ডিএনডি’র বাঁধের ভেতরেই ডুবে আছে দশ লাখ মানুষ
ফতুল্লা-কুতুবপুরে জলাবদ্ধতার ছয় দশক, প্রকল্পের বাইরে দুই ইউনিয়ন

- আপডেট সময় : ১০:০৪:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
- / ৮৪ জন পড়েছেন
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, কুতুবপুর, লালপুর, ইসদাইর, গাবতলি, সেহাচর, শিবু মার্কেটসহ দুই ইউনিয়নের প্রায় ২ বর্গকিলোমিটার এলাকা যেন এক বৃষ্টিতেই পানির নিচে চলে যায়। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের ভেতরে অবস্থান করলেও এই বিশাল জনপদটি সেনাবাহিনীর ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আসেনি। ফলে প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে প্রায় দশ লক্ষ মানুষ।
১৯৬২ সালে ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অতিরিক্ত ধান চাষ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ডিএনডি পরিকল্পনার শুরু। কিন্তু কালক্রমে তৈরি হয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। দীর্ঘদিন পর ২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদিত হয় ‘ডিএনডি ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ উন্নয়ন প্রকল্প’। ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ৫৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। পরবর্তীতে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ২০২০ সালে তা ১৩০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটেলিয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ করলেও কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছে না ডিএনডির বাসিন্দারা।
ডিএনডির ভেতরের ফতুল্লা ও কুতুবপুর ইউনিয়নের একাংশ এখনও জলাবদ্ধতায় ভোগছে। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে—প্রকল্পের শুরুতেই সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত না করা, খাস খালগুলোর সংরক্ষণের দায়িত্ব না দেওয়া এবং ফিসিবিলিটি স্টাডিতে ঘাটতি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “২০০৪ সাল থেকেই আমরা এই ভোগান্তি সহ্য করছি। বছরের পর বছর একই কষ্ট। কবে এর শেষ হবে জানি না।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রশিদুল মামুন রাফিদ জানিয়েছেন, বাদ পড়া অংশে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করা হবে। সেনাবাহিনীর প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর সাকিব জাওয়াদ বলেন, “এই এলাকাটি ডিএনডি বাঁধের মধ্যে হলেও প্রকল্পের আওতায় ছিল না। জনগণকে আরও সচেতন না করলে প্রকল্পের সুফল নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।”
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হবে।”
এই অঞ্চলে রয়েছে সহস্রাধিক শিল্প কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং আন্তর্জাতিক মানের খান সাহেব ওসমান আলী ক্রিকেট স্টেডিয়াম। অথচ সড়ক, ড্রেনেজ ও পয়োনিষ্কাশনের ন্যূনতম কাঠামোও গড়ে ওঠেনি। বাঁধের ভেতরের ২২টি খাল এখন ময়লার ভাগাড় আর দখলের কবলে। অপরিকল্পিত বসতি গড়ে উঠায় সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যায় বাড়িঘর, রাস্তা, দোকানপাট।
মানুষ এখন শুধু একটাই দাবি জানাচ্ছে—জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী মুক্তি।