ঢাকা ০২:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সোনারগাঁয়ে সক্রিয় গিয়াস-রেজাউল, দুঃশ্চিন্তা মান্নানের

অর্ণব আল আমীন
  • আপডেট সময় : ১১:০৪:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • / ৮২ জন পড়েছেন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক সমীকরণ নতুন মোড় নিচ্ছে। এর ব্যতিক্রম নয় নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনও। এখানে বিএনপির ভেতরে ভেতরে জমে উঠেছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নানের একক প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এখন মাঠে সক্রিয় হয়েছেন আরও দুই প্রবীণ নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন এবং একসময়ের সংস্কারপন্থী নেতা অধ্যাপক রেজাউল করিম।
এই তিন নেতার মুখোমুখি অবস্থান সোনারগাঁ বিএনপিকে একটি জটিল, বিভক্ত এবং অনিশ্চিত অবস্থায় নিয়ে গেছে, যার প্রভাব পড়ছে স্থানীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে মনোনয়ন রাজনীতিতেও।
মামুন মাহমুদকে আহ্বায়ক ও মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়াকে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৩৩ সদস্যের নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে চলতি বছরের ২৪ মার্চ। সেই থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) ও নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) এই দুই আসনে নির্বাচনের জন্য বেশ প্রস্তুতি নিয়ে আটঘাট বেঁধে নেমেছেন। ঈদুল ফিতর কি ঈদুল আযহা, দুই ঈদেই শুভেচ্ছা বিনিময় করে সবার সাথে সখ্যতা গড়ার চেষ্টায় ছিলেন গিয়াস উদ্দিন। ঈদ পরবর্তীতে ঈদ-পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করে সোনারগাঁ বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন এই বিএনপি নেতা। সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময় সহ সভা-সমাবেশ করে চলেছেন তিনি।
তিনি দাবী করেন, নারায়ণগঞ্জের সাবেক সভাপতি থাকার কারণে তার সাথে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলার বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক আছে। তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমাকে বেশ ভালো ভাবেই চেনে। ২০০১ সালে শামীম ওসমানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামীতেও বিএনপিকে একটি আসন উপহার দিতে চাই।
মূলত কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন জানতে চাইলে তিনি জানান, “সব জায়গায়ই আমি কাজ করছি দলের জন্য। নির্বাচনে দল কাকে কোথায় মনোনয়ন দেবে, সেটা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ওপর নির্ভর করে। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের যেকোনো একটিতে যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয়, আমি সেখানেই নির্বাচন করব। কারণ নারায়ণগঞ্জবাসী আমাকে ভালোবাসে। আমি আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের পাশে ছিলাম, কখনো ছেড়ে যাইনি।”
উল্লেখ্য , মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ৮০ দশকে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সক্রীয় ছিলেন। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন ও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। এরশাদের পতনের পর ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে নির্বাচনের অল্প কিছুদিন আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দিয়ে বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য। ২০০১ অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
অন্যদিকে আছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আরেক সাবেক সভাপতি , নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের চারবারের সংসদ সদস্য ও ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বিএনপির প্রবীণ নেতা অধ্যাপক মো: রেজাউল করিম। যিনি ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের পর ছিলেন একজন সংস্কারপন্থী। তার নাম সারাদেশেই পরিচিত একজন সংস্কারপন্থী হিসেবেই। গত ১৭ বছরে তার রাজনৈতিক কোন কর্মকান্ড দেখা যায়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতা-কর্মীদের। এমনকি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার গত ১৭ বছরের শাসনামলে তার নামে কোন মামলাও হয়নি বা মামলা খাওয়া কোন নেতা-কর্মীর খোঁজ খবরও তিনি রাখতেন না বলে জানান সোনারগাঁয়ের বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী হাসিনা পলায়নের পর থেকে রেজাউল করিম পুরো সোনারগাঁ চষে বেড়াচ্ছেন। সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন স্থানে তার পদচারণা এখন নিয়মিত ব্যাপার। প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাছে। কেউ সাড়া দিছেন দলের সিনিয়র নেতা হিসেবে তবে বুকে থাকে চাপা হাহাকার। এমনটাই বলছেন সোনারগাঁয়ের এক নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মী জানান, রেজাউল করিম মানুষ হিসেবে ভালো কিন্তু নেতা হিসেবে নয়। তার মাঝে নেতা, নেতৃত্ব এই জিনিসগুলো যায়না।
সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন জানান, সোনারগাঁয়ের জন্য রেজাউল করিম একজন অভিশাপ। মূল ধারার বিএনপির কোন নেতা-কর্মী তাঁর সাথে নেই। জাতীয় পার্টির ফারুক, সিরাজ , মার্ডার মামলার আসামী জসিম এখন তার আসল কর্মী। ইয়াবা, গাঁজা সেবনকারীরা এখন তাঁর আশেপাশে পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, রেজাউল করিম ৫ আগষ্টের আগে নির্বাচন করবেন না বলে জানালেও এখন আবার নির্বাচন করার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। উনি আসলে সুসময়ের মাছি। আমরা তাকে পরিত্যাগ করেছি।
আরেকদিকে আছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান । তিনি দলের জন্য মাঠে সক্রিয় ছিলেন প্রতিটি আন্দোলনে। সোনারগাঁও বিএনপি’র একজন কর্মী বান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত আজারুল ইসলাম মান্নান। স্বৈরাচারী হাসিনার দীর্ঘ ১৭ বছর সোনারগাঁও বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচি রাজপথে আন্দোলন- সংগ্রামের মধ্যদিয়ে সফলভাবে পালন করেছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র একজন ত্যাগী ও সফল নেতা সোনারগাঁও বিএনপি’র সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হবেন। দীর্ঘ যুগেরও বেশী সময় ধরে সোনারগাঁও বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠনগুলোকে একত্র করে এক ছাতার নিচে ধরে রেখেছেন তিনি। বিগত সময় বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম ও গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে মামলা-হামলায় নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন তিনি। নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বাড়ীতে খোঁজখবর নিয়েছেন নিয়মিত। বিএনপি’র কোন দলীয় কর্মসূচী আসলে নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে নেমে পড়েন এবং আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করেন তিনি বলেন, “আমার নেতাকর্মীরা যখন নির্যাতিত, আমি তখন রাজপথে ছিলাম। পদ-পদবির জন্য নয়, আদর্শের রাজনীতি করি।”
সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের সাবেক এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। যদিও দলের নেতা-কর্মীরা তা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক বলে জানান।
মান্নান এতোদিন দলের মনোনয়নের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রেজাউল করিমকেই বাধা হিসেবে দেখে এসেছেন। যা সংস্কারপন্থী বা দলের নেতা কর্মী বিমুখতায় বেশ পিছিয়ে ছিলেন বলে বেশ স্বস্থিতে ছিলেন মান্নান। গত১৬ ডিসেম্বরে সোনারগাঁয়ে বিজয় স্তম্ভে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে রেজাউল করিম ও আজহারুল ইসলাম মান্নান সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তাতে আহত হয় উভয় পক্ষের ১০ জন।
তাদের এমন দ্বৈত দ্বন্দে ঠিক নির্বাচনের দিন তারিখ মোটামুটি নিশ্চিত হওয়ার আগ মুহুর্তে তৃতীয় পক্ষ হয়ে মাঠে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন। এই পরিস্থিতিতে আযহারুল ইসলাম মান্নানের দুঃশ্চিন্তা বেড়ে গেছে বহুগুণে। এমন পরিস্থিতিতে মান্নান এখন নিজের প্রচারণা রেখে গিয়াস-রেজাউলের চাপ সামলাতেই ব্যস্ত সময় পার করছে বলে জানা যায়।
বর্তমানে সোনারগাঁ বিএনপির রাজনৈতিক বাস্তবতা হলো, একদিকে রাজনীতিতে ফিরে আসা অভিজ্ঞ কিন্তু বিতর্কিত রেজাউল করিম, অন্যদিকে তৃণমূলে গ্রাস করা নতুন করে সক্রিয় গিয়াস উদ্দিন এবং সব সময় মাঠে থাকা, সংগঠন বান্ধব আজহারুল ইসলাম মান্নান। তিনজনই কেন্দ্রের মনোযোগ পেতে মরিয়া।
কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি এই আসনে কাকে মনোনয়ন দেবে, তা নিয়ে এখনই নানা ধরণের লবিং শুরু হয়েছে। একাধিক দলীয় সূত্র বলছে, যিনি মাঠে, তৃণমূলে ও মিডিয়ায় সক্রিয় থাকবেন, তাকেই গুরুত্ব দেবে হাইকমান্ড। কারণ বিএনপি জানে, এই কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরীক্ষিত এবং গ্রহণযোগ্য প্রার্থীই পারবে ভোটের লড়াইয়ে টিকে থাকতে।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

সোনারগাঁয়ে সক্রিয় গিয়াস-রেজাউল, দুঃশ্চিন্তা মান্নানের

আপডেট সময় : ১১:০৪:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক সমীকরণ নতুন মোড় নিচ্ছে। এর ব্যতিক্রম নয় নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনও। এখানে বিএনপির ভেতরে ভেতরে জমে উঠেছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নানের একক প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এখন মাঠে সক্রিয় হয়েছেন আরও দুই প্রবীণ নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন এবং একসময়ের সংস্কারপন্থী নেতা অধ্যাপক রেজাউল করিম।
এই তিন নেতার মুখোমুখি অবস্থান সোনারগাঁ বিএনপিকে একটি জটিল, বিভক্ত এবং অনিশ্চিত অবস্থায় নিয়ে গেছে, যার প্রভাব পড়ছে স্থানীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে মনোনয়ন রাজনীতিতেও।
মামুন মাহমুদকে আহ্বায়ক ও মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়াকে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৩৩ সদস্যের নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে চলতি বছরের ২৪ মার্চ। সেই থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) ও নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) এই দুই আসনে নির্বাচনের জন্য বেশ প্রস্তুতি নিয়ে আটঘাট বেঁধে নেমেছেন। ঈদুল ফিতর কি ঈদুল আযহা, দুই ঈদেই শুভেচ্ছা বিনিময় করে সবার সাথে সখ্যতা গড়ার চেষ্টায় ছিলেন গিয়াস উদ্দিন। ঈদ পরবর্তীতে ঈদ-পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করে সোনারগাঁ বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন এই বিএনপি নেতা। সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময় সহ সভা-সমাবেশ করে চলেছেন তিনি।
তিনি দাবী করেন, নারায়ণগঞ্জের সাবেক সভাপতি থাকার কারণে তার সাথে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলার বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক আছে। তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমাকে বেশ ভালো ভাবেই চেনে। ২০০১ সালে শামীম ওসমানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামীতেও বিএনপিকে একটি আসন উপহার দিতে চাই।
মূলত কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন জানতে চাইলে তিনি জানান, “সব জায়গায়ই আমি কাজ করছি দলের জন্য। নির্বাচনে দল কাকে কোথায় মনোনয়ন দেবে, সেটা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ওপর নির্ভর করে। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের যেকোনো একটিতে যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয়, আমি সেখানেই নির্বাচন করব। কারণ নারায়ণগঞ্জবাসী আমাকে ভালোবাসে। আমি আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের পাশে ছিলাম, কখনো ছেড়ে যাইনি।”
উল্লেখ্য , মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ৮০ দশকে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সক্রীয় ছিলেন। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন ও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। এরশাদের পতনের পর ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে নির্বাচনের অল্প কিছুদিন আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দিয়ে বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য। ২০০১ অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
অন্যদিকে আছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আরেক সাবেক সভাপতি , নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের চারবারের সংসদ সদস্য ও ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বিএনপির প্রবীণ নেতা অধ্যাপক মো: রেজাউল করিম। যিনি ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের পর ছিলেন একজন সংস্কারপন্থী। তার নাম সারাদেশেই পরিচিত একজন সংস্কারপন্থী হিসেবেই। গত ১৭ বছরে তার রাজনৈতিক কোন কর্মকান্ড দেখা যায়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতা-কর্মীদের। এমনকি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার গত ১৭ বছরের শাসনামলে তার নামে কোন মামলাও হয়নি বা মামলা খাওয়া কোন নেতা-কর্মীর খোঁজ খবরও তিনি রাখতেন না বলে জানান সোনারগাঁয়ের বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী হাসিনা পলায়নের পর থেকে রেজাউল করিম পুরো সোনারগাঁ চষে বেড়াচ্ছেন। সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন স্থানে তার পদচারণা এখন নিয়মিত ব্যাপার। প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাছে। কেউ সাড়া দিছেন দলের সিনিয়র নেতা হিসেবে তবে বুকে থাকে চাপা হাহাকার। এমনটাই বলছেন সোনারগাঁয়ের এক নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মী জানান, রেজাউল করিম মানুষ হিসেবে ভালো কিন্তু নেতা হিসেবে নয়। তার মাঝে নেতা, নেতৃত্ব এই জিনিসগুলো যায়না।
সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন জানান, সোনারগাঁয়ের জন্য রেজাউল করিম একজন অভিশাপ। মূল ধারার বিএনপির কোন নেতা-কর্মী তাঁর সাথে নেই। জাতীয় পার্টির ফারুক, সিরাজ , মার্ডার মামলার আসামী জসিম এখন তার আসল কর্মী। ইয়াবা, গাঁজা সেবনকারীরা এখন তাঁর আশেপাশে পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, রেজাউল করিম ৫ আগষ্টের আগে নির্বাচন করবেন না বলে জানালেও এখন আবার নির্বাচন করার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। উনি আসলে সুসময়ের মাছি। আমরা তাকে পরিত্যাগ করেছি।
আরেকদিকে আছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান । তিনি দলের জন্য মাঠে সক্রিয় ছিলেন প্রতিটি আন্দোলনে। সোনারগাঁও বিএনপি’র একজন কর্মী বান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত আজারুল ইসলাম মান্নান। স্বৈরাচারী হাসিনার দীর্ঘ ১৭ বছর সোনারগাঁও বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচি রাজপথে আন্দোলন- সংগ্রামের মধ্যদিয়ে সফলভাবে পালন করেছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র একজন ত্যাগী ও সফল নেতা সোনারগাঁও বিএনপি’র সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হবেন। দীর্ঘ যুগেরও বেশী সময় ধরে সোনারগাঁও বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠনগুলোকে একত্র করে এক ছাতার নিচে ধরে রেখেছেন তিনি। বিগত সময় বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম ও গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে মামলা-হামলায় নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন তিনি। নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বাড়ীতে খোঁজখবর নিয়েছেন নিয়মিত। বিএনপি’র কোন দলীয় কর্মসূচী আসলে নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে নেমে পড়েন এবং আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করেন তিনি বলেন, “আমার নেতাকর্মীরা যখন নির্যাতিত, আমি তখন রাজপথে ছিলাম। পদ-পদবির জন্য নয়, আদর্শের রাজনীতি করি।”
সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের সাবেক এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। যদিও দলের নেতা-কর্মীরা তা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক বলে জানান।
মান্নান এতোদিন দলের মনোনয়নের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রেজাউল করিমকেই বাধা হিসেবে দেখে এসেছেন। যা সংস্কারপন্থী বা দলের নেতা কর্মী বিমুখতায় বেশ পিছিয়ে ছিলেন বলে বেশ স্বস্থিতে ছিলেন মান্নান। গত১৬ ডিসেম্বরে সোনারগাঁয়ে বিজয় স্তম্ভে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে রেজাউল করিম ও আজহারুল ইসলাম মান্নান সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তাতে আহত হয় উভয় পক্ষের ১০ জন।
তাদের এমন দ্বৈত দ্বন্দে ঠিক নির্বাচনের দিন তারিখ মোটামুটি নিশ্চিত হওয়ার আগ মুহুর্তে তৃতীয় পক্ষ হয়ে মাঠে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন। এই পরিস্থিতিতে আযহারুল ইসলাম মান্নানের দুঃশ্চিন্তা বেড়ে গেছে বহুগুণে। এমন পরিস্থিতিতে মান্নান এখন নিজের প্রচারণা রেখে গিয়াস-রেজাউলের চাপ সামলাতেই ব্যস্ত সময় পার করছে বলে জানা যায়।
বর্তমানে সোনারগাঁ বিএনপির রাজনৈতিক বাস্তবতা হলো, একদিকে রাজনীতিতে ফিরে আসা অভিজ্ঞ কিন্তু বিতর্কিত রেজাউল করিম, অন্যদিকে তৃণমূলে গ্রাস করা নতুন করে সক্রিয় গিয়াস উদ্দিন এবং সব সময় মাঠে থাকা, সংগঠন বান্ধব আজহারুল ইসলাম মান্নান। তিনজনই কেন্দ্রের মনোযোগ পেতে মরিয়া।
কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি এই আসনে কাকে মনোনয়ন দেবে, তা নিয়ে এখনই নানা ধরণের লবিং শুরু হয়েছে। একাধিক দলীয় সূত্র বলছে, যিনি মাঠে, তৃণমূলে ও মিডিয়ায় সক্রিয় থাকবেন, তাকেই গুরুত্ব দেবে হাইকমান্ড। কারণ বিএনপি জানে, এই কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরীক্ষিত এবং গ্রহণযোগ্য প্রার্থীই পারবে ভোটের লড়াইয়ে টিকে থাকতে।