আইভী আরও ৫ মামলায় গ্রেপ্তার
- আপডেট সময় : ১২:১৮:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৪ জন পড়েছেন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত চারটি হত্যাসহ মোট পাঁচটি মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার দেখাতে পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের পৃথক দুটি আমলি আদালতে শুনানি শেষে বিচারক এ আদেশ দেন বলে জানান আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান।
তিনি বলেন, ফতুল্লা থানার চারটি হত্যা মামলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সেলিনা খাতুন এবং সদর থানার সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের উপর হামলার মামলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মাইমানাহ আক্তার মনির আদালতে শুনানি হয় শুনানির সময় গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সেলিনা হায়াৎ আইভী।
বৃহস্পতিবার মামলাগুলোর শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচির কারণে তা পেছানো হয়।
৯ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে ছয় মাস ধরে আইভী গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বন্দি। পরে পরে আরও চারটি মামলায় তাকে ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখায় পুলিশ।
৯ নভেম্বর হাই কোর্টের বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আইভীকে পাঁচটি মামলায় জামিন দেন।
ওইদিনই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ তাদের উপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে আদালতে আবেদন করে। পরদিন ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় আরও চারটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে আবেদন করে।
তবে, এ পাঁচ মামলার একটিতেও আইভী এজাহারনামীয় আসামি নন।
এদিকে, পাঁচ মামলায় আইভীকে জামিন দিয়ে হাই কোর্টের আদেশ ১২ নভেম্বর স্থগিত করে দিয়েছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
মঙ্গলবার আদালতে আইভীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আওলাদ হোসেন। তিনি বলেন, “এ মামলাগুলোতে আইভী আসামি নন, কোথাও তার নাম নেই। গ্রেপ্তার কোনো আসামিও ঘটনাগুলোর সঙ্গে তার জড়িত থাকার কোনো স্বীকারোক্তিও দেয়নি। আইভী হাই কোর্টে পাঁচটি মামলায় জামিন পেয়েছিলেন, কেবলমাত্র তার কারামুক্তি বিলম্বিত করতেই পুলিশ তড়িঘড়ি করে নতুন পাঁচটি মামলায় ‘শ্যোন অ্যারেস্টের’ আবেদন করে।”
এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানান এই আইনজীবী।
নতুন ৫ মামলা
আইভীকে নতুন করে যে চারটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সেগুলো হল- বাস চালক আবুল হোসেন মিজি হত্যা, আব্দুর রহমান হত্যা, মো. ইয়াছিন হত্যা এবং পারভেজ হত্যা মামলা। ফতুল্লা থানায় পরিবারের সদস্যরা এই চারটি মামলা করেছেন।
হামলা ও সরকারি কাজো বাধা দেওয়ার দেওয়ার অভিযোগে অপর মামলাটি হয়েছে সদর মডেল থানায়; পুলিশ সেটির বাদী হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাস চালক আবুল হোসেন মিজি (৩২)। পরে ২১ অগাস্ট হত্যা মামলা করেন নিহতের মা সাহিদা বেগম।
একইদিন দেলপাড়া এলাকায় গুলিতে মারা যান ১৮ বছর বয়সী মো. ইয়াছিন। তার ভাই মো. সিপন পরে ২৮ অগাস্ট থানায় হত্যা মামলা করেন।
ওইদিন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের ভূঁইগড় এলাকায় মারা যান পারভেজ। ২৩ বছর বয়সী এ যুবকের মাথায় গুলি লাগে। তার বাবা সোহরাব মিয়া ২২ অগাস্ট থানায় মামলা করেন।
একই এলাকায় ২২ জুলাই গুলিতে মারা যান আব্দুর রহমান (৬৬)। পরে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করেন তার ছেলে মো. ফয়সাল।
এদিকে, চলতি বছরের ৮ মে রাতে নগরীর দেওভোগে আইভীর বাসভবন ‘চুনকা কুটিরে’ অভিযান চালায় পুলিশ। এলাকাবাসীর বাধায় রাতভর ওই বাড়িতেই অবস্থান করে পুলিশ। পরে সকালে আইভী স্বেচ্ছায় পুলিশের গাড়িতে ওঠেন।
পথে বঙ্গবন্ধু সড়কের কালিরবাজার মোড়ে আইভীকে বহন করা পুলিশের গাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়ে স্থানীয় যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
পরে ১২ মে রাতে এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে, যেখানে আইভীর সমর্থক আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়। এ মামলায় স্থানীয় এক সংবাদকর্মী ও তার পরিবারের দুইজন সদস্যও গ্রেপ্তার হন।



















