ঢাকা ০২:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাইয়ে কুখ্যাত রাইফেল ক্লাবের পতন হয় জনতার হাতে

সোজাসাপটা রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০১:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৩ জন পড়েছেন

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত রাইফেল ক্লাব। সরকারি স্থাপনা হলেও রাইফেল ক্লাব ছিল শামীম ওসমানের অঘোষিত অফিস ও টর্চার সেল। এখানে বসেই নারায়ণগঞ্জ শহরের রাজনীতি ও নানান অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতেন শামীম ওসমান। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের আগেই পতন ঘটে এই কুখ্যাত রাইফেল ক্লাবের। আন্দোলন দমনে শামীম ওসমানের বর্বরতায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাইফেল ক্লাবে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে জনতা।
পূর্বে শহরের বালুরমাঠ এলাকায় রাইফেল ক্লাব নামে আরেকটি অফিস ছিল শামীম ওসমানের। ৯০র দশকের শুরু দিকে রাইফেল ক্লাবটি ব্যাআহার শুরু করেন শামীম ওসমান। ২০০১ সালের ১৬ জুন শামীম ওসমানের ওপর বোমা হামলার হয় এই রাইফেল ক্লাবে। এরপরই বালুরমাঠে থাকা রাইফেল ক্লাবটি পরিত্যক্ত করা হয় এবং সেখানে নিহতদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। ২০০১ সালে নির্বাচনে হেরে গেলে দেশ ছেড়ে কানাডা পালিয়ে যান শামীম ওসমান। দীর্ঘদিন বিদেশে পলাতক থেকেই কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশে ফিরে আসেন শামীম ওসমান। ততদিনে রাইফেল ক্লাবের জায়গা পরিবর্তন হয়ে বর্তমানের জায়গায় চলে এসেছে। দেশে ফিরেই পুনরায় রাইফেল ক্লাবের দখল নেন শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জের ব্যাবসায়ী থেকে শুরু করে সাত খুন মামলায় ফাঁসির আসামি নূর হোসেনের মত সন্ত্রাসীরাও রাইফেল ক্লাবে শামীম ওসমানের কাছে হাজিরা দিত।
রাইফেল ক্লাবের ভেতরে ছিল শামীম ওসমানের টর্চারসেল। শামীম ওসমানের মতের বিরোধীতা করলেই রাইফেল ক্লাবে ডেকে নিয়ে টর্চার করা হত। ২০১১ সালের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ শহর গুম ও কুনের শহর হিসেবে দেশব্যাপী সমালোচিত হতে থাকে। আশিক, চঞ্চল, বুলু, ত্বকী, সাত খুনসহ একের পর এক হাইপ্রোফাইল হত্যাকান্ডের ঘটনায় সন্ত্রাসের জনপদে পরিনত হয় নারায়ণগঞ্জ। এসকল ঘটনার প্রতিটিতেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই রাইফেল ক্লাব।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ শহরের ঝুট সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ, ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, ফুটপাতের হকার নিয়ন্ত্রণ, সরকারি বিভিন্ন টেন্ডারসহ পুরে শহর এই রাইফেল ক্লাব থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হত। রাইফেল ক্লাবে ডাক পড়লে সাধারণ মানুষের আত্মা কেঁপে উঠতো। নগরবাসীর কাছে এক আতংকের নাম ছিল এই রাইফেল ক্লাব।
২০২৪ সালে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতার ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায়ও আলোচিত ছিল রাইফেল ক্লাব। ১৯ জুলাই শতশত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়ে আন্দোলন দমন করতে নামেন শামীম ওসমান। এসময় অত্যাধুনিক সব অস্ত্র ব্যাবহার করতে দেখা যায় শামীম ওসমান ও তার অনুসারীদের। এসকল অস্ত্র রাইফেল ক্লাব থেকেই নিয়ে আসেন শামীম ওসমান।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসকল ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে জনসাধারণের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা যায়। আন্দোলনের দ্বিতীয় দফায় ৪ আগষ্ট ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা শহরের রাইফেল ক্লাবে হামলা চালায়। এসময় তারা শামীম ওসমানের ব্যানার, ফেস্টুন ও ছবি ভাংচুর করা হয়। একপর্যায়ে রাইফেল ক্লাবে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
এরই মাধ্যমে প্রায় দেড় দশক পর নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি ও অপরাধ জনতের নিয়ন্ত্রণ হারায় শামীম ওসমানের রাইফেল ক্লাব। এ ঘটনার পরের দিন পাঁচ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

জুলাইয়ে কুখ্যাত রাইফেল ক্লাবের পতন হয় জনতার হাতে

আপডেট সময় : ০১:৫৬:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত রাইফেল ক্লাব। সরকারি স্থাপনা হলেও রাইফেল ক্লাব ছিল শামীম ওসমানের অঘোষিত অফিস ও টর্চার সেল। এখানে বসেই নারায়ণগঞ্জ শহরের রাজনীতি ও নানান অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতেন শামীম ওসমান। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের আগেই পতন ঘটে এই কুখ্যাত রাইফেল ক্লাবের। আন্দোলন দমনে শামীম ওসমানের বর্বরতায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাইফেল ক্লাবে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে জনতা।
পূর্বে শহরের বালুরমাঠ এলাকায় রাইফেল ক্লাব নামে আরেকটি অফিস ছিল শামীম ওসমানের। ৯০র দশকের শুরু দিকে রাইফেল ক্লাবটি ব্যাআহার শুরু করেন শামীম ওসমান। ২০০১ সালের ১৬ জুন শামীম ওসমানের ওপর বোমা হামলার হয় এই রাইফেল ক্লাবে। এরপরই বালুরমাঠে থাকা রাইফেল ক্লাবটি পরিত্যক্ত করা হয় এবং সেখানে নিহতদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। ২০০১ সালে নির্বাচনে হেরে গেলে দেশ ছেড়ে কানাডা পালিয়ে যান শামীম ওসমান। দীর্ঘদিন বিদেশে পলাতক থেকেই কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশে ফিরে আসেন শামীম ওসমান। ততদিনে রাইফেল ক্লাবের জায়গা পরিবর্তন হয়ে বর্তমানের জায়গায় চলে এসেছে। দেশে ফিরেই পুনরায় রাইফেল ক্লাবের দখল নেন শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জের ব্যাবসায়ী থেকে শুরু করে সাত খুন মামলায় ফাঁসির আসামি নূর হোসেনের মত সন্ত্রাসীরাও রাইফেল ক্লাবে শামীম ওসমানের কাছে হাজিরা দিত।
রাইফেল ক্লাবের ভেতরে ছিল শামীম ওসমানের টর্চারসেল। শামীম ওসমানের মতের বিরোধীতা করলেই রাইফেল ক্লাবে ডেকে নিয়ে টর্চার করা হত। ২০১১ সালের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ শহর গুম ও কুনের শহর হিসেবে দেশব্যাপী সমালোচিত হতে থাকে। আশিক, চঞ্চল, বুলু, ত্বকী, সাত খুনসহ একের পর এক হাইপ্রোফাইল হত্যাকান্ডের ঘটনায় সন্ত্রাসের জনপদে পরিনত হয় নারায়ণগঞ্জ। এসকল ঘটনার প্রতিটিতেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই রাইফেল ক্লাব।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ শহরের ঝুট সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ, ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, ফুটপাতের হকার নিয়ন্ত্রণ, সরকারি বিভিন্ন টেন্ডারসহ পুরে শহর এই রাইফেল ক্লাব থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হত। রাইফেল ক্লাবে ডাক পড়লে সাধারণ মানুষের আত্মা কেঁপে উঠতো। নগরবাসীর কাছে এক আতংকের নাম ছিল এই রাইফেল ক্লাব।
২০২৪ সালে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতার ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায়ও আলোচিত ছিল রাইফেল ক্লাব। ১৯ জুলাই শতশত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়ে আন্দোলন দমন করতে নামেন শামীম ওসমান। এসময় অত্যাধুনিক সব অস্ত্র ব্যাবহার করতে দেখা যায় শামীম ওসমান ও তার অনুসারীদের। এসকল অস্ত্র রাইফেল ক্লাব থেকেই নিয়ে আসেন শামীম ওসমান।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসকল ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে জনসাধারণের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা যায়। আন্দোলনের দ্বিতীয় দফায় ৪ আগষ্ট ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা শহরের রাইফেল ক্লাবে হামলা চালায়। এসময় তারা শামীম ওসমানের ব্যানার, ফেস্টুন ও ছবি ভাংচুর করা হয়। একপর্যায়ে রাইফেল ক্লাবে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
এরই মাধ্যমে প্রায় দেড় দশক পর নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি ও অপরাধ জনতের নিয়ন্ত্রণ হারায় শামীম ওসমানের রাইফেল ক্লাব। এ ঘটনার পরের দিন পাঁচ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।