ঢাকা ০৯:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যে কারণে গ্রেফতার আতঙ্কে দুবাইয়ের শাসক পরিবারের সাবেক বউ

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৬:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
  • / ০ জন পড়েছেন

নিজ সন্তান অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শাসক পরিবারের এক সদস্যের সাবেক স্ত্রী জয়নাব জাভাদলি। সাবেক স্বামী শেখ সাঈদ বিন মাকতুম বিন রশিদ আল মাকতুম তার বিরুদ্ধে স্থানীয় পুলিশের কাছে ফৌজদারি অভিযোগ করার পর এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগে বলা হয়েছে, জয়নাব তাদের তিন মেয়েকে অপহরণ করেছেন।

শেখ সাঈদ বিন মাকতুম বিন রশিদ আল মাকতুম দুবাইয়ের শাসকের ভাইয়ের ছেলে। ২০১৯ সালে জয়নাব জাভাদলির সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকেই শিশুসন্তানদের নিজেদের হেফাজতে রাখা নিয়ে সাবেক স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ চলছে।

গত কয়েক সপ্তাহে এই বিরোধ তীব্র রূপ নিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সন্তানেরা কখনো মায়ের কাছে আবার কখনো বাবার কাছে ছিল। দুজনই একে অপরের বিরুদ্ধে সন্তানদের অপহরণের অভিযোগ এনেছেন।

সবশেষ বিরোধের ঘটনাটি অনলাইনে এসে সরাসরি অভিযোগ করার কারণে জয়নাবকে সাইবার অপরাধের অভিযোগেও গ্রেফতার করা হতে পারে। জয়নাব বলেছেন, তিনি ঝুঁকি নিয়েই কাজটি করেছিলেন।

ব্রিটিশ আইনজীবী ডেভিড হেই-কে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় জয়নাব বলেন, আমি জানতাম, এটি আমার শেষ সুযোগ। কারণ, তারা আর আমাকে তাদের দেখার সুযোগ দেবেন না। আমি সত্যিই ধরে নিয়েছিলাম যে এটি আমার শেষ সুযোগ। তাই আমি সরাসরি অনলাইনে এসে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলাম।

জয়নাব জাভাদলি তার দুবাইয়ের বাড়ি থেকে ভিডিও বার্তাটি দিয়েছেন। বলেছেন, কয়েক সপ্তাহ মেয়েরা বাবার সঙ্গে থাকার পর তিনি তাদের ফেরত নিয়ে এসেছেন।

জয়নাবের দাবি, ২০২২ সালে দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে এক চুক্তির মাধ্যমে তিনি সন্তানদের নিজের হেফাজতে রাখার অনুমতি পেয়েছিলেন। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, সন্তানেরা ১৮ বছর পর্যন্ত তার হেফাজতে থাকবে এবং তাদের জন্য একটি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হবে। মেয়েদের স্কুলের খরচ বহন করবেন তাদের বাবা।

আইনজীবী ডেভিড হেই বলেছেন, এসবের বিনিময়ে জয়নাবকে কিছু কাগজে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল। এসব কাগজে উল্লেখ করা ছিল—তিনি তার পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আর কোনো কথা বলবেন না এবং কোনো কিছু আর সরাসরি সম্প্রচার করবেন না।

পরে আদালত সন্তানদের শেখ সাঈদের হেফাজতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। তবে জয়নাব জাভাদলি বলেন, তার মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, এতে দুবাইয়ের শাসকের সঙ্গে করা চুক্তির ওপর প্রভাব পড়বে না। দুই মাস আগে পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি বজায় ছিল।

তবে হঠাৎ একদিন সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাতের সময় জয়নাব একটি বার্তা পান। দুবাই পুলিশের মাধ্যমে সাবেক স্বামীর বার্তাটি তার কাছে পাঠানো হয়েছিল। বার্তায় বলা হয়, সন্তানরা সেদিন তার (জয়নাব) সঙ্গে যাবে না। তিনি যেন অপেক্ষা না করেন।

এরপর কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সন্তানদের সঙ্গে জয়নাবের আর যোগাযোগ হয়নি। অবশেষে তাকে শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে তিন ঘণ্টার জন্য সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। ৮ নভেম্বর তিনি তার গাড়িচালককে নিয়ে সেখানে যান। জয়নাব দাবি করেন, সুরক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে তিনি দেখেন তার সন্তানেরা সেখানে নেই। জয়নাব যখন ভবন থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন দেখেন সন্তানেরা তার দিকে ছুটে আসছে।

সন্তানেরা চিৎকার করে বলছিল, ‘মা, আমাদের এখান থেকে নিয়ে যাও!’

জয়নাব তার গাড়িচালককে বলেছিলেন, দরজা বন্ধ করে বাড়ি নিয়ে যেতে। তবে তার অভিযোগ, সাবেক স্বামীর কর্মীরা তাদের পথ আটকে দিয়েছিল। তখনই তিনি লাইভস্ট্রিম খুলে সাহায্যের আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানতেন, এতে আমিরাত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্বাক্ষর করা চুক্তি ভঙ্গের ঝুঁকি রয়েছে এবং গ্রেফতারও হতে পারেন। এরপরও তার মনে হয়েছে, এটাই একমাত্র পথ।

জয়নাব তখন থেকে শিশুসন্তানদের সঙ্গে বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তিনি বলেছেন, গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে বাইরে যেতে সাহস পাননি। তার তিন মেয়ের বয়স—নয়, সাত ও ছয়।

সর্বশেষ নথিতে ৮ নভেম্বরের ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, জয়নাব তার চালকের সহায়তায় শিশুদের জোর করে তার গাড়িতে উঠিয়েছিলেন এবং তাদের অপহরণ করেছিলেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করার মধ্য দিয়ে জয়নাব তার সাবেক স্বামীর মানহানির পাশাপাশি রাষ্ট্রের অবমাননা এবং রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

যে কারণে গ্রেফতার আতঙ্কে দুবাইয়ের শাসক পরিবারের সাবেক বউ

আপডেট সময় : ০৮:৪৬:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

নিজ সন্তান অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শাসক পরিবারের এক সদস্যের সাবেক স্ত্রী জয়নাব জাভাদলি। সাবেক স্বামী শেখ সাঈদ বিন মাকতুম বিন রশিদ আল মাকতুম তার বিরুদ্ধে স্থানীয় পুলিশের কাছে ফৌজদারি অভিযোগ করার পর এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি। অভিযোগে বলা হয়েছে, জয়নাব তাদের তিন মেয়েকে অপহরণ করেছেন।

শেখ সাঈদ বিন মাকতুম বিন রশিদ আল মাকতুম দুবাইয়ের শাসকের ভাইয়ের ছেলে। ২০১৯ সালে জয়নাব জাভাদলির সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকেই শিশুসন্তানদের নিজেদের হেফাজতে রাখা নিয়ে সাবেক স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ চলছে।

গত কয়েক সপ্তাহে এই বিরোধ তীব্র রূপ নিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সন্তানেরা কখনো মায়ের কাছে আবার কখনো বাবার কাছে ছিল। দুজনই একে অপরের বিরুদ্ধে সন্তানদের অপহরণের অভিযোগ এনেছেন।

সবশেষ বিরোধের ঘটনাটি অনলাইনে এসে সরাসরি অভিযোগ করার কারণে জয়নাবকে সাইবার অপরাধের অভিযোগেও গ্রেফতার করা হতে পারে। জয়নাব বলেছেন, তিনি ঝুঁকি নিয়েই কাজটি করেছিলেন।

ব্রিটিশ আইনজীবী ডেভিড হেই-কে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় জয়নাব বলেন, আমি জানতাম, এটি আমার শেষ সুযোগ। কারণ, তারা আর আমাকে তাদের দেখার সুযোগ দেবেন না। আমি সত্যিই ধরে নিয়েছিলাম যে এটি আমার শেষ সুযোগ। তাই আমি সরাসরি অনলাইনে এসে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলাম।

জয়নাব জাভাদলি তার দুবাইয়ের বাড়ি থেকে ভিডিও বার্তাটি দিয়েছেন। বলেছেন, কয়েক সপ্তাহ মেয়েরা বাবার সঙ্গে থাকার পর তিনি তাদের ফেরত নিয়ে এসেছেন।

জয়নাবের দাবি, ২০২২ সালে দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে এক চুক্তির মাধ্যমে তিনি সন্তানদের নিজের হেফাজতে রাখার অনুমতি পেয়েছিলেন। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, সন্তানেরা ১৮ বছর পর্যন্ত তার হেফাজতে থাকবে এবং তাদের জন্য একটি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হবে। মেয়েদের স্কুলের খরচ বহন করবেন তাদের বাবা।

আইনজীবী ডেভিড হেই বলেছেন, এসবের বিনিময়ে জয়নাবকে কিছু কাগজে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল। এসব কাগজে উল্লেখ করা ছিল—তিনি তার পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আর কোনো কথা বলবেন না এবং কোনো কিছু আর সরাসরি সম্প্রচার করবেন না।

পরে আদালত সন্তানদের শেখ সাঈদের হেফাজতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। তবে জয়নাব জাভাদলি বলেন, তার মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, এতে দুবাইয়ের শাসকের সঙ্গে করা চুক্তির ওপর প্রভাব পড়বে না। দুই মাস আগে পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি বজায় ছিল।

তবে হঠাৎ একদিন সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাতের সময় জয়নাব একটি বার্তা পান। দুবাই পুলিশের মাধ্যমে সাবেক স্বামীর বার্তাটি তার কাছে পাঠানো হয়েছিল। বার্তায় বলা হয়, সন্তানরা সেদিন তার (জয়নাব) সঙ্গে যাবে না। তিনি যেন অপেক্ষা না করেন।

এরপর কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সন্তানদের সঙ্গে জয়নাবের আর যোগাযোগ হয়নি। অবশেষে তাকে শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে তিন ঘণ্টার জন্য সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। ৮ নভেম্বর তিনি তার গাড়িচালককে নিয়ে সেখানে যান। জয়নাব দাবি করেন, সুরক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে তিনি দেখেন তার সন্তানেরা সেখানে নেই। জয়নাব যখন ভবন থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন দেখেন সন্তানেরা তার দিকে ছুটে আসছে।

সন্তানেরা চিৎকার করে বলছিল, ‘মা, আমাদের এখান থেকে নিয়ে যাও!’

জয়নাব তার গাড়িচালককে বলেছিলেন, দরজা বন্ধ করে বাড়ি নিয়ে যেতে। তবে তার অভিযোগ, সাবেক স্বামীর কর্মীরা তাদের পথ আটকে দিয়েছিল। তখনই তিনি লাইভস্ট্রিম খুলে সাহায্যের আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানতেন, এতে আমিরাত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্বাক্ষর করা চুক্তি ভঙ্গের ঝুঁকি রয়েছে এবং গ্রেফতারও হতে পারেন। এরপরও তার মনে হয়েছে, এটাই একমাত্র পথ।

জয়নাব তখন থেকে শিশুসন্তানদের সঙ্গে বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তিনি বলেছেন, গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে বাইরে যেতে সাহস পাননি। তার তিন মেয়ের বয়স—নয়, সাত ও ছয়।

সর্বশেষ নথিতে ৮ নভেম্বরের ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, জয়নাব তার চালকের সহায়তায় শিশুদের জোর করে তার গাড়িতে উঠিয়েছিলেন এবং তাদের অপহরণ করেছিলেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করার মধ্য দিয়ে জয়নাব তার সাবেক স্বামীর মানহানির পাশাপাশি রাষ্ট্রের অবমাননা এবং রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।