ঢাকা ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
না.গঞ্জের সেই অস্ত্রধারী পদযাত্রায় হাসনাতের সঙ্গে!

না.গঞ্জের সেই অস্ত্রধারী পদযাত্রায় হাসনাতের সঙ্গে!

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেট সময় : ০৬:৪৬:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
  • / ৪০ জন পড়েছেন

সোজাসাপটা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় দলটির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর সাথে স্থানীয় আলোচিত অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত রাসেলের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিটি নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এনসিপি নেতারা ঘটনাটিকে দলের শীর্ষ নেতাদের ইমেজ নষ্ট করার একটি চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন।
শহরের কেন্দ্রস্থল ১ নম্বর রেলগেট এলাকায় গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর বাস স্ট্যান্ড দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই দিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের ভয়াবহ সংঘর্ষে প্রায় ২০ জন আহত হয়। ঘটনায় সেনাবাহিনী মাঠে নেমে আটজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও মূল অস্ত্রধারী ও কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী রাসেল ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে।
১৮ জুলাই শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় দলটির কেন্দ্রীয় নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে সেই রাসেলের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে শহর জুড়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে। জানা গেছে এনসিপির সমাবেশে লোকসমাগম ঘটানের দায়িত্বে ছিলেন এই রাসেল।
জানা যায় নিজ এলাকায় এই রাসেল পরিচিত ‘চাক্কু রাসেল’ নামে। কারণ তার সঙ্গে সবসময় থাকে একটি পিস্তল ও ছুরি। যার পরিচিতি হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল আর ইয়াবার পাইকারি ডিলার হিসেবে। জানা গেছে, সে এক সময় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতা পরিচয়দানকারী আরেক মাদক সম্রাট ডিব্বা হালিমের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল। আজ সে নিজেই একটি মাদক সিন্ডিকেটের নেতা। দেওভোগ, মাসদাইর, শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে তার নেতৃত্বে চলছে মাদক ব্যবসা, জুয়া ও চাঁদাবাজির বিস্তৃত নেটওয়ার্ক।
শহরের ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, “রাসেল ও তার লোকজন প্রতিদিন রাতে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মহড়া দেয়। কোনো প্রতিরোধ নেই। বরং পুলিশের অনেক সদস্যকে দেখা যায় রাসেলের বিল খেতে, তার সঙ্গে চা খেতে।” এমন দৃশ্য নগরবাসীকে হতবাক করলেও তাতে পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ে না। বরং রাসেল প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তার নামে থাকা একাধিক অস্ত্র ও মাদক মামলার কার্যক্রম যেন থমকে আছে।
ফতুল্লা থানা সূত্রে জানা যায়, রাসেল মাসদাইর গুদারাঘাট এলাকার বাসিন্দা। প্রায় ৬ বছর আগে ২ হাজার ৪০০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার হয় সে। দীর্ঘদিন জেল খাটার পর জামিনে বেরিয়ে সে এখন আরো ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে।
জানা গেছে আওয়ামী লীগের আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে এই রাসেলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। নিজেকে সেসময় শামীম ওসমানের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন রাসেল। পাঁচ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর ভোল পাল্টে নিজেকে বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন রাসেল।
এবিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির জেলা কমিটির যুগ্ম-সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আহমেদুর রহমান তনু বলেন, রাসেল এনসিপির কেউ না। উনি বিএনপির কর্মী। যেটা নারায়নগঞ্জের মানুষ ইতিমধ্যে জেনে গেছে সে কার লোক? হতে পারে এনসিপির এই বিশাল পদযাত্রাকে বা আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটিকে বিতর্কিত করার একটা প্রয়াস। তা ছাড়াও আপনারা দেখছেন, প্রচুর মানুষ এসে সেলফি তোলার চেষ্টা করছে। কেউ তুলেছে আবার কেউ তুলতে পারে নাই। সে এক ফাকে এসে ছবি তুলেছে। ছবিতে যা স্পষ্ট।
এনসিপি’র যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির সংগঠক নীরব রায়হান এ প্রসঙ্গে বলেন, এতো মানুষের ভিড়ে কে কখন কিভাবে এসে ছবি তুলেছে সেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলো। এখানে নানা মতের আর নানা ধরনের মানুষ এসেছে। আমরা সবাইকে চিনিনা। তাই সেভাবে শনাক্ত করাও সম্ভব হয়নি।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

না.গঞ্জের সেই অস্ত্রধারী পদযাত্রায় হাসনাতের সঙ্গে!

না.গঞ্জের সেই অস্ত্রধারী পদযাত্রায় হাসনাতের সঙ্গে!

আপডেট সময় : ০৬:৪৬:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

সোজাসাপটা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় দলটির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর সাথে স্থানীয় আলোচিত অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত রাসেলের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিটি নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এনসিপি নেতারা ঘটনাটিকে দলের শীর্ষ নেতাদের ইমেজ নষ্ট করার একটি চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন।
শহরের কেন্দ্রস্থল ১ নম্বর রেলগেট এলাকায় গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর বাস স্ট্যান্ড দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই দিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের ভয়াবহ সংঘর্ষে প্রায় ২০ জন আহত হয়। ঘটনায় সেনাবাহিনী মাঠে নেমে আটজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও মূল অস্ত্রধারী ও কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী রাসেল ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে।
১৮ জুলাই শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় দলটির কেন্দ্রীয় নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে সেই রাসেলের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে শহর জুড়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে। জানা গেছে এনসিপির সমাবেশে লোকসমাগম ঘটানের দায়িত্বে ছিলেন এই রাসেল।
জানা যায় নিজ এলাকায় এই রাসেল পরিচিত ‘চাক্কু রাসেল’ নামে। কারণ তার সঙ্গে সবসময় থাকে একটি পিস্তল ও ছুরি। যার পরিচিতি হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল আর ইয়াবার পাইকারি ডিলার হিসেবে। জানা গেছে, সে এক সময় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতা পরিচয়দানকারী আরেক মাদক সম্রাট ডিব্বা হালিমের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল। আজ সে নিজেই একটি মাদক সিন্ডিকেটের নেতা। দেওভোগ, মাসদাইর, শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে তার নেতৃত্বে চলছে মাদক ব্যবসা, জুয়া ও চাঁদাবাজির বিস্তৃত নেটওয়ার্ক।
শহরের ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, “রাসেল ও তার লোকজন প্রতিদিন রাতে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মহড়া দেয়। কোনো প্রতিরোধ নেই। বরং পুলিশের অনেক সদস্যকে দেখা যায় রাসেলের বিল খেতে, তার সঙ্গে চা খেতে।” এমন দৃশ্য নগরবাসীকে হতবাক করলেও তাতে পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ে না। বরং রাসেল প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তার নামে থাকা একাধিক অস্ত্র ও মাদক মামলার কার্যক্রম যেন থমকে আছে।
ফতুল্লা থানা সূত্রে জানা যায়, রাসেল মাসদাইর গুদারাঘাট এলাকার বাসিন্দা। প্রায় ৬ বছর আগে ২ হাজার ৪০০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার হয় সে। দীর্ঘদিন জেল খাটার পর জামিনে বেরিয়ে সে এখন আরো ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে।
জানা গেছে আওয়ামী লীগের আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে এই রাসেলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। নিজেকে সেসময় শামীম ওসমানের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন রাসেল। পাঁচ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর ভোল পাল্টে নিজেকে বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন রাসেল।
এবিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির জেলা কমিটির যুগ্ম-সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আহমেদুর রহমান তনু বলেন, রাসেল এনসিপির কেউ না। উনি বিএনপির কর্মী। যেটা নারায়নগঞ্জের মানুষ ইতিমধ্যে জেনে গেছে সে কার লোক? হতে পারে এনসিপির এই বিশাল পদযাত্রাকে বা আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটিকে বিতর্কিত করার একটা প্রয়াস। তা ছাড়াও আপনারা দেখছেন, প্রচুর মানুষ এসে সেলফি তোলার চেষ্টা করছে। কেউ তুলেছে আবার কেউ তুলতে পারে নাই। সে এক ফাকে এসে ছবি তুলেছে। ছবিতে যা স্পষ্ট।
এনসিপি’র যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির সংগঠক নীরব রায়হান এ প্রসঙ্গে বলেন, এতো মানুষের ভিড়ে কে কখন কিভাবে এসে ছবি তুলেছে সেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলো। এখানে নানা মতের আর নানা ধরনের মানুষ এসেছে। আমরা সবাইকে চিনিনা। তাই সেভাবে শনাক্ত করাও সম্ভব হয়নি।