ঢাকা ০৭:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
মারা গেলে আমার লাশ ফেলে যাইস না : শহীদ পারভেজ

মারা গেলে আমার লাশ ফেলে যাইস না : শহীদ পারভেজ

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৭:১৬:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
  • / ৪০ জন পড়েছেন

আল আমীন মাহমুদ অর্ণব
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাই কাসারি এলাকার এক গলির ভাড়াবাড়িতে বসে কাঁদছেন ৬৩ বছর বয়সী বিধবা হাসি বেগম। বুকফাটা আর্তনাদে বারবার বলছেন, “আমার কিছু চাওয়ার নাই, আমার ছেলেটারে যেন মানুষ ভুলে না যায়। সে দেশের মানুষের জন্য শহীদ হইছে। সরকার যেন তার নাম শহীদ হিসেবে লিখে রাখে।” তার ছেলে পারভেজ হাওলাদার এখন আর জীবিত নেই, তবে তার নাম আজ দেশের হাজারো তরুণের বুকের ভেতরে এক বিপ্লবের আগুন হয়ে জ্বলছে।
পারভেজ হাওলাদারের জন্ম ১৯৯৯ সালের ২৫ নভেম্বর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। বাবা মজিবুর হাওলাদার ১৪ মাস আগে গত হয়েছেন, মা হাসি বেগম থাকেন বড় মেয়ে সেলিনার সাথে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট পারভেজ দারিদ্র্য ও দুর্দশার মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন। শৈশবেই পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে জীবিকার তাগিদে চায়ের দোকানে কাজ নেন। পরে ঢাকায় এসে একটি গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকারী দোকানে ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেন। সামান্য আয়ে মাকে নিয়ে দিনযাপন করতেন তিনি। ছিল একটিই স্বপ্ন, বিদেশে গিয়ে আয় করে মা’কে নিয়ে একটা নিজের বাড়িতে থাকা।
তবে তার স্বপ্ন ছিল কেবল নিজের জীবন বদলানোর নয়। পারভেজ বিশ্বাস করতেন, ন্যায়ের লড়াইয়ে অংশ নেওয়া সবার দায়িত্ব। সেই বিশ্বাস থেকেই ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেন। স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই দিনেই বিজয়ের একেবারে পূর্বমুহূর্তে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, পুলিশ ও বিজিবির সম্মিলিত হামলায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন পারভেজ। গুলি তার মুখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এই টগবগে তরুণ।
মৃত্যুর মাত্র ঘণ্টাখানেক আগে নিজের ফেসবুকে পারভেজ লিখেছিলেন, “আল্লাহ তুমি ভালো পরিকল্পনাকারী, আল্লাহ তুমি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জীবনের খেয়াল রাইখো। দেশের জন্য, দশের জন্য যেইটা ভালো হয় তাই কইরো আল্লাহ। আজকে যেন কোনো মায়ের কোল খালি না হয়। আমিন।”
আর আন্দোলনের মাঠে বন্ধু মহসিনকে বলেছিলেন, “আমি মারা গেলে আমার লাশ ফেলে যাইস না, পরিবারের কাছে লাশ পৌঁছে দিস। বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে যেন আমার দাফন না হয়।”
তাঁর এই কথাগুলো একদিকে গভীর আত্মত্যাগের প্রতীক, অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রতি আর্ত আবেদন। একজন তরুণের এমন অনুরোধ প্রমাণ করে কতটা অবহেলা ও শঙ্কার মধ্য দিয়ে মানুষ দেশের জন্য জীবন দেয়।
পারভেজের বড় বোন সেলিনা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু থেকেই পরিবারের সবার সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন পারভেজ। কিন্তু রাস্তায় ছাত্রদের কান্না আমরা সহ্য করতে পারিনি। তাই ভাই-বোন, শিশু-সবাই মিলে আন্দোলনে শরিক হয়েছি, পারভেজ তখন বলেছিল, “তোমরা যেও না। গুলি খেয়ে মরলে এক কথা, কিন্তু পঙ্গু হলে কী হবে? মেয়ের ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাবে।” তখন সেলিনা তাকে বলেন, “তুমিও যাবে না।” পারভেজ সায় দেয়। কিন্তু ৫ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে নাশতা করতে বেরোনোর কথা বলে বাড়ি ছাড়েন পারভেজ।
সেলিনা বলেন, সকাল ১০টার দিকে ভাই ফোন করে বলল, “রাস্তায় ভয়াবহ পরিস্থিতি, সবার জন্য দোয়া চাই। আমাদের বাইরে না যেতে বলল”। দুঃখভরা কণ্ঠে তিনি যোগ করেন, কিন্তু দুই ঘণ্টা পর তার বন্ধু মোহসিন আমাদের বাড়িতে এসে ভয়াবহ খবর দেয়— “পারভেজ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাকে রাজধানীর শনির আখড়ার সালমান হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে”।
সেলিনা হাসপাতালে ছুটতে গিয়ে পারভেজের এক বন্ধুর ফোন পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। ‘বাড়ি ফিরে দেখি, ভাইয়ের নিথর দেহ একটি রিকশা ভ্যানে করে আমাদের বাড়ির সামনে আনা হয়েছে,’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেলিনা সেই মর্মান্তিক মুহূর্তের কথা বললেন। ওই দিন আসরের নামাজের পর স্থানীয় গোরস্থানে পারভেজকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
পারভেজ বিদেশে যেতে চেয়েছিল। মাকে হজে পাঠাতে চেয়েছিল। বলত, “মাকে হজে নিয়া যাবো। গরিব হইলেও স্বপ্ন দেখা যায়।” কিন্তু সেই সব স্বপ্নের মৃত্যু হয় একটিমাত্র বুলেটে। মা হাসি বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ছোট ছেলেটা ছিল। আমার সবকিছু। আমি চাই, আল্লাহ যেন তার কবর জান্নাত করে দেন। সে দেশের মানুষের জন্য জীবন দিছে। আমি চাই সরকার তার নাম শহীদ হিসেবে ঘোষণা করে।”
পারভেজের মৃত্যুতে নিমাই কাসারি এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তার নামে একটি সড়কের নামকরণ করে এলাকাবাসী। বাজারে তার ছবি ও জীবনীসহ ব্যানার টানানো হয়। এলাকার মানুষ বলেন, “দরিদ্র ঘরের ছেলে হয়েও সে দেশের জন্য জীবন দিছে। আমরা গর্বিত।”
পারভেজ হাওলাদারের মৃত্যু কোনো নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি এক রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড। এক তরুণ, যিনি স্বপ্ন দেখতেন বিদেশে গিয়ে টাকা উপার্জন করে পরিবারকে ভালো রাখার, দেশের বৈদেশিক মূদ্রা সমৃদ্ধ করবে সেই তরুণ রাষ্ট্রের গুলিতে শহীদ হন। কারণ তিনি জেগে উঠেছিলেন। কারণ তিনি মুখ বুজে সহ্য করেননি।
আজ ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, পারভেজ শহীদ হয়েছেন, কিন্তু তার রক্ত বৃথা যায়নি। স্বৈরাচার পতনের মাত্র দুই ঘণ্টা আগে তার শাহাদাত বিজয়ের দরজাটি খুলে দেয়। এক ভয়াবহ শাসনের অবসান ঘটে।
পারভেজ হাওলাদার আমাদের হৃদয়ের শহীদ। তার জীবনের গল্প দরিদ্রতা, সংগ্রাম, স্বপ্ন ও আত্মত্যাগের এক মহাকাব্য। রাষ্ট্র যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের হয়, তাহলে এই তরুণের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হবে। তার মৃত্যু যেন ভুলে না যায় এই জাতি।
তার মৃত্যুর আগে বলা সেই শেষ কথাটি, “মারা গেলে আমার লাশ ফেলে যাইস না”। এটি যেন কেবল বন্ধুর প্রতি নয়, বরং গোটা জাতির প্রতি একটি অনন্ত আহ্বান হয়ে থাকে।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মারা গেলে আমার লাশ ফেলে যাইস না : শহীদ পারভেজ

মারা গেলে আমার লাশ ফেলে যাইস না : শহীদ পারভেজ

আপডেট সময় : ০৭:১৬:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

আল আমীন মাহমুদ অর্ণব
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাই কাসারি এলাকার এক গলির ভাড়াবাড়িতে বসে কাঁদছেন ৬৩ বছর বয়সী বিধবা হাসি বেগম। বুকফাটা আর্তনাদে বারবার বলছেন, “আমার কিছু চাওয়ার নাই, আমার ছেলেটারে যেন মানুষ ভুলে না যায়। সে দেশের মানুষের জন্য শহীদ হইছে। সরকার যেন তার নাম শহীদ হিসেবে লিখে রাখে।” তার ছেলে পারভেজ হাওলাদার এখন আর জীবিত নেই, তবে তার নাম আজ দেশের হাজারো তরুণের বুকের ভেতরে এক বিপ্লবের আগুন হয়ে জ্বলছে।
পারভেজ হাওলাদারের জন্ম ১৯৯৯ সালের ২৫ নভেম্বর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। বাবা মজিবুর হাওলাদার ১৪ মাস আগে গত হয়েছেন, মা হাসি বেগম থাকেন বড় মেয়ে সেলিনার সাথে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট পারভেজ দারিদ্র্য ও দুর্দশার মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন। শৈশবেই পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে জীবিকার তাগিদে চায়ের দোকানে কাজ নেন। পরে ঢাকায় এসে একটি গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকারী দোকানে ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেন। সামান্য আয়ে মাকে নিয়ে দিনযাপন করতেন তিনি। ছিল একটিই স্বপ্ন, বিদেশে গিয়ে আয় করে মা’কে নিয়ে একটা নিজের বাড়িতে থাকা।
তবে তার স্বপ্ন ছিল কেবল নিজের জীবন বদলানোর নয়। পারভেজ বিশ্বাস করতেন, ন্যায়ের লড়াইয়ে অংশ নেওয়া সবার দায়িত্ব। সেই বিশ্বাস থেকেই ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেন। স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই দিনেই বিজয়ের একেবারে পূর্বমুহূর্তে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, পুলিশ ও বিজিবির সম্মিলিত হামলায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন পারভেজ। গুলি তার মুখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এই টগবগে তরুণ।
মৃত্যুর মাত্র ঘণ্টাখানেক আগে নিজের ফেসবুকে পারভেজ লিখেছিলেন, “আল্লাহ তুমি ভালো পরিকল্পনাকারী, আল্লাহ তুমি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জীবনের খেয়াল রাইখো। দেশের জন্য, দশের জন্য যেইটা ভালো হয় তাই কইরো আল্লাহ। আজকে যেন কোনো মায়ের কোল খালি না হয়। আমিন।”
আর আন্দোলনের মাঠে বন্ধু মহসিনকে বলেছিলেন, “আমি মারা গেলে আমার লাশ ফেলে যাইস না, পরিবারের কাছে লাশ পৌঁছে দিস। বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে যেন আমার দাফন না হয়।”
তাঁর এই কথাগুলো একদিকে গভীর আত্মত্যাগের প্রতীক, অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রতি আর্ত আবেদন। একজন তরুণের এমন অনুরোধ প্রমাণ করে কতটা অবহেলা ও শঙ্কার মধ্য দিয়ে মানুষ দেশের জন্য জীবন দেয়।
পারভেজের বড় বোন সেলিনা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু থেকেই পরিবারের সবার সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন পারভেজ। কিন্তু রাস্তায় ছাত্রদের কান্না আমরা সহ্য করতে পারিনি। তাই ভাই-বোন, শিশু-সবাই মিলে আন্দোলনে শরিক হয়েছি, পারভেজ তখন বলেছিল, “তোমরা যেও না। গুলি খেয়ে মরলে এক কথা, কিন্তু পঙ্গু হলে কী হবে? মেয়ের ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাবে।” তখন সেলিনা তাকে বলেন, “তুমিও যাবে না।” পারভেজ সায় দেয়। কিন্তু ৫ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে নাশতা করতে বেরোনোর কথা বলে বাড়ি ছাড়েন পারভেজ।
সেলিনা বলেন, সকাল ১০টার দিকে ভাই ফোন করে বলল, “রাস্তায় ভয়াবহ পরিস্থিতি, সবার জন্য দোয়া চাই। আমাদের বাইরে না যেতে বলল”। দুঃখভরা কণ্ঠে তিনি যোগ করেন, কিন্তু দুই ঘণ্টা পর তার বন্ধু মোহসিন আমাদের বাড়িতে এসে ভয়াবহ খবর দেয়— “পারভেজ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাকে রাজধানীর শনির আখড়ার সালমান হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে”।
সেলিনা হাসপাতালে ছুটতে গিয়ে পারভেজের এক বন্ধুর ফোন পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। ‘বাড়ি ফিরে দেখি, ভাইয়ের নিথর দেহ একটি রিকশা ভ্যানে করে আমাদের বাড়ির সামনে আনা হয়েছে,’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেলিনা সেই মর্মান্তিক মুহূর্তের কথা বললেন। ওই দিন আসরের নামাজের পর স্থানীয় গোরস্থানে পারভেজকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
পারভেজ বিদেশে যেতে চেয়েছিল। মাকে হজে পাঠাতে চেয়েছিল। বলত, “মাকে হজে নিয়া যাবো। গরিব হইলেও স্বপ্ন দেখা যায়।” কিন্তু সেই সব স্বপ্নের মৃত্যু হয় একটিমাত্র বুলেটে। মা হাসি বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ছোট ছেলেটা ছিল। আমার সবকিছু। আমি চাই, আল্লাহ যেন তার কবর জান্নাত করে দেন। সে দেশের মানুষের জন্য জীবন দিছে। আমি চাই সরকার তার নাম শহীদ হিসেবে ঘোষণা করে।”
পারভেজের মৃত্যুতে নিমাই কাসারি এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তার নামে একটি সড়কের নামকরণ করে এলাকাবাসী। বাজারে তার ছবি ও জীবনীসহ ব্যানার টানানো হয়। এলাকার মানুষ বলেন, “দরিদ্র ঘরের ছেলে হয়েও সে দেশের জন্য জীবন দিছে। আমরা গর্বিত।”
পারভেজ হাওলাদারের মৃত্যু কোনো নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি এক রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড। এক তরুণ, যিনি স্বপ্ন দেখতেন বিদেশে গিয়ে টাকা উপার্জন করে পরিবারকে ভালো রাখার, দেশের বৈদেশিক মূদ্রা সমৃদ্ধ করবে সেই তরুণ রাষ্ট্রের গুলিতে শহীদ হন। কারণ তিনি জেগে উঠেছিলেন। কারণ তিনি মুখ বুজে সহ্য করেননি।
আজ ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, পারভেজ শহীদ হয়েছেন, কিন্তু তার রক্ত বৃথা যায়নি। স্বৈরাচার পতনের মাত্র দুই ঘণ্টা আগে তার শাহাদাত বিজয়ের দরজাটি খুলে দেয়। এক ভয়াবহ শাসনের অবসান ঘটে।
পারভেজ হাওলাদার আমাদের হৃদয়ের শহীদ। তার জীবনের গল্প দরিদ্রতা, সংগ্রাম, স্বপ্ন ও আত্মত্যাগের এক মহাকাব্য। রাষ্ট্র যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের হয়, তাহলে এই তরুণের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হবে। তার মৃত্যু যেন ভুলে না যায় এই জাতি।
তার মৃত্যুর আগে বলা সেই শেষ কথাটি, “মারা গেলে আমার লাশ ফেলে যাইস না”। এটি যেন কেবল বন্ধুর প্রতি নয়, বরং গোটা জাতির প্রতি একটি অনন্ত আহ্বান হয়ে থাকে।