লাখো মানুষের ঢলে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজা সম্পন্ন
- আপডেট সময় : ০৩:২৭:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
- / ১২ জন পড়েছেন
জুলাই বিপ্লবী ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগঠন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লাখো মানুষ অংশ নেন।
হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক জানাজার নামাজে ইমামতি করেন।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সর্বস্তরের মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
জানাজার আগে সংসদ ভবন প্লাজার সামনের মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অনেকে ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সড়কে দাঁড়িয়ে জানাজায় অংশ নেন।
জানাজার আগে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও হাদির ভাই আবু বকর সিদ্দিক। এ সময় আবু বকর সিদ্দিক হাদির স্মৃতিচারণ করেন এবং তার জন্য দোয়া কামনা করেন। আবেগঘন পরিবেশে সেখানে কান্নার রোল পড়ে যায়।
জানাজার পর শরিফ ওসমান হাদিকে দাফনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। নজরুল ইসলামের কবরের পাশেই তাকে সমাহিত করা হবে।
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত ওসমান হাদি পরবর্তীতে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ গড়ে তোলেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তার সোচ্চার ভূমিকার কারণে তিনি আলোচনায় আসেন। বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতে নিয়মিত অংশ নিতেন এবং তার বক্তব্যের বহু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসন থেকে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রায় এক মাস আগে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন হাদি। গত নভেম্বরে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি দাবি করেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি নম্বর থেকে ফোনকল ও বার্তার মাধ্যমে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই পোস্টে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ ক্যাডাররা তাকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছে। তবে প্রাণনাশের আশঙ্কা সত্ত্বেও তিনি ইনসাফের লড়াই থেকে পিছিয়ে যাবেন না বলেও উল্লেখ করেন।
গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় প্রচারে গেলে মোটরসাইকেলে আসা দুই সন্ত্রাসী তাকে গুলি করে। রিকশায় থাকা অবস্থায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সরকারিভাবে তাকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। চিকিৎসকদের সর্বাত্মক চেষ্টার পরও বৃহস্পতিবার রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখকে মূল সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, তারা ভারতে পালিয়ে গেছেন।
মৃত্যুর পর ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় হাদির মরদেহ বাংলাদেশে আনা হয় এবং পরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়।
হাদির মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হচ্ছে। দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।


























