মডেল মাসুদের গণজোয়ার,নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নতুন সমীকরণ!

- আপডেট সময় : ০১:৩৫:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
- / ২৬ জন পড়েছেন
নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে নতুন রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি করেছেন সমাজসেবক, ক্রীড়া সংগঠক ও সফল রপ্তানিমুখী শিল্প উদ্যোক্তা মাসুদুজ্জামান মাসুদ। বহু বছর ধরে সমাজসেবায় নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত রেখে নারায়ণগঞ্জবাসীর আস্থা অর্জনকারী এই মানবিক ব্যক্তিত্ব এখন রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। মডেল মাসুদের গণজোয়ারে শহরের অলিগলি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং রাজনৈতিক চত্বরে ছড়িয়ে পড়েছে আলোচনা।
চারবার জাতীয় রপ্তানীতে অসামান্য অবদানের জন্য সিআইপি (কমার্শিয়ালি ইমপোর্ট্যান্ট পারসন) সম্মাননায় ভূষিত এই শিল্প উদ্যোক্তা ব্যবসা, সমাজসেবা এবং ক্রীড়া সংগঠনের পাশাপাশি এবার মাঠের রাজনীতিতে সরাসরি নাম লিখিয়েছেন বলেই অনেকে দেখছেন তার সাম্প্রতিক কর্মকা-।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, রাস্তার দেয়াল, দোকানের সামনে, বিলবোর্ড কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া সবখানেই এখন একটাই আলোচনা, “সদর-বন্দরবাসীর নেতা হবেন মডেল মাসুদ।”
করোনার ভয়াবহতা যখন সমগ্র দেশকে স্থবির করে দিয়েছিল, তখন প্রথম লকডাউন হয়েছিল নারায়ণগঞ্জেই। অর্থনৈতিক চাকা থেমে গিয়েছিল, মানুষ পড়েছিল বিপদে। ঠিক তখনই মাসুদুজ্জামান মাসুদ হাজারো পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন খাদ্য, ওষুধ, নগদ অর্থ, অ্যাম্বুলেন্সসহ নানা সহায়তা নিয়ে। রাজনৈতিক কোন পদে না থেকেও নিজের অর্থেই করেছেন বিশাল আয়োজন। এই সংকটে দাঁড়িয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন “নারায়ণগঞ্জের সন্তানের প্রতীক”।
এরপর ২০২০ সালে তল্লা মসজিদ বিস্ফোরণে শহর কেঁপে উঠলে, নিহতদের পরিবারগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ান মাসুদ। শুধু সহানুভূতি নয়, তিনি দিয়েছেন টেকসই সহায়তা চাকরি, চিকিৎসা, পরিবার চালানোর জন্য আর্থিক অনুদান।
দীর্ঘদিন রাজনীতির বাইরে থেকে সমাজসেবার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া মাসুদ এখন জনগণের চাপে রাজনীতির মাঠে নামতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা যায়। শহরের জনগণ বিশ্বাস করে, তিনি জনপ্রতিনিধি হলে পরিবর্তন নিশ্চিত। এমন একজন স্বচ্ছ, বিতর্কহীন ব্যক্তির নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ-৫ এর ভাগ্য বদলাবে বলে আস্থা রাখতে চান নারায়ণগঞ্জ সদর-বন্দরের বিএনপির নেতা-কর্মী বা সাধারণ ভোটাররা।
তিনি নিজে অনেকদিন চুপচাপ থাকলেও, গত ১৪ জুন শহরের খানপুরে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশাল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। তার এই ঘোষণার পর থেকেই শহর ও বন্দরের রাজনীতিতে নড়েচড়ে বসেছে একাধিক পক্ষ।
মাসুদ সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, “নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ভালো হাসপাতাল নেই। বন্দরে সেতুর সমস্যা দীর্ঘদিনের। আধুনিকতার এই যুগে এখনো নৌকার উপর নির্ভরশীল বন্দরবাসী, যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। বন্দরবাসীর সেতুর সমস্যা দূর করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। শহরে যানজট, ট্রাফিক ও মাদক সমস্যা দীর্ঘদিনের। কিশোর গ্যাং নামে ছোট ছোট ছেলেদের নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা হত। তাদের সুন্দর জীবন উপহার দেয়া ও গ্যাং বন্ধের পরিকল্পনাও রয়েছে। সকল তর্ক-বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে আমরা সকলে মিলে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের জন্য কাজ করব, এটাই সকলের কাছে আহ্বান। জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগেও যেমন আমি আপনাদের পাশে ছিলাম, এখনও আছি আর ভবিষ্যতে তেমন-ই থাকবো ইনশাআল্লাহ।”
তার জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনায় অনেকেই ধারণা করছেন, বিএনপির মনোনয়ন পেলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে তিনি হবেন শক্তিশালী প্রার্থী। যদিও অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এখনো তাকে সহজ প্রতিপক্ষ হিসেবে নিচ্ছেন না। কিন্তু বিএনপির অনেক কর্মী-সমর্থক সরাসরি বলছেন, “যিনি দুঃসময়ে ছিলেন, সেই নেতৃত্বই আমরা চাই।”
উক্ত অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম, এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলনের পাশাপাশি সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও পেশাজীবী সংগঠনের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ অংশ নেন, এবং তাদের জন্য আয়োজন করা হয় মধ্যাহ্নভোজ।
রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পের প্রতিষ্ঠান মডেল ডি ক্যাপিটাল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিনি শুধু সফল নন, বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে একটি সামাজিক দায়িত্বও পালন করে চলেছেন। তিনি চেয়েছেন, ব্যবসার সাফল্য যেন সবার কল্যাণে আসে।
আন্দোলনের পর ব্যবসায়ী সমাজে যে ভাঙন সৃষ্টি হয়, সেই সঙ্কটে চেম্বার অব কমার্সের নেতৃত্ব নিয়ে সকল ব্যবসায়ীকে ঐক্যবদ্ধ করেন মাসুদ। বহু বছর ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকা সংগঠনটি পুনর্গঠন করে তিনি নেতৃত্ব দেন গণতান্ত্রিকভাবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চেম্বারের নির্বাচন আয়োজন করে নেতৃত্বে আনেন কর্মক্ষম ও জনপ্রিয় নতুন মুখ।
মাসুদের বড় পরিচয় আরেকটি। তিনি একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক। ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক হিসেবে তিনি দেশের ক্রীড়া জগতে সক্রিয়। স্থানীয় পর্যায়ে বহু টুর্নামেন্টের আয়োজন, খেলোয়াড়দের আর্থিক সহায়তা এবং ক্রীড়া অবকাঠামোর উন্নয়নে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সহযোগিতা করে চলেছেন।
একাধিক স্কুল, কলেজ, মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদের সাথে সম্পৃক্ত থাকা মাসুদ অসহায় শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে শিক্ষা উপকরণ পৌঁছে দিয়েছেন নিয়মিত। শহরের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার সহায়তায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে।
শনিবার (২৮ জুন) বন্দর উপজেলার হাবিবনগরে এক মাদরাসার হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি ‘মেইড ইন নারায়ণগঞ্জ’। বাইরের কোনো হাওলাতি নেতার প্রয়োজন নেই নারায়ণগঞ্জে। যাদের শিকড় এই মাটিতে, মৃত্যুর পর যারা এখানেই শায়িত হবেন, তারাই নারায়ণগঞ্জের নেতৃত্ব দেবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এখনও আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করিনি, ভাবছি, আলোচনা করছি। আর এতেই যদি কারও ঘুম হারাম হয়, তাহলে প্রচারণায় নামলে কী হবে ভেবে দেখুন।” তার এই মন্তব্যে দৃঢ়তা, সাহস আর বাস্তবিক রাজনৈতিক উপলব্ধির প্রকাশ ফুটে উঠেছে। গত তিনদিন ধরে এই সামাজিক অনুষ্ঠানটিকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু আমি এই এলাকারই সন্তান। আমি ‘মেইড ইন নারায়ণগঞ্জ’। আমার শিকড় এই মাটির অনেক গভীরে। সোজাসাপ্টা বলি—আপনারা চাইলেই আমাকে মাটি চাপা দিতে পারবেন না।”
তারেক রহমান ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কথা তুলে ধরে মাসুদ বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে একটি নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ গঠনে ঐকমত্য হয়েছে। এই আলোচনা দেশের গণতন্ত্র ও ভবিষ্যতের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।”
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, মাসুদ রাজনীতিতে এক ভরসার নাম। তিনি দাতা ছিলেন, আছেন, থাকবেন, এমনটাই বিশ্বাস সাধারণ ভোটারদেরও। তিনি কোনো গ্রুপিংয়ে যান না, দলীয় কোন্দলেও জড়ান না। একজন গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপি এবং তৃণমূল কর্মীরা তাকেই চাইছেন। নারায়ণগঞ্জের মানুষ চায় চাঁদাবাজি, মাদক, সন্ত্রাসমুক্ত একটি শহর। সেই পরিবর্তনের নেতৃত্বে মাসুদুজ্জামান মাসুদকে সামনে আনতে শুরু হয়েছে গণজোয়ার। মানুষ বলছে, “আমরা মুখ চাই না, কাজ চাই। মাসুদ কাজ করে দেখিয়েছেন, তাই তাকেই আমাদের দরকার।”
সদর- বন্দরে মডেল মাসুদে গণজোয়ার এখন আর কোনো স্লোগান নয়, এটি একটি চলমান বাস্তবতা। তার জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা এবং বিগত দিনের অবদান এখন প্রমাণ করছে, নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে নতুন নেতৃত্বের চাওয়া মানেই মডেল মাসুদ।