নিয়ম নেই, তবুও হলের দোকানে জরিমানা করছেন ডাকসু নেতারা

- আপডেট সময় : ০৮:১৫:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১৩ জন পড়েছেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জয়ী নেতারা হলে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। অনেকেই বিভিন্ন হলের দোকানে স্বউদ্যোগে বা হল প্রশাসনকে মাধ্যম রেখে জরিমানাও করছেন।
তবে ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রনেতাদের এভাবে জরিমানা করার সুযোগ নেই। এসব তাদের কার্যক্রমের আওতাধীনও নয়।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে সমাজসেবা সম্পাদক পদে দায়িত্ব নিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। তিনি হলের পাঁচটি দোকানে অভিযান চালিয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যমে নিজের অভিযানের তথ্য তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, দ্রুতই এসব দোকানগুলোর মালিকদের হল প্রশাসনের মাধ্যমে জরিমানার ব্যবস্থা করা হবে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
দোকানগুলো পুনরায় অস্বাস্থ্যকর বা পচা খাবার পরিবেশন করলে হল প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে লিখিত নিয়েছেন তিনি।
বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীরা অনেকদিন ধরেই খাবারের সঙ্গে টেস্টিং সল্ট দেওয়ার বিরোধিতা করে আসছিলেন। মাস্টার দা সূর্যসেন হলের ক্যান্টিনে অভিযান চালিয়ে খাবারে টেস্টিং সল্ট খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন হলের ভিপি আজিজুল হক।
এ সময় তিনি ক্যান্টিন মালিকের সাথে বেশ উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করেন। ১৫ দিনের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধান না হলে ক্যান্টিন ছাড়ার বিষয়ে ম্যানেজারকে প্রস্তুত থাকতে বলেন তিনি।
অভিযানের পর তা তুলে ধরে সামাজিক মাধ্যমে আজিজ লেখেন, সূর্যসেন হল ক্যান্টিন পরিদর্শনে গিয়ে আমরা বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখতে পাই। যেমন খাবার পরিবেশন এবং রান্নার সময়ে কারও মাথায় কোনো ক্যাপ ছিল না। রান্নাঘরে কয়েকশ ফিল্টার ছিল এবং রান্নায় সময় সিগারেট খাওয়ার দৃশ্যও চোখে পড়ে।
তিনি লেখেন, হাফপ্যান্ট পরে কর্মচারীরা কাজ করছেন। এ ছাড়া এমন কিছু আইটেম তালিকাভুক্ত করা ছিল, যা সেদিন রান্নাই করা হয়নি। ডালের মধ্যে কোনো ডাল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এক কেজি টেস্টিং সল্ট পাওয়ায় ভিপি আজিজুল হক ওবায়দুল হক নামে এক দোকানদারকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করেন। তিন দিনের মধ্যে অনাদায়ে তার দোকানের চুক্তিনামা বাতিলের জন্য তারা হল অফিসে সুপারিশ করবেন বলে জানান।
সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সমাজসেবা সম্পাদক জহির রায়হান টেস্টিং সল্ট ব্যবহারের কারণে এক দোকানদারকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নির্বাচিত প্রার্থীরা হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরিত্র, ব্যক্তিত্ব ও গুণাবলি তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। বিশেষ করে বিতর্ক আয়োজন, জার্নাল প্রকাশ, সামাজিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম, খেলাধুলা আয়োজন করবেন।
এ ছাড়া হলের সভাপতি তথা প্রভোস্টের অনুমতিক্রমে তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবেন।
তাদের হলে এমন কার্যক্রম পরিচালনার এখতিয়ার নেই বলে মনে করছেন হল প্রভোস্টরাও। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কাজ হল প্রশাসনকে জানানো। তারা ব্যবস্থা নেবেন।
তবে নির্বাচনের আগে থেকেই শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছেন বলে জানিয়েছেন হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমার হলে যে ছেলেটি গিয়েছে, সে আগে থেকেই ভালো খাবার নিশ্চিতে ক্যান্টিন ও দোকান মালিকদের ওপর চাপ তৈরি করে প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে। আমাদের ক্যান্টিন মালিকরা যেসব খাবার বাচ্চাদের দেয়, তা খাওয়ার অযোগ্য। কিন্তু আমরা চেষ্টা করেও ব্যবস্থা নিতে পারিনি। তারা এখানে মালিকদের চাপে রাখে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগেই আমি নিজে থেকে বলেছি, তোমরা দেখো। নির্বাচনের আগে থেকেই তারা এ বিষয়গুলো দেখছে। সেদিনের তদারকির পর তারা আমাকে জানিয়েছে।