জেল থেকে বের হয়ে ফের বেপরোয়া জুলাই অভ্যুত্থানের ৪ হত্যা মামলার আসামী ইসমাইল শেখ

সোজাসাপটা রিপোর্ট

নারায়ণগঞ্জে প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারী এবং হত্যা মামলার আসামী নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। পুলিশ তাদের দেখেও অদৃশ্য কারণে তাদের গ্রেফতার করছে না। এমন অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার পুলিশদের বিরুদ্ধে। তবে পুলিশ বলছে ফতুল্লা থানায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারী ও হত্যা মামলার আসামীদের পুলিশ গ্রেফতার করছে এবং তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
সোজাসাপটার অনুসন্ধান বলছে ভিন্ন কথা। পুলিশের কথার সাথে কাজের রয়েছে বিশাল ফারাক। ফারাকের ফাঁকফোকর এবার বের করার পালা।
সোজাসাপটার অনুসন্ধানী টিমের হাতে এসছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারী এবং হত্যা মামলার আসামী ফতুল্লা থানার বক্তাবলী ইউনিয়নের পূর্ব গোপালনগরের মৃত সেকান্দর বেপারীর ছেলে ইসমাইল শেখের তথ্য।
তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে চোখ কপালে উঠার মতো অবস্থা সোজাসাপটার অনুসন্ধানী টিমের। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আওয়ামীলীগের সুনজরে থাকতে হেন কোন কাজ ছিলো না ইসমাইল শেখ করেনি। নিজ পিতা শেখ বংশের না হলেও স্বৈরাচার হাসিনার নামের সাথে মিলিয়ে নিজের নামের শেষে “শেখ” শব্দটি যুক্ত করে উন্মুক্ত করেছে নিজের অবৈধ আয়ের পথ । সেই সাথে শেখ নামের বদৌলতে হাতিয়ে নিয়েছেন অসংখ্য মানুষের জমি। এলাকার সাধারণ জনগণ যাকে এক নামে চেনে ভূমিদস্যু ইসমাইল হিসেবে।
ফতুল্লার বক্তাবলীর আওয়ামীলীগের দোসর হাজারো অপকর্মের হোতা ও শেল্ডারদাতা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত চেয়ারম্যান ও থানার দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর মেম্বারের আস্কারায় ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করতো ইসমাইল। এলাকায় সন্ত্রাসের সাম্রাজ্য কায়েমের সাথে সাথে একেরপর এক অপরাধে জড়িয়ে নিজেকে আওয়ামী সাম্রাজ্যের রাজা ভাবা শুরু করেন ইসমাইল শেখ। অসহায় মানুষের জমি দখল, মাদক ব্যবসায় একচ্ছত্র আধিপত্য সহ নানা পাপের কাজে জড়িয়ে পড়েন ভূমিদস্যু ইসমাইল। পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় অবশেষে ২৪এর জুলাই-আগষ্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের উপর হামলা ও হত্যার মতো ঘটনার সাথে যুক্ত হোন তিনি।
নিজেকে সর্বেসর্বা ভাবা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা যখন গত বছরের ৫ আগষ্ট চোরের মতো ভারত পালিয়ে যান ঠিক তখনই গর্তে লুকায় তাঁর অপরাধ জগতের ইসমাইলরা। রাতারাতি টাকার কুমির বনে যাওয়া ইসমাইল শেখ টাকার জোরে এলাকায় ফিরলেও চোখ এড়ায়নি সাধারণ ভুক্তভুগী ও জুলাই অভ্যুত্থানে ইসমাইল শেখদের হামলায় নিহতদের স্বজনদের। ইসমাইল শেখের নামে ফতুল্লা থানায় মামলা রয়েছে অসংখ্য। সোজাসাপটার অনুসন্ধানী টিমের কাছেই আছে ডজন খানিক মামলার নথি। সাথে রয়েছে জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার ৪টি মামলার নথিও।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ৪ টি হত্যা মামলা সহ অসংখ্য মামলার আসামী কি করে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়? প্রশ্ন উঠেছে এলাকাবাসী সহ নিহতদের স্বজনদের। প্রশাসন কি তবে অদৃশ্য কোন কারণে আসামীকে দেখেও না দেখার ভান করছে নাকি ভিন্ন কারো ইশারায় কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হত্যার সাথে জড়িত থাকার জন্য সোজাসাপটার হাতে আসা যে ৪ টি হত্যা মামলার নথি পাওয়া গেছে।
১) গত বছরের ২৯ আগষ্ট দায়ের করা মামলায় রহমান বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৩৪/২০২৪ইং। তার মামলার ৩৫নং আসামি পূর্ব গোপালনগরের মৃত সেকান্দর বেপারীর ছেলে ইসমাইল শেখ।
২) ২৯ আগষ্ট ২০২৪ এর দায়ের করা অপর মামলায় ফতুল্লা থানায় বাদী মোঃ নূরুজ্জামান একটি মামলা দায়ের করেন । যার মামলা নং ৩৫/২০২৪ইং। তার মামলার ১৩৫নং আসামি ছিলেন ইসমাইল শেখ।
৩) ১ অক্টোবর ২০২৪ সালের দায়ের করা আরেক মামলায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় । যার মামলা নং ০২। তার মামলার ৪০নং আসামি ছিলেন ইসমাইল।
৪) ১ অক্টোবর ২০২৪ সালের দায়ের করা আরেক মামলায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় । যার স্বারক নং ৫২৭(৩)/১ ০১/১০/২৪। তার মামলার ৪০নং আসামি ছিলেন ইসমাইল।
এই মামলা অন্যান্যরা আত্মগোপণে চলে গেলেও ইসমাইল শেখ এখনও এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয় পূর্ব গোপালনগরের ক’জন অভিযোগ করে বলেছেন- নারায়ণগঞ্জের সব ডেভিলদের অদৃশ্য কারণে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। অথচ মামলায় যাদের নাম নেই তাদের গ্রেফতারে ব্যস্ত পুলিশ। এদের গ্রেফতার না করায় পুলিশের ওপর থেকে সাধারণ জনগনের আস্থা কমে যাচ্ছে। এসকল ডেভিলদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত পরিবারের স্বজনরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলার আহ্বায়ক নিরব রায়হান জানান, জুলাই আন্দোলন আগস্ট এর পর থেকে আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার কথা বার বার বলা হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন অসাধু লোকজনের তদবিরের কারণে সেটি আলোর মুখ দেখছে না। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এদের গ্রেফতার করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।