
পুতিন তার পক্ষ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার ‘অন্যতম প্রধান অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ওই সময় তিনি বলেছেন, মস্কো আর কখনো ওয়াশিংটনের সঙ্গে সংঘর্ষ চাইবে না। আমরা সহযোগিতার পক্ষে। আমরা উদ্ভূত সমস্যাগুলোর বিষয়ে একমত হওয়ার পক্ষে।
২০০০ সালে পুতিন ও ক্লিনটনের মধ্যে চারবার বৈঠক হয়। এর মধ্যে মস্কোর বৈঠকটি ছিল প্রথম। বাকিগুলো বহুপাক্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে এবং পরের বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্লিনটনের পদত্যাগের আগে।
নভেম্বর ২০০১ : পুতিন-বুশ
ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের (নাইন-ইলেভেন) হামলার পর পুতিনই প্রথম বিশ্বনেতা, যিনি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশকে ফোন করেছিলেন এবং সমর্থন জানিয়েছিলেন। দুই মাস পর বুশ টেক্সাসের ক্রফোর্ডে তার খামারে পুতিনকে আতিথ্য দিয়েছিলেন। এ সময় তাদের সম্পর্ক নিয়ে আশা জেগেছিল।
বুশ বলেন, ‘যখন আমি হাই স্কুলে ছিলাম, তখন রাশিয়া ছিল শত্রু। এখন হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা রাশিয়াকে বন্ধু হিসেবে জানতে পারে; আমরা একসঙ্গে কাজ করছি পুরনো বন্ধন ভেঙে যাতে সহযোগিতা ও বিশ্বাসের একটি নতুন চেতনা প্রতিষ্ঠা করতে পারি এবং আমরা একসঙ্গে কাজ করে বিশ্বকে আরও শান্তিপূর্ণ করে তুলতে পারি।’
তবে ২০০২ সালের নভেম্বরে যখন বুশ-পুতিন রাশিয়ায় মিলিত হন, তখন ন্যাটো সম্প্রসারণে মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টার জন্য তাদের সম্পর্কের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল।
জুলাই ২০০৭ : পুতিন-বুশ
২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আক্রমণ রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও বুশ পুতিনের সঙ্গে উষ্ণ ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তিনি পুতিনকে মেইনের কেনেবাঙ্কপোর্টে নিজ বাবা-মায়ের বাড়িতে আতিথ্য দিয়েছিলেন।
এ সময় উভয়েই স্বীকার করেছেন, কিছুক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন, তবে তারা একে অপরকে স্বচ্ছতার জন্য কৃতিত্ব দিয়েছিলেন।
এপ্রিল ২০০৮ : পুতিন-বুশ
প্রেসিডেন্ট হিসেবে বুশ ও পুতিনের মধ্যে শেষ বৈঠকটি রাশিয়ার সোচিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ বৈঠকে গুরুত্ব পেয়েছিল ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্প্রসারণে মার্কিন পরিকল্পনার ওপর, যার বিরোধিতা করছিল রাশিয়া। এ বৈঠকে কোনো অগ্রগতি হয়নি, দুই নেতাই দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ ছিল। বুশ পুতিনের সঙ্গে মোট ২৮ বার দেখা করেছিলেন। তিনি কেবল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে এর চেয়ে বেশি সাক্ষাৎ করেছিলেন।
জুলাই ২০০৯ : পুতিন-ওবামা
এ সময় পুতিন ছিলেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আর তার মিত্র দিমিত্রি মেদভেদেভ হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। মস্কো সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ২০০৮ সালে জর্জিয়ায় রাশিয়ার আক্রমণ নিয়ে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য বেড়ে গিয়েছিল। এ আক্রমণের বিরোধিতা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তখন ওবামা পুতিনকে বলেন, ‘আমরা হয়ত সবকিছুতে একমত না-ও হতে পারি। কিন্তু আমি মনে করি, আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আলোচনা করতে পারি, যা আমেরিকা ও রাশিয়ার উভয় দেশের জনগণের জন্যই ভালো হবে।’
জুন ২০১৩ : পুতিন-ওবামা
উত্তর আয়ারল্যান্ডে জি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ওবামা পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ১৯৯৮ সালে রাশিয়াকে এই জোটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল এবং ২০১৪ সালে পুতিন ক্রিমিয়া দখল করে নিলে দেশটিকে বহিষ্কার করা হয়। তাদের একে অপরের প্রতি হতাশা ছবিতেও স্পষ্ট ধরা পড়েছিল, যা খবরের শিরোনামও হয়েছিল।
নভেম্বর ২০১৬ : পুতিন-ওবামা
পেরুতে অনুষ্ঠিত এপেক শীর্ষ সম্মেলনে ওবামা ও পুতিন নবম এবং শেষবারের মতো সাক্ষাৎ করেন, তখন তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
এপেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সেসময় পুতিন ও ওবামা মাত্র চার মিনিট কথা বলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার রাশিয়ান প্রতিপক্ষকে মিনস্ক চুক্তি মেনে চলতে বলেন, যা ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য করা হয়েছিল।
জুলাই ২০১৮ : পুতিন-ট্রাম্প
২০১৬ সালে প্রথবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের দেড় বছর পর হেলসিঙ্কিতে পুতিনের সাক্ষাৎ করেছিলেন ট্রাম্প। দুজনে একান্তে বৈঠক করেছিলেন, শুধু দোভাষীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আশাবাদী হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন।
এ সময় পুতিন বলেন, ‘স্নায়ু যুদ্ধ অতীতের কথা।‘ পরিবেশগত সংকট থেকে সন্ত্রাসবাদ পর্যন্ত বিশ্বের জন্য চেলেঞ্জগুলো নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করতে পার, তবেই এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারব। আশা করি, আমরা আমাদের আমেরিকান অংশীদারদের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারব।’
কিন্তু এরপর ট্রাম্পই সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে এসেছিলেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সিদ্ধান্তে পৌঁছে মস্কো যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে। এ বিষয়ে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এটি কেন হবে? তার কোনো কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি না।’
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে পুতিনের সঙ্গে মোট ছয়বার দেখা করেছিলেন
জুন ২০২১ : পুতিন-বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জেনেভায়। বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত অবনতির পর ওই বছরের মার্চে বাইডেন পুতিনকে একজন ‘খুনি’ হিসেবে বর্ণনা করার পর সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছায়, যার ফলে রাশিয়া ওয়াশিংটন থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয়। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও একই পদক্ষেপ নেয়।
জেনেভা বৈঠক তাদের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে কিছুটা সাহায্য করেছে। উভয় দেশই রাষ্ট্রদূত পুনর্নিয়োগে সম্মত হয়। অন্যদিকে, রাশিয়া ইউক্রেনের সীমান্তে তাদের সৈন্য উপস্থিতি বাড়াচ্ছিল, যা পুতিন-বাইডেন বৈঠকে চাপের একটি মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।