ঢাকা ০৫:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
টাকার কাছে হেরে যাচ্ছেন দলের দুঃসময়ের কান্ডারীরাও

নির্বাচকে ঘিরে সক্রিয় ব্যবসায়ী নেতারা!

সাব্বির হোসেন 
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৭:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫
  • / ৮২ জন পড়েছেন

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আবারও দেখা দিচ্ছে অস্থিরতা ও উৎসুক জনমত—আর তার কেন্দ্রে রয়েছেন একদল ব্যবসায়ী নেতা, যাঁরা সামনে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাঁরা হলেন- নারায়ণগঞ্জের পরিচিত মুখ শাহ্ আলম, মাসুদুজ্জামান মাসুদ ও আনোয়ার হোসেন মোল্লা। ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা হলেও এখন তাঁরা সরাসরি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এই তিন নেতার সাম্প্রতিক সক্রিয়তা বিশেষ করে ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর থেকেই চোখে পড়ার মতো। রাজনৈতিক ময়দানে খুব একটা দৃশ্যমান না হলেও দলীয় কার্যক্রম ও প্রশাসনিক ঘনিষ্ঠতার সুযোগে বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা। আর এখন দলীয় মনোনয়ন পেতে উঠেপড়ে লেগেছেন সকলে।
অতীত ভূমিকা ছিল সীমিতঃ
আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক মেয়াদে চলার সময়েও এ তিন ব্যবসায়ী নেতা মাঠের রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় ছিলেন না। দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থেকেছেন বহুবার, এমনকি রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁদের কোনো উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। অথচ দল যখন ঘোর সংকটে, তখন তাঁরা অনেকটা আত্মগোপনে ছিলেন।
তবে বর্তমানে নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই হঠাৎ করে তাঁরা নিজ নিজ এলাকা ও কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠে নেমেছেন। দিচ্ছেন শোডাউন, সামাজিক কাজের অংশ নিচ্ছেন এবং গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এমনকি নিজেদের ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা বলছেন, এবার আর পেছনে থাকবেন না।
শাহ্ আলম: ব্যবসা থেকে সরাসরি রাজনীতিতে
শাহ্ আলম, নারায়ণগঞ্জের একজন প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। এক সময় জেলা চেম্বার অব কমার্সে তাঁর যথেষ্ট প্রভাব ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁকে দলীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে দেখা না গেলেও, হঠাৎ করেই তিনি নিজেকে একজন ‘আদর্শ ও ত্যাগী বিএনপি নেতা’ হিসেবে তুলে ধরছেন।
আওয়ামী শাসন আমলে দলীয় কার্যক্রম ও দলের পাশে না থাকার কারণ হিসেবে বেশকিছুদিন এক সভায় তিনি বলেছিলেন, যে আওয়ামী সরকারের মামলা ও গ্রেফতার থেকে বাঁচতে এবং ব্যবসাবাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে তিনি ও তাঁর অনুসারীরা সে সময় নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং পেশাজীবীদের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করে নিজের প্রার্থিতার ভিত্তি মজবুত করতে চাইছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, তিনি এবার নারায়ণগঞ্জ ৪ ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে বিএনপি প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন চাইবেন।
মাসুদুজ্জামান মাসুদ: পরিচিত মুখ, বিতর্কিত অতীত!
মাসুদুজ্জামান মাসুদ একসময় নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে অতীতে নানা রকম অনিয়ম ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠলেও, প্রমাণ না মেলায় সেগুলো ধামাচাপা পড়ে যায়।
বর্তমানে তিনি ব্যাপক গণসংযোগে নেমে পড়েছেন। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছাতে শুরু করেছেন। তাঁকে ঘিরে গড়ে উঠছে এক নতুন বলয়। মাসুদের অন্যতম কৌশল হলো বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে উপস্থিত সবার কাছে নিজেকে ‘নেতৃত্বের যোগ্য প্রার্থী’ হিসেবে উপস্থাপন করা।
গত ১৪ জুন নগরীর বরফকল মাঠে ১৫ হাজার মানুষের ঈদ পূর্নমিলণীর নামে ভূড়িভোজের আয়োজন করে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা মুখে পরেছিলেন তিনি। নগরীরবাসীর অনেকের ভাষ্য অনুযায়ী, এটাকি শুধুই ঈদ প্র্নূমিলণী ছিলো নাকি রাজনৈতিক শো-ডাউন?
আনোয়ার হোসেন মোল্লা: অর্থনীতির কুশলী থেকে রাজনীতির মঞ্চে
আনোয়ার হোসেন মোল্লা দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবসায়ী সংগঠনের মাধ্যমে নিজ এলাকা রুপগঞ্জ সহ আশেপাশের এলাকায় বেশ পরিচিত মুখ। তবে তাঁর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা তেমন চোখে পড়েনি অতীতে। কিন্তু চলতি বছরের দ্বিতীয় ভাগ থেকেই তাঁর গতিবিধি একেবারেই বদলে গেছে। জামায়াতে ইসলামী’র পক্ষ থেকে আনোয়ার হোসেন মোল্লা নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন একাধিক কৌশল নিয়ে। তিনি একাধিক ওয়ার্ডে তাঁর ‘জনপ্রিয়তা যাচাই’ করতে উঠান বৈঠক করেছেন। এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধানে নেতৃত্ব দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর কর্মসূচিগুলোতে দলীয় নেতাদেরও বেশ সরব ভূমিকা দেখা যাচ্ছে।
তৃণমূলে মিশ্র প্রতিক্রিয়াঃ
স্থানীয় বিএনপি ও জামাত নেতাদের মধ্যে এদের নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই মনে করছেন, “এই নেতারা দলের সংকটকালে মাঠে ছিলেন না, এখন ভালো সময় দেখে এসে মনোনয়ন চাচ্ছেন।” আবার কেউ কেউ বলছেন, “ব্যবসায়ীদের অনেক টাকা আছে, তাঁরা নির্বাচনে খরচ করতে পারবেন, তাই দলে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।”
একজন থানা পর্যায়ের সভাপতি বলেন,আদর্শিক রাজনীতি এখন দলে নেই বললেই চলে। অনেক ত্যাগী নেতাই আজ কোণঠাসা, অথচ ব্যবসায়ী নেতারা সোজা ঢুকে মনোনয়ন চাইছে। এটা দুঃখজনক।
মনোনয়ন পেতে লবিং শুরুঃ
জানা গেছে, তিনজনই ইতিমধ্যে দলের হাইকমান্ডের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে মনোনয়নের ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা সেরে ফেলেছেন। বিশেষ করে শাহ্ আলম ও মাসুদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তাঁরা ঢাকায় একাধিকবার দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে বসেছেন। সেখানে তাঁরা নিজেদের যোগ্যতা ও নির্বাচনী পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ব্যবসায়ী নেতাদের রাজনৈতিক মাঠে আসা নতুন কোনো বিষয় নয়, তবে নারায়ণগঞ্জে এই প্রবণতা এবার একটু বেশি চোখে পড়ছে। এতে একদিকে যেমন রাজনৈতিক তৃণমূল ক্ষুব্ধ, অন্যদিকে নির্বাচন ঘিরে অর্থনৈতিক দাপটও বাড়ছে।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এমনিতেই বিভিন্ন গ্রুপিং ও উপগ্রুপিং সক্রিয়। এর মধ্যে নতুন করে ব্যবসায়ী নেতাদের সক্রিয়তা নির্বাচনের মাঠকে আরও জটিল করে তুলতে পারে!
নগরীর সুশীল সমাজের ভাষ্যমতে,নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে পুরনো মুখগুলো নতুন পরিচয়ে হাজির হচ্ছেন। ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে হঠাৎ করে আসা এই নেতারা এখন জনগণের দৃষ্টি কাড়ছেন। তবে আদৌ তাঁরা কতটা গ্রহণযোগ্য এবং দলের মনোনয়ন পেতে সফল হবেন তা সময়ই বলে দেবে। আপাতত শুধু এটুকু বলা যায় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

টাকার কাছে হেরে যাচ্ছেন দলের দুঃসময়ের কান্ডারীরাও

নির্বাচকে ঘিরে সক্রিয় ব্যবসায়ী নেতারা!

আপডেট সময় : ০৭:৪৭:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আবারও দেখা দিচ্ছে অস্থিরতা ও উৎসুক জনমত—আর তার কেন্দ্রে রয়েছেন একদল ব্যবসায়ী নেতা, যাঁরা সামনে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাঁরা হলেন- নারায়ণগঞ্জের পরিচিত মুখ শাহ্ আলম, মাসুদুজ্জামান মাসুদ ও আনোয়ার হোসেন মোল্লা। ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা হলেও এখন তাঁরা সরাসরি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এই তিন নেতার সাম্প্রতিক সক্রিয়তা বিশেষ করে ৫ আগস্ট ২০২৪ এর পর থেকেই চোখে পড়ার মতো। রাজনৈতিক ময়দানে খুব একটা দৃশ্যমান না হলেও দলীয় কার্যক্রম ও প্রশাসনিক ঘনিষ্ঠতার সুযোগে বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা। আর এখন দলীয় মনোনয়ন পেতে উঠেপড়ে লেগেছেন সকলে।
অতীত ভূমিকা ছিল সীমিতঃ
আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক মেয়াদে চলার সময়েও এ তিন ব্যবসায়ী নেতা মাঠের রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় ছিলেন না। দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থেকেছেন বহুবার, এমনকি রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁদের কোনো উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। অথচ দল যখন ঘোর সংকটে, তখন তাঁরা অনেকটা আত্মগোপনে ছিলেন।
তবে বর্তমানে নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই হঠাৎ করে তাঁরা নিজ নিজ এলাকা ও কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠে নেমেছেন। দিচ্ছেন শোডাউন, সামাজিক কাজের অংশ নিচ্ছেন এবং গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এমনকি নিজেদের ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা বলছেন, এবার আর পেছনে থাকবেন না।
শাহ্ আলম: ব্যবসা থেকে সরাসরি রাজনীতিতে
শাহ্ আলম, নারায়ণগঞ্জের একজন প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। এক সময় জেলা চেম্বার অব কমার্সে তাঁর যথেষ্ট প্রভাব ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁকে দলীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে দেখা না গেলেও, হঠাৎ করেই তিনি নিজেকে একজন ‘আদর্শ ও ত্যাগী বিএনপি নেতা’ হিসেবে তুলে ধরছেন।
আওয়ামী শাসন আমলে দলীয় কার্যক্রম ও দলের পাশে না থাকার কারণ হিসেবে বেশকিছুদিন এক সভায় তিনি বলেছিলেন, যে আওয়ামী সরকারের মামলা ও গ্রেফতার থেকে বাঁচতে এবং ব্যবসাবাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে তিনি ও তাঁর অনুসারীরা সে সময় নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং পেশাজীবীদের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করে নিজের প্রার্থিতার ভিত্তি মজবুত করতে চাইছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, তিনি এবার নারায়ণগঞ্জ ৪ ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে বিএনপি প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন চাইবেন।
মাসুদুজ্জামান মাসুদ: পরিচিত মুখ, বিতর্কিত অতীত!
মাসুদুজ্জামান মাসুদ একসময় নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে অতীতে নানা রকম অনিয়ম ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠলেও, প্রমাণ না মেলায় সেগুলো ধামাচাপা পড়ে যায়।
বর্তমানে তিনি ব্যাপক গণসংযোগে নেমে পড়েছেন। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছাতে শুরু করেছেন। তাঁকে ঘিরে গড়ে উঠছে এক নতুন বলয়। মাসুদের অন্যতম কৌশল হলো বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে উপস্থিত সবার কাছে নিজেকে ‘নেতৃত্বের যোগ্য প্রার্থী’ হিসেবে উপস্থাপন করা।
গত ১৪ জুন নগরীর বরফকল মাঠে ১৫ হাজার মানুষের ঈদ পূর্নমিলণীর নামে ভূড়িভোজের আয়োজন করে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা মুখে পরেছিলেন তিনি। নগরীরবাসীর অনেকের ভাষ্য অনুযায়ী, এটাকি শুধুই ঈদ প্র্নূমিলণী ছিলো নাকি রাজনৈতিক শো-ডাউন?
আনোয়ার হোসেন মোল্লা: অর্থনীতির কুশলী থেকে রাজনীতির মঞ্চে
আনোয়ার হোসেন মোল্লা দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবসায়ী সংগঠনের মাধ্যমে নিজ এলাকা রুপগঞ্জ সহ আশেপাশের এলাকায় বেশ পরিচিত মুখ। তবে তাঁর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা তেমন চোখে পড়েনি অতীতে। কিন্তু চলতি বছরের দ্বিতীয় ভাগ থেকেই তাঁর গতিবিধি একেবারেই বদলে গেছে। জামায়াতে ইসলামী’র পক্ষ থেকে আনোয়ার হোসেন মোল্লা নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন একাধিক কৌশল নিয়ে। তিনি একাধিক ওয়ার্ডে তাঁর ‘জনপ্রিয়তা যাচাই’ করতে উঠান বৈঠক করেছেন। এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধানে নেতৃত্ব দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর কর্মসূচিগুলোতে দলীয় নেতাদেরও বেশ সরব ভূমিকা দেখা যাচ্ছে।
তৃণমূলে মিশ্র প্রতিক্রিয়াঃ
স্থানীয় বিএনপি ও জামাত নেতাদের মধ্যে এদের নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই মনে করছেন, “এই নেতারা দলের সংকটকালে মাঠে ছিলেন না, এখন ভালো সময় দেখে এসে মনোনয়ন চাচ্ছেন।” আবার কেউ কেউ বলছেন, “ব্যবসায়ীদের অনেক টাকা আছে, তাঁরা নির্বাচনে খরচ করতে পারবেন, তাই দলে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।”
একজন থানা পর্যায়ের সভাপতি বলেন,আদর্শিক রাজনীতি এখন দলে নেই বললেই চলে। অনেক ত্যাগী নেতাই আজ কোণঠাসা, অথচ ব্যবসায়ী নেতারা সোজা ঢুকে মনোনয়ন চাইছে। এটা দুঃখজনক।
মনোনয়ন পেতে লবিং শুরুঃ
জানা গেছে, তিনজনই ইতিমধ্যে দলের হাইকমান্ডের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে মনোনয়নের ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা সেরে ফেলেছেন। বিশেষ করে শাহ্ আলম ও মাসুদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তাঁরা ঢাকায় একাধিকবার দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে বসেছেন। সেখানে তাঁরা নিজেদের যোগ্যতা ও নির্বাচনী পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ব্যবসায়ী নেতাদের রাজনৈতিক মাঠে আসা নতুন কোনো বিষয় নয়, তবে নারায়ণগঞ্জে এই প্রবণতা এবার একটু বেশি চোখে পড়ছে। এতে একদিকে যেমন রাজনৈতিক তৃণমূল ক্ষুব্ধ, অন্যদিকে নির্বাচন ঘিরে অর্থনৈতিক দাপটও বাড়ছে।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এমনিতেই বিভিন্ন গ্রুপিং ও উপগ্রুপিং সক্রিয়। এর মধ্যে নতুন করে ব্যবসায়ী নেতাদের সক্রিয়তা নির্বাচনের মাঠকে আরও জটিল করে তুলতে পারে!
নগরীর সুশীল সমাজের ভাষ্যমতে,নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে পুরনো মুখগুলো নতুন পরিচয়ে হাজির হচ্ছেন। ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে হঠাৎ করে আসা এই নেতারা এখন জনগণের দৃষ্টি কাড়ছেন। তবে আদৌ তাঁরা কতটা গ্রহণযোগ্য এবং দলের মনোনয়ন পেতে সফল হবেন তা সময়ই বলে দেবে। আপাতত শুধু এটুকু বলা যায় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।