চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান জাকিরের ,বেপোয়ারা অনুসারীরা!

- আপডেট সময় : ০৭:৪৫:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
- / ৭৬ জন পড়েছেন
নারায়ণগঞ্জ শহর যেন রাজনীতির নামে অপরাধের এক পরীক্ষা,নিরীক্ষার মাঠে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি জেলার আলোচিত একটি ঘটনা কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে স্থানীয় রাজনীতি এবং ব্যবসায়িক অঙ্গন। সাবেক ছাত্রদল নেতা জাকির খানের নাম ও ছবি ব্যবহার করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র শহরের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অথচ চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, এই চক্রের বিরুদ্ধে জাকির খান নিজেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন, এমনকি তাঁর নামে খোলা অফিসে তালা দিয়ে ফেস্টুন-সাইনবোর্ড ছিঁড়ে ফেলেছেন। তারপরও থামছে না চাঁদাবাজি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রশাসন নীরব থাকায় দাপট বেড়ে চলেছে এসব দুষ্কৃতিকারীর।
ছাত্র রাজনীতিতে একসময় সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে মূল রাজনীতি থেকে অনেকটাই দূরে অবস্থান করছেন জাকির খান। দীর্ঘদিন ছাত্রদল করার পর সংগঠনটির ভেতর দ্বন্দ্ব-কলহে রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি। তবে হঠাৎ করেই আবার আলোচনায় উঠে আসে তাঁর নাম।
সম্প্রতি শহরের একাধিক এলাকায় জাকির খানের ছবি ও নাম দিয়ে পোস্টার, ব্যানার এবং ফেস্টুন ঝুলিয়ে একটি অফিস খোলা হয়। সেখানে তাঁর নামে একটি কথিত ‘জনসেবা কেন্দ্র’ চালানো হচ্ছিল, যেখানে বসে কয়েকজন যুবক চাঁদা আদায়, লোকজনকে হুমকি এবং বিভিন্ন দালালি কার্যক্রমে জড়িত ছিল।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জাকির খান বলেন, এই অফিস বা কার্যক্রমের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। যারা আমার নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করছে, তারা আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়। আমি নিজের উদ্যোগেই ওই অফিস বন্ধ করে দিয়েছি এবং ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেছি।
তিনি আরও জানান, বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় থানাকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
তবে নগরীর ব্যবসায়ীরা বলছে ভিন্ন কথা,শহরের চাষাড়া, ২ নম্বর রেলগেট, খানপুর ও দেওভোগ এলাকার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, একদল যুবক নিয়মিত তাদের কাছে চাঁদা দাবি করছে। তারা নিজেদেরকে ‘জাকির ভাইয়ের লোক’ পরিচয় দিয়ে বলে,জাকির ভাইয়ের নির্দেশ আছে, নিয়ম করে মাসে টাকা দিতে হবে। না দিলে কিন্তু বিপদ আছে!
একজন হোটেল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,আমার দোকান থেকে মাসে এক হাজার টাকা দাবি করা হয়। না দিলে দোকানে সমস্যা তৈরি করে। কিছুদিন আগে এক সহকর্মীকে মারধরও করা হয়েছে।
সূত্রনুসারে জানাযায়, গত কয়েকদিন আগে নগরীর টোকিও প্লাজার অফিস দখল নিয়ে পায়তারা চালায় তাঁর বেশ কিছু অনুসারী। পরে একপর্যায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে সেখান থেকে।
স্থানীয় সূত্রজানাযায়, জাকিরখান যেসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অস্থান নিয়েছে সেসকল চাঁদাবাজরাই তাঁর মিছিল মিটিংয়ের প্রথম সাড়ির নেতৃত্বদানকারী। এখন জনমনে প্রশ্ন তাহলে আই অস্থান আসলে কাদের বিরুদ্ধে?
এইদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতির নামে এই ধরনের চাঁদাবাজি নতুন কিছু নয়। তবে বর্তমান ঘটনা ভিন্ন এ কারণে যে, যাঁর নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করছে। তিনি নিজেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তবুও প্রশাসনের দৃশ্যমান উদ্যোগ না থাকায় চক্রটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
জাকির খান বিএনপি ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে একসময় যুক্ত থাকলেও এখন তেমন সক্রিয় নন। তবে তাঁর নাম ব্যবহার হওয়ায় বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত দলটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন চলছে।
সদর মডেল থানার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে সরাসরি অভিযুক্ত না হলে বা কেউ লিখিত অভিযোগ না দিলে আমাদের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন।”
অথচ জাকির খান নিজেই বলছেন, তিনি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাহলে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? এই প্রশ্ন এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে নারায়ণগঞ্জ শহরের সর্বত্র।
নগরীর সচেতন মহল বলছেন, সাবেক ছাত্রনেতা জাকির খানের নিজস্ব উদ্যোগে নিজের নাম ব্যবহার করে চলা অপকর্ম বন্ধে পদক্ষেপ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে এটা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন প্রশাসনের নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের আইনের আওতায় আনা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দায়বদ্ধতা। না হলে এ ধরনের ঘটনা নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
নারায়ণগঞ্জবাসী এখন অপেক্ষায়, কবে চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে বাস্তব পদক্ষেপ দেখা যাবে। আর জাকির খানের মতো যারা নিজেদের নাম ব্যবহার করে অপকর্মে বাধা দিতে চান, তাঁরা যেন প্রশাসনের কাছ থেকে কার্যকর সহযোগিতা পান—এই প্রত্যাশা সকলের।