গাজার তিন-চতুর্থাংশ ভবন ধ্বংস, জমেছে ৬১ মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষ
- আপডেট সময় : ০৮:৪১:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
- / ৮ জন পড়েছেন
ইসরাইলের দুই বছরের আগ্রাসনে গাজা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত। জাতিসংঘের তথ্য বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পুরো উপত্যকায় জমে থাকা ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ ৬১ মিলিয়ন টনেরও বেশি—যা নিউইয়র্কের বিখ্যাত এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ওজনের প্রায় ১৭০ গুণ।
এ নিয়ে শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য টাইমস অব ইসরাইল।
জাতিসংঘের স্যাটেলাইট বিশ্লেষণ সংস্থা ইউনোস্যাটের তথ্য অনুসারে, গাজার তিন-চতুর্থাংশ ভবনই ধ্বংস হয়ে গেছে।
ভবন ধ্বংসের ভয়াবহতা
২০২৫ সালের ৮ জুলাই পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় প্রায় ১ লাখ ৯৩ হাজার ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যা যুদ্ধ শুরুর আগে (২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর) বিদ্যমান মোট স্থাপনার প্রায় ৭৮ শতাংশ।
জাতিসংঘের ইউনোস্যাটের স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী, গাজা সিটির সাম্প্রতিক মূল্যায়নে (২২-২৩ সেপ্টেম্বরের চিত্র বিশ্লেষণ) দেখা গেছে, শহরের প্রায় ৮৩ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই বিপুল ধ্বংসের ফলে গাজার প্রতি বর্গমিটারে গড়ে ১৬৯ কেজিরও বেশি ধ্বংসাবশেষ জমেছে। পুরো উপত্যকার ৬১.৫ মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষ নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ওজনের প্রায় ১৭০ গুণ সমান।
যুদ্ধের প্রথম পাঁচ মাসেই অধিকাংশ ধ্বংস
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) জানিয়েছে, যুদ্ধের প্রথম পাঁচ মাসেই গাজার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়। সংঘাত যতই দীর্ঘ হয়েছে, ভবন ধ্বংসের গতি ততই বেড়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে আরও আট মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়েছে, যার বড় অংশই রাফাহ ও খান ইউনুসের মধ্যবর্তী দক্ষিণাঞ্চলে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে জাতিসংঘের সতর্কতা
ইউএনইপির আগস্ট মাসে প্রকাশিত প্রাথমিক বিশ্লেষণে সতর্ক করা হয়েছে, এসব ধ্বংসাবশেষ স্থানীয় জনগণের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। সংস্থাটি ধারণা করছে, অন্তত ৪.৯ মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষ পুরোনো ভবন থেকে আসা অ্যাসবেস্টস দ্বারা দূষিত হতে পারে—বিশেষ করে উত্তর গাজার জাবালিয়া, মধ্যাঞ্চলের নুসেইরাত ও আল-মাঘাজি, এবং দক্ষিণের রাফাহ ও খান ইউনুসের শরণার্থী শিবিরের আশপাশে।
তাছাড়া, অন্তত ২.৯ মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষে শিল্প কারখানার বিপজ্জনক রাসায়নিক বর্জ্য মিশে থাকতে পারে বলেও ইউএনইপি জানিয়েছে। এসব বিষাক্ত উপাদান বাতাস ও পানিতে ছড়িয়ে পড়লে মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে সংস্থা সতর্ক করেছে।
মানবিক বিপর্যয়ের গভীরতা
দুই বছরের যুদ্ধে গাজার ভৌগোলিক চিত্র একেবারে বদলে গেছে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ভবন ধ্বংসের পাশাপাশি অবকাঠামো, সড়ক, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা বলছে, এই বিপুল ধ্বংসস্তূপ অপসারণ ও পুনর্গঠনে বহু বছর লেগে যাবে, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মানবিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।

























