ঢাকা ০৬:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

মাসদাইরে বৃষ্টি মানেই হাঁটু পানি, জলাবদ্ধতায় নাকাল হাজারো মানুষ

সোজাসাপটা রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৪:২৭:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
  • / ২৬ জন পড়েছেন

নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর এলাকা এখন জলাবদ্ধতার আরেক নাম। কয়েক মিনিটের বৃষ্টিই পর্যাপ্ত! রাস্তা, গলি ও বাড়িঘর ঢেকে যায় হাঁটুসমান পানিতে। ঘর থেকে বের হতে কষ্ট, স্কুল-কলেজে যাওয়া কঠিন, ব্যবসা-বাণিজ্য স্তব্ধ—এই চিত্র যেন এখন মাসদাইরের নিত্যদিনের বাস্তবতা। অথচ এলাকাটি শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ সংকটের পেছনে রয়েছে খাল দখল, অকেজো ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বিকল পাম্পিং সিস্টেম।
মাসদাইরের চৌধুরীবাড়ি মোড়, পশ্চিমপাড়া, কবরস্থান রোড, মাদ্রাসা গলি, তালতলা ও রেললাইনসংলগ্ন বহু এলাকায় একই অবস্থা—বৃষ্টি হলেই জমে জল। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমরসমান। বৃষ্টির দিনই নয়, অনেক সময় শুকনো দিনেও পানি সরে না ২৪ ঘণ্টার আগে। এর ফলে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি, দুর্গন্ধ, মশার উৎপাত এবং শিশুবৃদ্ধদের চলাচলে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়।
এই জলাবদ্ধতার মূল কারণ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এক সময়কার পাঁচটি খাল এখন প্রায় অস্তিত্বহীন। একের পর এক দখল হয়ে খালগুলোতে গড়ে উঠেছে মার্কেট, গ্যারেজ, ঘরবাড়ি। পানি যাওয়ার পথ নেই। উপরন্তু, পুরনো ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো আছে, তার বেশিরভাগেই ঢাল নেই, সংযোগ নেই, নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। আর ডিএনডি বাঁধ এলাকার পানি অপসারণের জন্য যে পাম্পিং ব্যবস্থা থাকা উচিত, তা বছরের পর বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে।
স্থানীয় এক প্রবীণ বাসিন্দা সিরাজুল হক জানান, “আমরা ছোটবেলায় এই খালে মাছ ধরেছি। এখন খালের চিহ্নই নেই। এভাবে পানি নামবে কোথা দিয়ে?”
সাম্প্রতিক সময়ে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। ১ জুন মাসদাইর বাজারে মানববন্ধনও করেন তারা। দাবি- দখলমুক্ত করে খাল পুনঃখনন, নতুন ড্রেন নির্মাণ, পাম্প সচলকরণ এবং সিটি করপোরেশনের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এক প্রকৌশলী জানান, “আমরা কিছু ড্রেনের কাজ শুরু করেছি, প্রায় ৩ কিমি সম্পন্ন হয়েছে। খাল ও পাম্প সংস্কারের জন্য প্রকল্প প্রস্তুত আছে, বরাদ্দ এলে কাজ শুরু হবে।”
তবে স্থানীয় নাগরিকরা বলছেন, শুধু আশ্বাস নয়—এবার চাই বাস্তব পদক্ষেপ। দোকানদার রফিক মিয়া বলেন, “একটা বৃষ্টি হলে তিন দিন ব্যবসা বন্ধ থাকে। এটা শহর নাকি সাঁতারের জায়গা?”
নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরি স্কুলের শিক্ষার্থী সাদিয়া জানায়, “জুতা হাতে নিয়ে স্কুলে যেতে হয়। কাদা-পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে রোজ।”
পরিস্থিতির অবনতি রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মাসদাইর হয়ে উঠবে এক অঘোষিত জলাশয়। নগর উন্নয়নের নামধারী পরিকল্পনা বাস্তবে ব্যর্থ হবে যদি নাগরিকদের মৌলিক চলাচল ও বাসযোগ্যতা নিশ্চিত না করা যায়।
এখন সময়, দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, খাল সংস্কার, আধুনিক ড্রেন নির্মাণ এবং দীর্ঘমেয়াদি পাম্পিং সমাধান নিশ্চিত করার—না হলে মাসদাইরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ দিনকে দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। এদিকে নাগরিক সমাজ বলছে, মাসদাইরের জলাবদ্ধতা কেবল বর্ষাকালের সমস্যা নয়, এটি বছরের পর বছর ধরে টিকে থাকা এক অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি। পানি আর কাদায় আটকে থাকা এই জনপদের মানুষের এখন একটাই চাওয়া—কথা নয়, এবার চাই কাজ।

ট্যাগ :

সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মাসদাইরে বৃষ্টি মানেই হাঁটু পানি, জলাবদ্ধতায় নাকাল হাজারো মানুষ

আপডেট সময় : ০৪:২৭:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর এলাকা এখন জলাবদ্ধতার আরেক নাম। কয়েক মিনিটের বৃষ্টিই পর্যাপ্ত! রাস্তা, গলি ও বাড়িঘর ঢেকে যায় হাঁটুসমান পানিতে। ঘর থেকে বের হতে কষ্ট, স্কুল-কলেজে যাওয়া কঠিন, ব্যবসা-বাণিজ্য স্তব্ধ—এই চিত্র যেন এখন মাসদাইরের নিত্যদিনের বাস্তবতা। অথচ এলাকাটি শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ সংকটের পেছনে রয়েছে খাল দখল, অকেজো ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বিকল পাম্পিং সিস্টেম।
মাসদাইরের চৌধুরীবাড়ি মোড়, পশ্চিমপাড়া, কবরস্থান রোড, মাদ্রাসা গলি, তালতলা ও রেললাইনসংলগ্ন বহু এলাকায় একই অবস্থা—বৃষ্টি হলেই জমে জল। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমরসমান। বৃষ্টির দিনই নয়, অনেক সময় শুকনো দিনেও পানি সরে না ২৪ ঘণ্টার আগে। এর ফলে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি, দুর্গন্ধ, মশার উৎপাত এবং শিশুবৃদ্ধদের চলাচলে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়।
এই জলাবদ্ধতার মূল কারণ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এক সময়কার পাঁচটি খাল এখন প্রায় অস্তিত্বহীন। একের পর এক দখল হয়ে খালগুলোতে গড়ে উঠেছে মার্কেট, গ্যারেজ, ঘরবাড়ি। পানি যাওয়ার পথ নেই। উপরন্তু, পুরনো ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো আছে, তার বেশিরভাগেই ঢাল নেই, সংযোগ নেই, নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। আর ডিএনডি বাঁধ এলাকার পানি অপসারণের জন্য যে পাম্পিং ব্যবস্থা থাকা উচিত, তা বছরের পর বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে।
স্থানীয় এক প্রবীণ বাসিন্দা সিরাজুল হক জানান, “আমরা ছোটবেলায় এই খালে মাছ ধরেছি। এখন খালের চিহ্নই নেই। এভাবে পানি নামবে কোথা দিয়ে?”
সাম্প্রতিক সময়ে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। ১ জুন মাসদাইর বাজারে মানববন্ধনও করেন তারা। দাবি- দখলমুক্ত করে খাল পুনঃখনন, নতুন ড্রেন নির্মাণ, পাম্প সচলকরণ এবং সিটি করপোরেশনের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এক প্রকৌশলী জানান, “আমরা কিছু ড্রেনের কাজ শুরু করেছি, প্রায় ৩ কিমি সম্পন্ন হয়েছে। খাল ও পাম্প সংস্কারের জন্য প্রকল্প প্রস্তুত আছে, বরাদ্দ এলে কাজ শুরু হবে।”
তবে স্থানীয় নাগরিকরা বলছেন, শুধু আশ্বাস নয়—এবার চাই বাস্তব পদক্ষেপ। দোকানদার রফিক মিয়া বলেন, “একটা বৃষ্টি হলে তিন দিন ব্যবসা বন্ধ থাকে। এটা শহর নাকি সাঁতারের জায়গা?”
নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরি স্কুলের শিক্ষার্থী সাদিয়া জানায়, “জুতা হাতে নিয়ে স্কুলে যেতে হয়। কাদা-পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে রোজ।”
পরিস্থিতির অবনতি রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মাসদাইর হয়ে উঠবে এক অঘোষিত জলাশয়। নগর উন্নয়নের নামধারী পরিকল্পনা বাস্তবে ব্যর্থ হবে যদি নাগরিকদের মৌলিক চলাচল ও বাসযোগ্যতা নিশ্চিত না করা যায়।
এখন সময়, দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, খাল সংস্কার, আধুনিক ড্রেন নির্মাণ এবং দীর্ঘমেয়াদি পাম্পিং সমাধান নিশ্চিত করার—না হলে মাসদাইরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ দিনকে দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। এদিকে নাগরিক সমাজ বলছে, মাসদাইরের জলাবদ্ধতা কেবল বর্ষাকালের সমস্যা নয়, এটি বছরের পর বছর ধরে টিকে থাকা এক অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি। পানি আর কাদায় আটকে থাকা এই জনপদের মানুষের এখন একটাই চাওয়া—কথা নয়, এবার চাই কাজ।