ঈদের পর বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযান দাবি
ঈদের পর বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযান দাবি

- আপডেট সময় : ০৬:০৯:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫
- / ১২৪ জন পড়েছেন
৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা লুটপাট, দখল-চাঁদাবাজিসহ ব্যাপক অপকর্মের অভিযোগ উঠছে। তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতারা বলছে, বিএনপি নয় আওয়ামীলীগের দোসর ও প্রেতাত্মারা এ ধরনের অপকর্ম করছে এবং বিএনপির ঘাড়ে এসব অভিযোগ চাপাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জেও দখল-চাঁদাবাজির ঘটনায় বিগত শাসনামলের অপরাধীদের হাত রয়েছে বলে মনে করে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
তবে, নিজ নিজ পাল্লা ভারী করার লক্ষ্যে এসকল অপরাধীদের সুযোগ দিচ্ছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কতিপয় নেতাকর্মীরাই, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। তারা বলছে, বিগত সরকারের আমলে যারা সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজী, ভুমিদস্যুতাসহ নানা অপকর্ম করেছেন, তারাই বর্তমানে খোলস পাল্টে বিএনপি নেতা বনে গেছেন, অনেকে আবার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের দু/একজননের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে পুনরায় অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে। এই নব্য বিএনপি নেতাকর্মী বা হাইব্রীড নেতাকর্মীদের নানা অপকর্মের কারণে দলটির প্রকৃত ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা বিপাকে পড়ছেন বলে জানা গেছে। এদের কারণে দল হিসেবে নানাভাবে বিএনপির দুর্নাম হচ্ছে। আর তাই ঈদের পর বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযানের দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টি থেকে আসা হাইব্রীড নেতাকর্মীরা বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সারা জেলা। হাইব্রীড নেতাকর্মীরা বিএনপির কতিপয় নেতার সমর্থনে বেশ দাপটের সাথে নানা অপকর্ম করে বিএনপির সুনাম নষ্ট করছে। একইসাথে বিএনপির নাম বিক্রি করে নানা কায়দায় নিজেদের আখের গোছানোর চেষ্টা করার অভিযোগও উঠেছে হাইব্রীড নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের মতে, একটি দেশে যখন কোনো গণঅভ্যূত্থানের ঘটনা ঘটে, তখন সে দেশের বিগত সরকারের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কায়দায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে অনুপ্রবেশ করতে চায়, এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে, নিজ নিজ দলের সুনাম রক্ষার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে এ ধরনের অনুপ্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা এবং যারা এই অনুপ্রবেশকারীদের সুযোগ দিবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত বলে মনে করেন তারা। তা নাহলে অনুপ্রবেশকারীরা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠতে পারে বলেও জানান তারা।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছে, বিএনপি এখনো সরকার গঠন না করলেও রাজনৈতিকভাবে দলটি বর্তমানে বেশ চাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে। তবে, এরই মাঝে বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে দলটির একাধিক গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জড়িত বলে মনে করেন তারা। এক্ষেত্রে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কতিপয় নেতাকর্মীরা তাদেরকে শেল্টার দিচ্ছে বলেও দাবি তাদের। তাদের ছত্রছায়ায় থেকে পাড়া-মহল্লাগুলোতে নব্য বিএনপি তথা হাইব্রীড নেতাকর্মীদের জন্ম হচ্ছে। এই সকল হাইব্রীড নেতাকর্মীরাই বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে ত্যাগী নেতাকর্মী ও বিএনপির সুনাম নষ্ট করছে বলে জানান তারা।
নেতাকর্মীরা আরও বলছে, এই অনুপ্রবেশকারীদের দাপটে দিনে দিনে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে ত্যাগী নেতাকর্মীরা। ত্যাগী নেতাকর্মীদের মতে, অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে পাতি নেতাদের পাশাপাশি যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবকদল সহ অঙ্গসংগঠনের কযেকজন বড় বড় নেতাদের সখ্যতা বেশি। শুধু তাই নয়, হাইব্রীডদের নানা অপকৌশলের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে ত্যাগী নেতাকর্মীরা। অবস্থা এমন যে, অনুপ্রবেশকারীরাই এখন শীর্ষ নেতাদের শুভাকাক্সক্ষী। এরা প্রশ্রয় পেয়ে দলের নাম ভাঙিয়ে দখলবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, বালু পাচার, টেন্ডার বাণিজ্যসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা করছে না। এদের অপকর্মে সাধারণ মানুষের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন কমছে। দলের এই হালে হতাশ এখন প্রকৃত নেতাকর্মীরা।
বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা মনে করেন, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে দলের দুর্দিনের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের সমন্বয় করলে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অপকর্ম বন্ধ হবে। একইসঙ্গে দলের পদ-পদবীতে থেকে যারা অনুপ্রবেশের সুযোগ দিচ্ছে এবং আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের শেল্টার দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তার। পাশাপাশি ত্যাগী, নির্যাতিত, তরুণ, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব বিবেচনায় নতুন নতুন কমিটি গঠনের দাবি করেছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা।
দলের তৃণমূল পর্যায়ের অসংখ্য নির্যাতিত নেতাকর্মীরা জানান, ২০০৮ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আওয়ামীলীগের ক্যাডারদের হাতে তারা অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধানের শীষের সমর্থক হওয়ায় সে সময় নির্যাতনের শিকার হলেও তাদের তেমন কোন দুঃখ ছিলনা। কিন্তু দেশের পট পরিবর্তনের পর উড়ে এসে জুড়ে বসা হাইব্রীড নেতাকর্মীদের কারণেত্যাগী নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ছে।
এদিকে, দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা জানান, বিগত সময়ে যারা নিস্ক্রীয় ছিলো এবং আওয়ামীলীগের সাথে আঁতাত করে চলেছে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হাইকমান্ডকে আরও আগেই আহ্বান জানানো হয়েছে। বিগত সময়ে দলের বিভিন্ন গোপন তথ্য পাচার, ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নানা অপকর্মের অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অনিয়মের বিষয়ে জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত, ছাত্রদল ও কৃষকদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হলেও অনেকে এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। দলের নীতি নির্ধারকদের কাছে ইতিমধ্যেই ব্যাপক তথ্যপ্রমাণ পৌছে দেয়া হয়েছে, তাই আশা করা হচ্ছে পবিত্র ঈদ উল ফিতরের পরই এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে হাইকমান্ড। তারা বলছে, অতীতে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হলে দলের ক্ষতি করার সাহস পেতো না।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, বিএনপি অতীতের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ। বিগত সময়ে সরকার বিএনপিকে ভাঙতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়েছে। স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তারা এখনও ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। অসংখ্য মামলা, শত নির্যাতন সত্ত্বেও একজন নেতাও বিএনপি বিগত দিনে ছেড়ে যায়নি। এ নেতা আরও বলেন, তবে সুবিধাবাদী একটি গ্রুপ সবসময় সক্রিয় ছিলো, এখনো সক্রিয় রয়েছে। দলের চেয়ে তারা ব্যক্তিস্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। আওয়ামীলীগের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে দিব্যি ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়েছে বিগত ১৬ বছর। এদের চিহ্নিত করলেই হবে না, দল থেকে অপসারণও করতে হবে বলে দাবি তৃণমূলের। ভবিষ্যতে এসব সুবিধাবাদী যাতে দলে কোনো জায়গায় নেতৃত্বে আসতে না পারে, সেই উদ্যোগও নিতে হবে।