ঢাকা ১১:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
‘চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ জাতীয় পার্টিতে নেই’

‘চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ জাতীয় পার্টিতে নেই’

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৪:৩৭:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫
  • / ২৩ জন পড়েছেন

জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে অন্য কোনও উপায়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ জাতীয় পার্টিতে নেই।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে ওই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, গঠনতন্ত্রের ২০/২(খ) ধারাতে বলা হয়েছে চেয়ারম্যানের দীর্ঘ সময়ের অনুপস্থিতে সিনিয়র কো চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান অথবা প্রেসিডিয়ামের কোনো সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করতে পারবেন। অর্থাৎ গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে পারবেন চেয়ারম্যান। গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এখন দেশে আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিয়মিত অফিসে আসেন। তাছাড়া কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করেননি তিনি। চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে অন্য কোনও উপায়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ জাতীয় পার্টিতে নেই।

তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দল থেকে অব্যাহতি পাওয়াদের কাজ করার প্রক্রিয়াটি শুরু থেকে বেআইনি এবং অবৈধ। বহিষ্কৃতদের কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির মূল ধারার কোনও নেতাকর্মী যাবে না। আমি মনে করি, আমরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে রাজনীতি করেছি, তাই শিষ্টাচারের কারণে তারা কাউন্সিল থেকে বিরত থাকবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে শামীম পাটোয়ারী বলেন, গেল ২৮ জুন জাতীয় পার্টির জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। হল বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে কাউন্সিলটি স্থগিত করা হয়। ওই সময়ে হল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাজেট সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। তাই তারা আমাদের হল ভাড়ার অগ্রীম টাকা গ্রহণ করেননি। পরে আমরা ২৭ তারিখেও হল চেয়েছিলাম। কিন্তু হল কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে হল বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিছু সিনিয়র নেতা এই বিষয়টিকে মিথ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই ঘটনায় আমাদের কিছু সিনিয়র নেতারা ২৮ জুনই কাউন্সিল করার জন্য রেষারেষি শুরু করে। পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুন জাতীয় পার্টির ৭৮টি ইউনিট কমিটির নেতারা সভা করে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের ওপরে পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। পরে ২৮ জুন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সিনিয়র নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করার।

তিনি বলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্যদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ ধারা মোতাবেক গোলাম মোহাম্মদ কাদের অনেককেই বহিষ্কার করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি দেওয়ানী মোকদ্দমা করেন বহিষ্কৃতরা। দীর্ঘ শুনানির পরে আদালত আদেশ দেন, আবেদনটি পরিবর্তিত আকারে মঞ্জুর করা হলো। আদালতের নির্দেশনাটি হলো, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও দফতর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই আদেশে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানকে বাতিল করা হয়নি, চেয়ারম্যান পদ অবৈধ ঘোষণা করা হয়নি এবং বর্তমান চেয়ারম্যানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়নি। মানে হলো, যারা প্রাথমিক সদস্য পদসহ বহিষ্কৃত হয়েছেন, তারা আজ পর্যন্ত বহিষ্কৃত আছে। যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাদের পক্ষে জাতীয় পার্টির কোনও সভায় অংশ নেওয়া অবৈধ। তারা কোনও সভা ডাকতে পারেন না এবং প্রেসিডিয়াম সভা করতে পারেন না।

তিনি আরও বলেন, বহিষ্কৃতদের কাউন্সিল ডাকার অধিকার নেই। অনেকেই জাতীয় পার্টির পদ-পদবি ব্যবহার করে সভা করছেন, কেউ মহাসচিব দাবি করছেন। প্রকৃতপক্ষে আদালতের আদেশে মহাসচিব শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি এবং আদেশেও মহাসচিবের বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। তাহলে আরেকজন কী করে মহাসচিব দাবি করেন? আদালতের রায়ের অপব্যাখ্যা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, মোহাম্মদ কাদের সব সিদ্ধান্ত সভা করে সবার মতামতের ভিত্তিতে নিয়ে থাকেন। জাতীয় পার্টি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। যারা এই পার্টিতে নেতা হয়েছেন, তারা গঠনতন্ত্র মোতাবেক পদোন্নতি পেয়েছেন। আবার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তারা বহিষ্কৃতও হয়েছেন। বহিষ্কৃতরা যে সভা করছে তা গঠনতন্ত্রবিরোধী এবং বেআইনি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে গোলাম মোহাম্মদ কাদের দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিরত আছেন।

তিনি বলেন, দেশে এখন নির্বাচনের কোনও পরিবেশ নেই। রাষ্ট্রের ওপর সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। মনে হচ্ছে, নির্বাচন করার জন্য সরকারের কোনও আন্তরিকতা ছিল না। এখন যদি সরকার সচেষ্ট হয় তাহলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে হয়তো নির্বাচন করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে বর্তমান সরকার অবিচার করছে। অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও দফায় দফায় সভা করছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নিবন্ধিত এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ জাতীয় পার্টিকে সভায় ডাকছে না। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের শপথ নিলে অবশ্যই জাতীয় পার্টিকে আলোচনায় ডাকা উচিত। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়েই ফিল্ড না থাকার একটি বড় নিদর্শন হলো, জাতীয় পার্টিকে আলোচনায় ডাকা হচ্ছে না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি মহাসচিব বলেন, রাজনীতিতে সব দলেরই ভুল-ত্রুটি আছে। ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ২৭০ জনের বেশি প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছিল। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং গোলাম মোহাম্মদ কাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেশের প্রায় সব দলই অংশ নেয়। সেই নির্বাচনটিও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। আগামী দিনে আমরা গণমানুষের প্রত্যাশা এবং তারুণ্যের স্বপ্নকে সামনে রেখে রাজনীতি করবো।

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন– জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর শিকদার লোটন, ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস, অধ্যাপক মহসিনুল ইসলাম হাবুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার মইনুর রাব্বি চৌধুরী রুম্মন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হেনা খান পন্নী, প্রফেসর ডক্টর গোলাম মোস্তফা, মো. খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান আমির উদ্দিন ডালু, মো. হেলাল উদ্দিন, এম এ সোবাহান আখতার হোসেন দেওয়ান, চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারী খন্দকার দেলোয়ার জালালী, যুগ্ম দফতর সম্পাদক সমরেশ মন্ডল মানিক প্রমুখ।

উল্লেখ্য, জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দলটির আরেক অংশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) গুলশান-২ এ অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

‘চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ জাতীয় পার্টিতে নেই’

‘চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ জাতীয় পার্টিতে নেই’

আপডেট সময় : ০৪:৩৭:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫

জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে অন্য কোনও উপায়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ জাতীয় পার্টিতে নেই।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে ওই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, গঠনতন্ত্রের ২০/২(খ) ধারাতে বলা হয়েছে চেয়ারম্যানের দীর্ঘ সময়ের অনুপস্থিতে সিনিয়র কো চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান অথবা প্রেসিডিয়ামের কোনো সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করতে পারবেন। অর্থাৎ গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে পারবেন চেয়ারম্যান। গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এখন দেশে আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিয়মিত অফিসে আসেন। তাছাড়া কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করেননি তিনি। চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে অন্য কোনও উপায়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ জাতীয় পার্টিতে নেই।

তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দল থেকে অব্যাহতি পাওয়াদের কাজ করার প্রক্রিয়াটি শুরু থেকে বেআইনি এবং অবৈধ। বহিষ্কৃতদের কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির মূল ধারার কোনও নেতাকর্মী যাবে না। আমি মনে করি, আমরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে রাজনীতি করেছি, তাই শিষ্টাচারের কারণে তারা কাউন্সিল থেকে বিরত থাকবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে শামীম পাটোয়ারী বলেন, গেল ২৮ জুন জাতীয় পার্টির জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। হল বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে কাউন্সিলটি স্থগিত করা হয়। ওই সময়ে হল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাজেট সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। তাই তারা আমাদের হল ভাড়ার অগ্রীম টাকা গ্রহণ করেননি। পরে আমরা ২৭ তারিখেও হল চেয়েছিলাম। কিন্তু হল কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে হল বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিছু সিনিয়র নেতা এই বিষয়টিকে মিথ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই ঘটনায় আমাদের কিছু সিনিয়র নেতারা ২৮ জুনই কাউন্সিল করার জন্য রেষারেষি শুরু করে। পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুন জাতীয় পার্টির ৭৮টি ইউনিট কমিটির নেতারা সভা করে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের ওপরে পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। পরে ২৮ জুন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সিনিয়র নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করার।

তিনি বলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্যদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ ধারা মোতাবেক গোলাম মোহাম্মদ কাদের অনেককেই বহিষ্কার করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি দেওয়ানী মোকদ্দমা করেন বহিষ্কৃতরা। দীর্ঘ শুনানির পরে আদালত আদেশ দেন, আবেদনটি পরিবর্তিত আকারে মঞ্জুর করা হলো। আদালতের নির্দেশনাটি হলো, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও দফতর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই আদেশে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানকে বাতিল করা হয়নি, চেয়ারম্যান পদ অবৈধ ঘোষণা করা হয়নি এবং বর্তমান চেয়ারম্যানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়নি। মানে হলো, যারা প্রাথমিক সদস্য পদসহ বহিষ্কৃত হয়েছেন, তারা আজ পর্যন্ত বহিষ্কৃত আছে। যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাদের পক্ষে জাতীয় পার্টির কোনও সভায় অংশ নেওয়া অবৈধ। তারা কোনও সভা ডাকতে পারেন না এবং প্রেসিডিয়াম সভা করতে পারেন না।

তিনি আরও বলেন, বহিষ্কৃতদের কাউন্সিল ডাকার অধিকার নেই। অনেকেই জাতীয় পার্টির পদ-পদবি ব্যবহার করে সভা করছেন, কেউ মহাসচিব দাবি করছেন। প্রকৃতপক্ষে আদালতের আদেশে মহাসচিব শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি এবং আদেশেও মহাসচিবের বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। তাহলে আরেকজন কী করে মহাসচিব দাবি করেন? আদালতের রায়ের অপব্যাখ্যা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, মোহাম্মদ কাদের সব সিদ্ধান্ত সভা করে সবার মতামতের ভিত্তিতে নিয়ে থাকেন। জাতীয় পার্টি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। যারা এই পার্টিতে নেতা হয়েছেন, তারা গঠনতন্ত্র মোতাবেক পদোন্নতি পেয়েছেন। আবার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তারা বহিষ্কৃতও হয়েছেন। বহিষ্কৃতরা যে সভা করছে তা গঠনতন্ত্রবিরোধী এবং বেআইনি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে গোলাম মোহাম্মদ কাদের দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিরত আছেন।

তিনি বলেন, দেশে এখন নির্বাচনের কোনও পরিবেশ নেই। রাষ্ট্রের ওপর সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। মনে হচ্ছে, নির্বাচন করার জন্য সরকারের কোনও আন্তরিকতা ছিল না। এখন যদি সরকার সচেষ্ট হয় তাহলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে হয়তো নির্বাচন করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে বর্তমান সরকার অবিচার করছে। অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও দফায় দফায় সভা করছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নিবন্ধিত এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ জাতীয় পার্টিকে সভায় ডাকছে না। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের শপথ নিলে অবশ্যই জাতীয় পার্টিকে আলোচনায় ডাকা উচিত। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়েই ফিল্ড না থাকার একটি বড় নিদর্শন হলো, জাতীয় পার্টিকে আলোচনায় ডাকা হচ্ছে না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি মহাসচিব বলেন, রাজনীতিতে সব দলেরই ভুল-ত্রুটি আছে। ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ২৭০ জনের বেশি প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছিল। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং গোলাম মোহাম্মদ কাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেশের প্রায় সব দলই অংশ নেয়। সেই নির্বাচনটিও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। আগামী দিনে আমরা গণমানুষের প্রত্যাশা এবং তারুণ্যের স্বপ্নকে সামনে রেখে রাজনীতি করবো।

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন– জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর শিকদার লোটন, ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস, অধ্যাপক মহসিনুল ইসলাম হাবুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার মইনুর রাব্বি চৌধুরী রুম্মন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হেনা খান পন্নী, প্রফেসর ডক্টর গোলাম মোস্তফা, মো. খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান আমির উদ্দিন ডালু, মো. হেলাল উদ্দিন, এম এ সোবাহান আখতার হোসেন দেওয়ান, চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারী খন্দকার দেলোয়ার জালালী, যুগ্ম দফতর সম্পাদক সমরেশ মন্ডল মানিক প্রমুখ।

উল্লেখ্য, জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দলটির আরেক অংশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) গুলশান-২ এ অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।