ঢাকা ১১:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে প্রতারণা

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৬:৫৭:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৪২ জন পড়েছেন
ইলিশের এখন ভরা মৌসুম। আর তা যদি হয় পদ্মা ও মেঘনার, তাহলে তো কথাই নেই। তবে এমন ভরা মৌসুম হলেও নানা কারণে এখন সাগর ও  নদীতে মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ। তাই বাজারে দামও চড়া।

‘তবে সস্তায় ইলিশ মিলছে। তাও খোদ চাঁদপুরের পাইকারি মাছ বাজার বড়স্টেশনে’- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন চটকদার ও লোভনীয় বিজ্ঞাপনের দিকে চোখ পড়ে অনেকের। বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে অনেকে ইলিশের আগাম বুকিংও দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ প্রতারিত হতে হয় তাদের।

বুকিং দেওয়া ইলিশ না পেয়ে ছুটে যান চাঁদপুরে। সেখানেও নেই বিজ্ঞাপনদাতা। এ নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানান, প্রতারিত ক্রেতারা। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত মাছ ব্যবসায়ীদেরও পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।
নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে রাজধানীর একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জানান, তিনি নিজেই অনলাইনে কম দামে ইলিশ বিক্রির চটকদার  বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, ইলিশ বুকিং দিতে আগাম টাকা পাঠাতে হবে। তার জন্য তাঁর কাছে ৫০০ টাকা চাওয়া হয়। এতে সন্দেহ হলে সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন তিনি। তার পরও তাঁর সঙ্গে প্রচারক চক্র মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে।

তবে  শেষপর্যন্ত চাঁদপুরে যোগাযোগ করে এ যাত্রায় রক্ষা পান তিনি। ঢাকার ওই সাংবাদিকের মতো জয়পুরহাটের আরেক সাংবাদিক একই প্রতারক দলের কবলে পড়েন। সস্তায় ইলিশ দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে তিনটি বুকিংয়ের বিপরিতে ১৫০০ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।রবিবার দুপুরে চাঁদপুর বড়স্টেশন পাইকারি মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ে ইলিশ না পেয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই এসেছেন প্রতারকের খোঁজে। কিন্তু পুরো বাজার ঘুরেফিরে এবং মুঠোফোনে কল দিয়ে এমন কাউকে খুঁজে পাননি তারা। একপর্যায়ে ক্ষোভ আর কষ্টের কথা বলে মলিন মুখে ফিরে যান। কুমিল্লার আলেখারচরের জাকির হোসেন তাদেরই একজন। এক সপ্তাহ আগে তিনি আরো কয়েকজন মিলে চারটি বুকিং দেন। চক্রটির দেওয়া মুঠোফোনে সবমিলিয়ে দুই হাজার টাকা বিকাশ করেন। কিন্তু সপ্তাহ শেষ হলেও ইলিশ পৌঁছায়নি। তাই নিরুপায় হয়ে চাঁদপুরে আসেন মাছ বিক্রেতার খোঁজে। কিন্তু এসে দেখেন নাম-ঠিকানা এবং মুঠোফোন নম্বর- সবই ভুয়া। একই দিন এমন আরো বেশ কয়েকজনকে প্রতারণার শিকার হতে দেখা যায়।

চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শবেবরাত বলেন, প্রতারণার ঘটনায় বিড়ম্বনায় পড়ছেন প্রকৃত মাছ ব্যবসায়ীরা। তাই প্রতারক চক্রকে ধরতে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চান তিনি।

অন্যদিকে, চাঁদপুরে সস্তায় ইলিশ বিক্রির অভিনব প্রতারণার শিকার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তের ক্রেতারা। বিষয়টি নজরে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনের। প্রতারণা এড়াতে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

জেলা প্রশাসক বলেন, শহরের বড়স্টেশনে যারা অনলাইনে ইলিশ বিক্রি করছেন, তারা কেউই বুকিংয়ের নামে আগাম টাকা-পয়সা নিচ্ছেন না। এ  বিষয়ে আগেই মাছ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব জানান, তাঁর কার্যালয়ে চাঁদপুরের অনলাইন মাছ ব্যবসায়ীদের তালিকা সাঁটানো আছে। তাছাড়া বেশকিছুদিন ধরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে, কেউ যাতে যাচাই ছাড়া চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ইলিশ কেনার নামে প্রতারণার শিকার না হন। তিনি বলেন, একসময় জ্বিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা খ্যাত এমন কিছু জেলা থেকে একশ্রেণির প্রতারক চক্র এখন অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে এমন কাজ করছে। এরমধ্যে নড়াইলসহ কয়েকটি জেলার নাম উঠে এসেছে।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে প্রতারণা

আপডেট সময় : ০৬:৫৭:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ইলিশের এখন ভরা মৌসুম। আর তা যদি হয় পদ্মা ও মেঘনার, তাহলে তো কথাই নেই। তবে এমন ভরা মৌসুম হলেও নানা কারণে এখন সাগর ও  নদীতে মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ। তাই বাজারে দামও চড়া।

‘তবে সস্তায় ইলিশ মিলছে। তাও খোদ চাঁদপুরের পাইকারি মাছ বাজার বড়স্টেশনে’- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন চটকদার ও লোভনীয় বিজ্ঞাপনের দিকে চোখ পড়ে অনেকের। বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে অনেকে ইলিশের আগাম বুকিংও দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ প্রতারিত হতে হয় তাদের।

বুকিং দেওয়া ইলিশ না পেয়ে ছুটে যান চাঁদপুরে। সেখানেও নেই বিজ্ঞাপনদাতা। এ নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানান, প্রতারিত ক্রেতারা। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত মাছ ব্যবসায়ীদেরও পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।
নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে রাজধানীর একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জানান, তিনি নিজেই অনলাইনে কম দামে ইলিশ বিক্রির চটকদার  বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, ইলিশ বুকিং দিতে আগাম টাকা পাঠাতে হবে। তার জন্য তাঁর কাছে ৫০০ টাকা চাওয়া হয়। এতে সন্দেহ হলে সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন তিনি। তার পরও তাঁর সঙ্গে প্রচারক চক্র মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে।

তবে  শেষপর্যন্ত চাঁদপুরে যোগাযোগ করে এ যাত্রায় রক্ষা পান তিনি। ঢাকার ওই সাংবাদিকের মতো জয়পুরহাটের আরেক সাংবাদিক একই প্রতারক দলের কবলে পড়েন। সস্তায় ইলিশ দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে তিনটি বুকিংয়ের বিপরিতে ১৫০০ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।রবিবার দুপুরে চাঁদপুর বড়স্টেশন পাইকারি মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ে ইলিশ না পেয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই এসেছেন প্রতারকের খোঁজে। কিন্তু পুরো বাজার ঘুরেফিরে এবং মুঠোফোনে কল দিয়ে এমন কাউকে খুঁজে পাননি তারা। একপর্যায়ে ক্ষোভ আর কষ্টের কথা বলে মলিন মুখে ফিরে যান। কুমিল্লার আলেখারচরের জাকির হোসেন তাদেরই একজন। এক সপ্তাহ আগে তিনি আরো কয়েকজন মিলে চারটি বুকিং দেন। চক্রটির দেওয়া মুঠোফোনে সবমিলিয়ে দুই হাজার টাকা বিকাশ করেন। কিন্তু সপ্তাহ শেষ হলেও ইলিশ পৌঁছায়নি। তাই নিরুপায় হয়ে চাঁদপুরে আসেন মাছ বিক্রেতার খোঁজে। কিন্তু এসে দেখেন নাম-ঠিকানা এবং মুঠোফোন নম্বর- সবই ভুয়া। একই দিন এমন আরো বেশ কয়েকজনকে প্রতারণার শিকার হতে দেখা যায়।

চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শবেবরাত বলেন, প্রতারণার ঘটনায় বিড়ম্বনায় পড়ছেন প্রকৃত মাছ ব্যবসায়ীরা। তাই প্রতারক চক্রকে ধরতে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চান তিনি।

অন্যদিকে, চাঁদপুরে সস্তায় ইলিশ বিক্রির অভিনব প্রতারণার শিকার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তের ক্রেতারা। বিষয়টি নজরে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনের। প্রতারণা এড়াতে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

জেলা প্রশাসক বলেন, শহরের বড়স্টেশনে যারা অনলাইনে ইলিশ বিক্রি করছেন, তারা কেউই বুকিংয়ের নামে আগাম টাকা-পয়সা নিচ্ছেন না। এ  বিষয়ে আগেই মাছ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব জানান, তাঁর কার্যালয়ে চাঁদপুরের অনলাইন মাছ ব্যবসায়ীদের তালিকা সাঁটানো আছে। তাছাড়া বেশকিছুদিন ধরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে, কেউ যাতে যাচাই ছাড়া চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ইলিশ কেনার নামে প্রতারণার শিকার না হন। তিনি বলেন, একসময় জ্বিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা খ্যাত এমন কিছু জেলা থেকে একশ্রেণির প্রতারক চক্র এখন অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে এমন কাজ করছে। এরমধ্যে নড়াইলসহ কয়েকটি জেলার নাম উঠে এসেছে।