অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে সাজা হতে পারে ফজলুর রহমানের
- আপডেট সময় : ০৮:০৯:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
- / ০ জন পড়েছেন
‘আমি এই আদালত মানি না। এই আদালতের রায় মানি না, আমি এ কথা প্রতিদিনই বলি। এখানে শেখ হাসিনার বিচার হতে পারে না।’ পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। একইসঙ্গে প্রসিকিউশনকেও কটূক্তি করেন তিনি।
সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশনের একটি টকশোতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবীর এ ধরনের ইঙ্গিতকে আদালত অবমাননা হিসাবে দেখছেন প্রসিকিউশন। আর এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাজার মুখোমুখি হতে পারেন এই নেতা।
ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার নিয়ে চ্যালেঞ্জ, আদালতের নিরপেক্ষতায় হস্তক্ষেপকারী ‘অভ্যন্তরীণ বন্দোবস্ত’ রয়েছে বলে দাবি ও প্রসিকিউশন প্রসঙ্গে অবমাননাকর মন্তব্য; এই তিনটি কারণে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে প্রসিকিউশন।
বুধবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টার পর ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর একক বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।
২৩ নভেম্বর বেসরকারি টেলিভিশনের একটি চ্যানেলে অতিথি হয়ে যান ফজলুর রহমান। টকশোর একপর্যায়ে শেখ হাসিনার রায় প্রসঙ্গ আসতেই এসব কথা বলেন তিনি। ৪৯ মিনিটের টকশোটি পেনড্রাইভের মাধ্যমে এরই মধ্যে ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছে প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনালেও ফজলুর রহমানের বক্তব্যের কিছু অংশ বাজিয়ে শোনানো হয়।
ভিডিওতে ফজলুর রহমানকে বলতে শোনা যায়, আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি এই কোর্ট মানি না। তখন উপস্থাপক বলেন, তাহলে কি আমরা শুনতে পাইনি। মিডিয়া কি জানতে পারেনি। ফজলুর রহমান বলেন, সবাই জানে। জানবে না কেন। আমার ইউটিউব শোনেন। আমি এই কোর্ট মানি না। এই কোর্টের বিচার মানি না। ইউটিউবে বলেছি, টকশোতে বলেছি। যদি না বলে থাকি এখন বললে আমার ভুল আমার মাফ চাইবো প্রতিদিন বলছি এই বিচার আমি মানি না। এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার হতে পারে না। এই কোর্টের গঠনপ্রক্রিয়া বলে এই কোর্টে বিচার হতে পারে না। প্রসিকিউশনের সবাই শিবির সমর্থিত বলেও টকশোতে দাবি করেন জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী।
ট্রাইব্যুনাল আইন না বুঝেই ফজলুর রহমান এসব মন্তব্য করেছেন বলে ট্রাইব্যুনালকে জানান প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। ফজলুর রহমানের আর কোনো পরিচয় আছে কিনা জানতে চান ট্রাইব্যুনাল। পরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি প্রার্থী বলে জানানো হয়। জুলাই বিপ্লব নিয়ে মন্তব্য করায় বিএনপি আগেও তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছিল বলে জানান প্রসিকিউশন।
আদালতকে তামিম বলেন, ফজলুর রহমান দাবি করেছেন যে তিনি ট্রাইব্যুনালকে মানেন না। কারণ এটি ১৯৭১ সালের রাজাকারদের বিচার করার জন্য গঠিত হয়েছিল।
এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইন প্রণীত হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। এ আইনের অধীনে ১৯৭৩ সালের আগে ও পরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা যায়। আর প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সবশেষ ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে এসব অভিযোগ গুরুতর মন্তব্য করেন ট্রাইব্যুনাল। তাই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন এ বিষয়ে শুনানির জন্য রোববার (৩০ নভেম্বর) দিন ধার্য করা হয়।
আদালত অবমাননার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ এক বছরের সাজা হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।
তিনি বলেন, টকশোতে অংশ নিয়ে ফজলুর রহমান ট্রাইব্যুনালের বিচার মানেন না বলে মন্তব্য করেছেন। এখানে শেখ হাসিনার বিচার হতে পারে না। শুধুমাত্র শেখ হাসিনার বিচারপ্রক্রিয়াই নয়, সব বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এছাড়া প্রসিকিউশন বা থার্ড পার্টি (তৃতীয় পক্ষ) কারো সঙ্গে ইন্টারনাল অ্যারেঞ্জমেন্টে (অভ্যন্তরীণ সমন্বয়) এই জাজমেন্ট বা প্রসিডিং চলছে বলে বুঝাতে চেয়েছেন। যা বিচারক বা বিচারালয় ও বিচারপ্রার্থীদের প্রতি চরম অবজ্ঞাসূচক বক্তব্য। বিশেষভাবে বিচারকদের প্রতি অবমাননা করা। একইসঙ্গে তিনি প্রসিকিউশন টিমকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।
মিজানুল ইসলাম বলেন, আইন অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়া বা বিচারককে ক্ষতিগ্রস্ত করে; এ ধরনের কোনো বক্তব্য দেওয়ার অধিকার কারও নেই। এক্ষেত্রে কেউ এমন বক্তব্য দিলে কোনো আবেদনের ভিত্তিতে অথবা স্বপ্রণোদিত হয়ে অভিযুক্তকে একটা নোটিশ দিতে পারেন ট্রাইব্যুনাল। অর্থাৎ কারণ দর্শানোর সুযোগ দিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। এ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
প্রসিকিউটর তামিম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের ধারা ১১(৪)-এ বলা আছে যে, এ ধরনের অপরাধ যদি কোনো ব্যক্তি করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে একটি প্রক্রিয়া ইস্যু করে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করতে পারেন ট্রাইব্যুনাল। রুলসের ৪৫-এ বলে দেওয়া আছে যে এসব কিছু প্রক্রিয়া শুরুর আগেই অভিযুক্তকে নোটিশ করে ডেকে এনে বক্তব্য শুনতে হবে। প্রক্রিয়া শুরু হলে অবশ্যই ট্রাইব্যুনালে এসে বক্তব্য দেবেন তিনি। অর্থাৎ এই আইনে তার বক্তব্য শুনতেই হবে।




















