সড়কে অবৈধ স্ট্যান্ড ও হকার সমস্যার সমাধানে চরম ব্যর্থতা
না.গঞ্জ জেলা প্রশাসনের অসহায় আত্মসমর্পণ!

- আপডেট সময় : ০৪:১৩:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
- / ৪৩ জন পড়েছেন
নারায়ণগঞ্জে গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন সিটি কর্মসূচি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ায় বেশ হাইপ তৈরি করেছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তবে স্থানীয়রা বলছেন এমন অগোছালো নারায়ণগঞ্জ কখনও ছিল না। শহরের রাস্তা দখলকারী হকার ও অবৈধ অটো-সিএনজি স্ট্যান্ড সিন্ডিকেটের কাছে এক প্রকার যেন আত্মসমর্পণ করে ফেলেছে জেলার পুলিশ প্রশাসন।
শহরের রাস্তা ও ফুটপাতে হকারদের দৌরাত্ম্য ও শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথ চাষাঢ়ায় ছয়টি অবৈধ স্ট্যান্ড নগরবাসীর জন্য বিষফোঁড়া হয়ে আছে। এই সমস্যার সমাধান না করতে পারলে বৃক্ষরোপণ ও ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করে জনগণকে প্রশান্তি দেওয়া সম্ভব হবে না।
নারায়ণগঞ্জে পাঁচ আগস্টের পর থেকে শহরের ফুটপাতে হকারদের দৌরাত্ম্য অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি। ফুটপাত থেকে এসব অবৈধ হকারদের উচ্ছেদে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জেলা প্রশাসন। বরং হকারদের ফুটপাতে সীমাবদ্ধ থাকার জন্য অনুরোধ করতে দেখা গেছে কর্তৃপক্ষকে।
ফুটপাত থেকে না সরিয়ে শুধুমাত্র সড়ক থেকে হকার উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। এর কোনো সুফল এখনও পায়নি নগরবাসী। হকারদের পুনর্বাসন ও সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত ছাড়া এসব সমস্যার কোনো সমাধান সম্ভব বলে মনে করছেন না নগর পরিকল্পনাবিদরা।
সরেজমিনে জেলা প্রশাসনের কয়েকটি অভিযানে ঘুরে দেখা যায় অভিযানে মূল সড়ক থেকে হকারদের উচ্ছেদ করছে জেলা প্রশাসন। অভিযান শুরু হলেই রাস্তার হকাররা তাদের মালপত্র নিয়ে ফুটপাতে উঠে পড়ে। অভিযান শেষ হলে পুনরায় সড়কে বসে পড়ে তারা।
আগে ফুটপাতে অস্থায়ী দোকানে বসলেও বর্তমানে মূল সড়কে ভ্যানগাড়ি নিয়ে বসে ব্যবসা করছেন হকাররা। এতে সড়কে যানচলাচল বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে দিনভর বঙ্গবন্ধু সড়ক ও আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট লেগে থাকে। এতে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
নগর পরিকল্পনাবিদরা জানান, এ সমস্যার সমাধানের জন্য হকারদের পুনর্বাসন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। হকারদের ফুটপাতে কোনো ভাবেই রাখা যাবে না। তারা ফুটপাতে থাকলে একসময় আশকারা পেয়ে সড়কেও বসতে শুরু করবে, এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া ফুটপাত দখলমুক্ত না করতে পারলে মানুষ রাস্তা দিয়ে হাঁটবে, এতেও যানজটের মত সমস্যা সৃষ্টি হবে।
স্থানীয়রা জানায় অতীতেও নারায়ণগঞ্জে হকার ছিল। তবে এত বাজে অবস্থা কখনও ছিল না। আজ তারা শহরের রাস্তা পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে। এর ফলে দিনভর যানজট লেগে থাকে। রাস্তায় বের হলেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
শহরের প্রাণকেন্দ্র ও প্রধান প্রবেশ পথ চাষাঢ়া এলাকার দৃশ্য আরও ভয়াবহ। শুধুমাত্র চাষাঢ়া গোলচত্বরের আশপাশেই রয়েছে ছয়টি অবৈধ অটো, সিএনজি ও লেগুনা স্ট্যান্ড।
শহরের মহিলা কলেজের সামনে সড়কের এক পাশে দখল করে বসানো হয়েছে অটো ও সিএনজি স্ট্যান্ড, সড়কের বিপরীত পাশে বায়তুল আমান জামে মসজিদের সামনে রয়েছে আরেকটি সিএনজি স্ট্যান্ড। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের প্রবেশপথেই রাস্তার ঢাকাগামী লেনের এক-তৃতীয়াংশ দখল করে বসানো হয়েছে অবৈধ লেগুনা ও সিএনজি স্ট্যান্ড, চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশেই বালুরমাঠের রাস্তায় রয়েছে আরেকটি অবৈধ স্ট্যান্ড, সড়কের উল্টোদিকে জিয়াহলের একটু সামনে গেলে নজরে আসে আরেকটি অবৈধ অটো ও লেগুনা স্ট্যান্ড, চাষাঢ়ায় অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের সামনে রয়েছে আরেকটি অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে এতগুলো অবৈধ স্ট্যান্ড থাকলেও এগুলো উচ্ছেদ করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। প্রায়ই এসব অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হলেও অভিযানের আধাঘন্টার মধ্যে আবারও রাস্তা দখল করে বসানো হয় এসব স্ট্যান্ডগুলো।
শহরের প্রধান প্রবেশপথে এই অবৈধ স্ট্যান্ডগুলোর কারণে দিনভর যানজট লেগে থাকে শহরে। শহরে প্রবেশ করতে ও শহর থেকে বের হওয়ার সময় যাত্রীবাহী বাস, ট্রাকসহ যানবাহনগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ফলে পুরো শহরে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় শহরের চাষাঢ়া এলাকার মহিলা কলেজের সামনে সড়কের প্রায় অর্ধেকটা দখল করে দাঁড়িয়ে আছে অটোরিকশা ও সিএনজি। সামনে পুরো সড়ক খালি থাকলেও রাস্তা দখল করে বসা এসব অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে যানবাহন চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একই দৃশ্য দেখা যায় সড়কের উল্টোদিকেও। লিংক রোড হয়ে শহরে প্রবেশ করা যানবাহনগুলোকেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় জিয়াহলের সামনে থাকা অবৈধ লেগুনা স্ট্যান্ডের কারণে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যানজট নিরসনে ও সড়ক দখলমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হলেও তা এখনও পর্যন্ত কোনো কাজে আসেনি। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ফুটপাত ও সড়ক দখল করে এসব হকার ও অবৈধ স্ট্যান্ড বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা জানান, নারায়ণগঞ্জ শহর বঙ্গবন্ধু সড়কের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই সড়কটি শহরের লাইফলাইন। এই সড়কটিকে অবশ্যই দখলমুক্ত রাখতে হবে। এখানে অবৈধ স্ট্যান্ড বসিয়ে বা হকারদের বসিয়ে সড়ক দখল করে দোকান বসানো মানেই শহরের যানজট ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটবেই। এসব অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে শক্ত হাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি সড়ক দখল করে বসা হকারদের প্রয়োজনে পুনর্বাসন করতে হবে। কিন্তু কোনো ভাবেই তাদের সড়কে বসতে দেওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, আমরা ইতিমধ্যে সড়ক দখলমুক্ত করতে ও এসব অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছি। আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবো। প্রয়োজন হলে আমরা আরও অভিযান পরিচালনা করবো।