ঢাকা ১২:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নিয়েও থামানো যাচ্ছে না

বিএনপির কোন্দলে চলতি মাসেই নিহত তিন

সোজাসাপটা রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৩:১৭:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
  • / ৫০ জন পড়েছেন

নারায়ণগঞ্জে দলীয় কোন্দলে বিপর্যস্ত বিএনপির রাজনীতি। দল থেকে বার বার হুশিয়ার করা হলেও সেদিকে থোরাই কেয়ার করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। চলতি মাসেই বিএনপির দলীয় কোন্দলে নারায়ণগঞ্জে নিহত হয়েছেন তিন জন। দলের এসকল বিপথগামী নেতাকর্মীদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শীর্ষ নেতাদের। বহিষ্কার ও শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নিয়েও থামানো যাচ্ছে না তাদের। এর পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যার্থতাও স্পষ্ট।
পাঁচ আগষ্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মী। বাসস্ট্যান্ড দখল, এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে ঘিরে প্রতিনিয়ত সংঘাতে জড়াচ্ছে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত এসকল সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত অবৈধ এসকল অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
চলতি মাসের ১০ জুন রুপগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমানের ভাগিনা হিসেবে পরিচিত ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতা জায়দুল বাবুর গুলিতে যুবদল নেতা মোঃ বাদল ভূঁইয়ার ছোট ভাই মামুন ভূঁইয়া (৩২) নিহত হন।
নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন খোকাকে ছাড়াতে অস্ত্র নিয়ে গ্রামবাসীর ওপর গুলিবর্ষণ করেন জাইদুল বাবু। হত্যাকান্ডের পর জায়দুল বাবুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তাকে এখনও আইনের আওতায় আনতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্থানীয়রা জানান রুপগঞ্জের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা খোকা। ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে এলাকায় নানান অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এই খোকার বিরুদ্ধে।
জানা যায় ১০ জুন সকালে এলাকায় দেখতে পেয়ে ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির হোসেন খোকাকে আটক করে এলাকাবাসী। এসময় তাকে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা।
এদিকে খোকাকে আটকে রাখার খবর জানতে পেয়ে দলবদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে আসেন মাহবুবুর রহমানের ভাতিজা জায়দুল বাবু। এসময় স্থানীয় জনতার দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়েন বাবু। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মামুন ভুইঁয়া।
জানা যায় পাঁচ আগষ্টের পর থেকেই পলাতক অবস্থায় ছিলেন ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন খোকা। মাত্র কয়েকদিন আগে মাহবুবুর রহমানের ভাতিজা জায়দুল বাবুর বলয়ে যোগ দেন খোকা। এরপরেই এলাকায় পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন খোকা।
এদিকে মামুন হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই বাদল ভূঁইয়া বাদী হয়ে জায়দুল বাবুসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তবে এঘটনায় এখনও বাবুকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ, উদ্ধার হয়নি অস্ত্রও।
সর্বশেষ ২১ জুন রাতে বন্দর উপজেলার হাজারীবাগ এলাকায় অটোরিকশা স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হন। সংঘর্ষে নিহতরা হলেন কুদ্দুস মিয়া (৫৯) ও মেহেদী (৩০)। নিহত কুদ্দুস বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন রিকশা চালক ছিলেন। অন্যদিকে মেহেদী বিএনপির স্থানীয় কর্মী বলে জানা গেছে।
বন্দর রেললাইন এলাকার এই অটোস্ট্যান্ডটি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে এলাকার সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাওসার আশা গ্রুপ এর সাথে আরেক সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকার এর লোকজনের দ্বন্দ্ব চলছিলো। শুক্রবার এ নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৮ জন আহত হয়।
শনিবার রাতে হান্নান সরকারের বাবু- মেহেদীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আশা গ্রুপের জাফর- রনির উপর হামলা চালায়। দুই পক্ষের মধ্যে এই সময় ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। হান্নান গ্রুপের লোকজন এ সময় আশার সমর্থক আব্দুল কুদ্দুসকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা কুদ্দুসকে উদ্ধার করে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরবর্তীতে এ ঘটনার জের ধরে আশা গ্রুপ সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারের বাসায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিতে গেলে তারা পুলিশের উপর চড়াও হয়। এ সময় সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে সংঘর্ষের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে বন্দর সিরাজুদ্দৌলার ক্লাব মাঠ দিয়ে মেহেদী ও তার লোকজন যাওয়ার পথে তাদের ওপর রনি ও জাফর গ্রুপের লোকজন হামলা চালায়। এ সময় সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে আহত হন মেহেদী। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুত্ব আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করে।
এদিকে সংঘর্ষের পর বন্দর এলাকা থেকে উভয় পক্ষের দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার সাথে জড়িত প্রধান অভিযুক্তরা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
নারায়ণগঞ্জের বিএনপি নেতাকর্মীরা ঠিক কতটা বেপরোয়া তা আন্দাজ করা যায় মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবের ওপর হওয়া হামলার ঘটনায়। আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বন্দরে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবের ওপর হামলা চালায় দলের অপর পক্ষের নেতাকর্মীরা। এতে গুরুতর আহত হন টিপু।
এর আগে ২০২৪ সালে ২২ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের এক নং রেলগেট এলাকায় বাসস্ট্যান্ড দখলকে ঘিরে বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়ায়। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহাবুব উল্লাহ তপন এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান বাহিনীর মধ্যে কয়েক দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুপক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহাবুব উল্লাহ তপন ও তার বাহিনীর লোকজন পরিবহন সেক্টর নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। রোববার দুপুর ১২টার দিকে তপন বাহিনীর শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সিটি বন্ধন পরিবহনের কার্যালয় দখল করতে আসে। এ সময় বাস মালিকরা বাধা দিলে কার্যালয়টি ভাঙচুর করেন তারা। খবর পেয়ে সিটি বন্ধন পরিবহনের পক্ষ হয়ে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কারাবন্দি জাকির খান বাহিনীর সশস্ত্র লোকজন ঘটনাস্থলে এলে দুপক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।
এসময় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে গুলি ছুঁড়তে দেখা গেছে। এঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও সংঘর্ষে ব্যাবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি প্রশাসন।
এদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বেপরোয়া আচরণে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মানুষের মন জয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বার বার আহ্বান জানানো হলেও নেতাকর্মীরা উল্টো পথে হাটছেন। এতে সাধারণ ভোটারদের মনে বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে যার প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
এদিকে প্রশাসনের ব্যার্থতা নিয়েও জনমনে রয়েছে প্রশ্ন। আধিপত্য বিস্তার ও সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর পর আসামিদের প্রশাসন শক্ত হাতে আইনের আওতায় আনলে এসকল হতাহতের ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নিয়েও থামানো যাচ্ছে না

বিএনপির কোন্দলে চলতি মাসেই নিহত তিন

আপডেট সময় : ০৩:১৭:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

নারায়ণগঞ্জে দলীয় কোন্দলে বিপর্যস্ত বিএনপির রাজনীতি। দল থেকে বার বার হুশিয়ার করা হলেও সেদিকে থোরাই কেয়ার করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। চলতি মাসেই বিএনপির দলীয় কোন্দলে নারায়ণগঞ্জে নিহত হয়েছেন তিন জন। দলের এসকল বিপথগামী নেতাকর্মীদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শীর্ষ নেতাদের। বহিষ্কার ও শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নিয়েও থামানো যাচ্ছে না তাদের। এর পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যার্থতাও স্পষ্ট।
পাঁচ আগষ্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মী। বাসস্ট্যান্ড দখল, এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে ঘিরে প্রতিনিয়ত সংঘাতে জড়াচ্ছে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত এসকল সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত অবৈধ এসকল অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
চলতি মাসের ১০ জুন রুপগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমানের ভাগিনা হিসেবে পরিচিত ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতা জায়দুল বাবুর গুলিতে যুবদল নেতা মোঃ বাদল ভূঁইয়ার ছোট ভাই মামুন ভূঁইয়া (৩২) নিহত হন।
নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন খোকাকে ছাড়াতে অস্ত্র নিয়ে গ্রামবাসীর ওপর গুলিবর্ষণ করেন জাইদুল বাবু। হত্যাকান্ডের পর জায়দুল বাবুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তাকে এখনও আইনের আওতায় আনতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্থানীয়রা জানান রুপগঞ্জের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা খোকা। ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে এলাকায় নানান অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এই খোকার বিরুদ্ধে।
জানা যায় ১০ জুন সকালে এলাকায় দেখতে পেয়ে ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির হোসেন খোকাকে আটক করে এলাকাবাসী। এসময় তাকে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা।
এদিকে খোকাকে আটকে রাখার খবর জানতে পেয়ে দলবদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে আসেন মাহবুবুর রহমানের ভাতিজা জায়দুল বাবু। এসময় স্থানীয় জনতার দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়েন বাবু। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মামুন ভুইঁয়া।
জানা যায় পাঁচ আগষ্টের পর থেকেই পলাতক অবস্থায় ছিলেন ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন খোকা। মাত্র কয়েকদিন আগে মাহবুবুর রহমানের ভাতিজা জায়দুল বাবুর বলয়ে যোগ দেন খোকা। এরপরেই এলাকায় পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন খোকা।
এদিকে মামুন হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই বাদল ভূঁইয়া বাদী হয়ে জায়দুল বাবুসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তবে এঘটনায় এখনও বাবুকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ, উদ্ধার হয়নি অস্ত্রও।
সর্বশেষ ২১ জুন রাতে বন্দর উপজেলার হাজারীবাগ এলাকায় অটোরিকশা স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হন। সংঘর্ষে নিহতরা হলেন কুদ্দুস মিয়া (৫৯) ও মেহেদী (৩০)। নিহত কুদ্দুস বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন রিকশা চালক ছিলেন। অন্যদিকে মেহেদী বিএনপির স্থানীয় কর্মী বলে জানা গেছে।
বন্দর রেললাইন এলাকার এই অটোস্ট্যান্ডটি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে এলাকার সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাওসার আশা গ্রুপ এর সাথে আরেক সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকার এর লোকজনের দ্বন্দ্ব চলছিলো। শুক্রবার এ নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৮ জন আহত হয়।
শনিবার রাতে হান্নান সরকারের বাবু- মেহেদীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আশা গ্রুপের জাফর- রনির উপর হামলা চালায়। দুই পক্ষের মধ্যে এই সময় ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। হান্নান গ্রুপের লোকজন এ সময় আশার সমর্থক আব্দুল কুদ্দুসকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা কুদ্দুসকে উদ্ধার করে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরবর্তীতে এ ঘটনার জের ধরে আশা গ্রুপ সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারের বাসায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিতে গেলে তারা পুলিশের উপর চড়াও হয়। এ সময় সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে সংঘর্ষের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে বন্দর সিরাজুদ্দৌলার ক্লাব মাঠ দিয়ে মেহেদী ও তার লোকজন যাওয়ার পথে তাদের ওপর রনি ও জাফর গ্রুপের লোকজন হামলা চালায়। এ সময় সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে আহত হন মেহেদী। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুত্ব আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করে।
এদিকে সংঘর্ষের পর বন্দর এলাকা থেকে উভয় পক্ষের দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার সাথে জড়িত প্রধান অভিযুক্তরা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
নারায়ণগঞ্জের বিএনপি নেতাকর্মীরা ঠিক কতটা বেপরোয়া তা আন্দাজ করা যায় মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবের ওপর হওয়া হামলার ঘটনায়। আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বন্দরে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবের ওপর হামলা চালায় দলের অপর পক্ষের নেতাকর্মীরা। এতে গুরুতর আহত হন টিপু।
এর আগে ২০২৪ সালে ২২ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের এক নং রেলগেট এলাকায় বাসস্ট্যান্ড দখলকে ঘিরে বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়ায়। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহাবুব উল্লাহ তপন এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান বাহিনীর মধ্যে কয়েক দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুপক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহাবুব উল্লাহ তপন ও তার বাহিনীর লোকজন পরিবহন সেক্টর নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। রোববার দুপুর ১২টার দিকে তপন বাহিনীর শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সিটি বন্ধন পরিবহনের কার্যালয় দখল করতে আসে। এ সময় বাস মালিকরা বাধা দিলে কার্যালয়টি ভাঙচুর করেন তারা। খবর পেয়ে সিটি বন্ধন পরিবহনের পক্ষ হয়ে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কারাবন্দি জাকির খান বাহিনীর সশস্ত্র লোকজন ঘটনাস্থলে এলে দুপক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।
এসময় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে গুলি ছুঁড়তে দেখা গেছে। এঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও সংঘর্ষে ব্যাবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি প্রশাসন।
এদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বেপরোয়া আচরণে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মানুষের মন জয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বার বার আহ্বান জানানো হলেও নেতাকর্মীরা উল্টো পথে হাটছেন। এতে সাধারণ ভোটারদের মনে বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে যার প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
এদিকে প্রশাসনের ব্যার্থতা নিয়েও জনমনে রয়েছে প্রশ্ন। আধিপত্য বিস্তার ও সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর পর আসামিদের প্রশাসন শক্ত হাতে আইনের আওতায় আনলে এসকল হতাহতের ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো।